দুঃস্বপ্নের পদচিহ্ন
-নাজমুল চৌধুরী
আজ স্রেফ আপকা চিট্টি আয়া ছোটা সাহাব। পেপসি পিলাও। হাসতে হাসতে ইন্ডিয়ান অফিসবয় ইকবাল চিঠিখানা এগিয়ে দেয় সাদেকের হাতে। একরকম ছোঁ মেরে বিনা বাক্যব্যয়ে ইকাবালের হাত থেকে চিঠিখানা কেড়ে নেয় সাদেক। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চিঠি। গত একমাসে অনিদ্রায় চোখের কোণে কালি পড়েছে। কপালে দেখা দিয়েছে বলিরেখা। একরাশ ক্লান্তির পাহাড় যেন তার বয়সকে বাড়িয়ে দিয়েছে দ্বিগুণ।
এক প্রবল ঝড় এসে জীবনকে যে এভাবে তছনছ করে দেবে তা ভাবতেই পারনি সাদেক। গত একমাস যাবত বন্ধুবান্ধব থেকে সে বিচ্ছিন্ন। বাসায় পরিচিত ফোন এলে স্বর পাল্টিয়ে সংক্ষেপে বলে, রং নম্বর। একই ব্যক্তির ফোন আসে বারবার। বাজতে বাজতে একসময় থেমে যায়।
আবেগ কম্পিত হস্তে চিঠির ভাঁজ খুলতে যাবে এমন সময় ফোন বেজে উঠতেই রিসিভার উঠায় সাদেক। ওপাশ হতে কচিকন্ঠে শব্দ ভেসে আসে, বাপ্পী আমি বাঁধন। কখন আসছ ? আমার যে জ্বরে মাথা ফেটে যাচ্ছে। মামণিকে তায়েফ হতে কখন নিয়ে আসবে বাপ্পী? মামণি আসছেনা কেন?
তোমার কি খুব খারাপ লাগছে মা? এইতো অফিস শেষ করেই চলে আসব। একটু সবুর কর মামণি? আর শুন, যদি খুব বেশি মাথা ধরে তাহলে পাশের টেবিলে রাখা প্যানাডল ট্যাবলেট একটি খেয়ে নেবে, কেমন? লক্ষী মা আমার। আসার সময় তোমার জন্য একগাদা পুতুল নিয়ে আসব। যে পুতুলটি দুধ না খাওয়ালে কাঁদে সে পুতুলটিসহ,ঠিক আছে ? রাখি এখন, লাইন কেটে দেয় সাদেক।
মেয়েটির ভীষণ জ্বর আজ দশদিনের উপরে। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ এনেছিল। পাঁচদিন পর পুনরায় যাওয়ার কথা। কিন্তু যাওয়া আর হয়নি। আজই ডাক্তারের কাছে বাঁধনকে নিয়ে যাবে মনস্থ করে পুনরায় চিঠিখানা চোখের সামনে মেলে ধরে সাদেক।
“সাদেক, তোমার আমার মাঝে যে দেয়াল সৃষ্টি হল তারজন্য দায়ি হয়তো তুমি অথবা আমি কিংবা আমাদের ভাগ্য। সেদিন তুমি অফিসে যাওয়ার পর তোমার বন্ধু বলল, এক্ষুণি আমাকে তায়েফ যেতে হবে। মাত্র একদিনের ছুটি। চাকরি রক্ষা করতে হবেতো? আমি বললাম, আমাকে কি করতে হবে।
মেয়েদের ঠিকানা তার স্বামীর ঘরে। সুতরাং কি করতে হবে না হবে তা তোমাকেই ঠিক করতে হবে রীতা। তাছাড়া এ মুহূর্তে আমি অন্য কিছু ভাবতে পারছি না। তায়েফে গিয়ে ভেবেচিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত সাদেককে জানাব।
ওর মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। সত্যিকার অর্থে সেইতো আমার বর্তমান স্বামী। তার আদেশ শিরোধার্য। বাঁধনকে অনেক বুঝিয়ে রেখে এসেছিলাম ঘরে। জানিনা সে তোমাকে ফোন করেছিল কি না?
তোমার বন্ধুটিকে ক্রমশ জানতে পেরেছি
অনেক। সে এক ভিন্ন পুরুষ, ভিন্ন ধাঁচের। সহজ, সরল কিন্তু শক্ত। এখানে আসার পর সে
আমাকে একদিন বলল, দ্যাখো রীতা, তোমাকে একটা কথা বলা প্রয়োজন। মানুষ ভুলকে যখন
শুধরে নেয়ার চেষ্টা করে তাতে ভুলের পরিমাণই বাড়ে। জীবন হয় আরও দুর্বিসহ। সাদেক যখন ফোনে তার মনের বাসনা ব্যক্ত
করল তখন বন্ধু হিসেবে এগিয়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে, আমার মত সংসারবিমুখ ছন্নছাড়া
এক মানুষ যদি তোমাদের উপকারে আসে তাহলে
অসুবিধাটা কোথায়?ধর্মের বিধান মতে ইদ্দত পালন শেষে তিনচার মাস পর আনুষ্ঠানিকভাবে
সাদেক তোমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে পুনরায় গ্রহণ করবে। এটা ভেবে ওর এই দুঃসময়ে
আমি পিছিয়ে থাকতে পারিনি।
সাদেক ও আমি পরস্পরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
একসাথে পড়েছি যদিও ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে আমাকে ইতি টানতে হয়েছিল পারিবারিক প্রয়োজনে।
ভার্সিটির শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সাদেক এগিয়ে গেলেও আমাদের বন্ধুত্বে কিন্তু ভাটা
পড়েনি। সে যাক, তোমার সাথে বিয়ে হল গোপনে দু’জন
সাক্ষীকে সাক্ষ্য রেখে। সাদেকের পাশ দিয়ে বধূবেশে নির্ধারিত ঘরে ঢুকেই তুমি শুয়ে
রইলে অসাড় হয়ে। অনেক রাত অবধি জেগে রইলাম আমি। ঘুম আসছিল না চোখে।
একসময় তোমার পাশে শুয়ে পড়লাম।
ঘুমের ঘোরে তোমারই ঋজুস্পর্শে আমার হৃদয়ের সমস্ত শাখা প্রশাখা পল্লবিত হল। আমি বিভোর
হয়ে গেলাম পৈচাশিক এক উম্মাদনায়। জীবনে এই প্রথমবারের মত শতদল মেলে হৃদয়ে
প্রেমের মুকুল প্রস্ফুটিত হল। আমার সারাজীবনের কুমারত্বের স্বপ্ন কোথায় বিলীন
হয়ে গেল। অন্ধকার রাতের এই মোহনীয় পরিবেশে মনে হল আমার জীবনে যেন আর প্রভাত না
আসে। কিন্তু একসময় প্রভাত হল। ঘুম ভাঙ্গল। দেখলাম, আমার পদযুগল তোমাকে সাপের মত
বেষ্টন করে আছে। ঘুমের ঘোরে তুমি আমাকে আঁকড়ে আছ নিবিড় বন্ধনে। আমি বিস্ময়ে
চেয়ে রইলাম তোমার মুখের পানে। বিধাতার এক অনবদ্য সৃষ্টি আমারই বাহুতে বন্দিনী।
সাদেকের কথা মনে হতেই আমার সমস্ত শিরা
উপশিরা শিথিল হয়ে এল। এ আমি কি করছি? আমার বন্ধু অন্য রুমে প্রভাতের প্রতীক্ষায়
অনিদ্রার মত যন্ত্রণা নিয়ে বিছানায় ছটপট করছে। কিন্তু পরক্ষণেই সন্দেহ হল তোমাকে
ইদ্দত পালন শেষে মুক্ত করে দিলেও সাদেক তোমাকে আদৌ স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে গ্রহণ
করতে পারবে কিনা সন্দেহ। কারণ থুথু মুখে নিয়ে হাঁটা যায়, কথা বলা যায় কিন্তু
মুখ থেকে খসে গেলে চেটে তোলা যায়না। যদি সে তোমাকে গ্রহণও করে তবু সারাজীবন তোমার ব্যাপারে
খুঁতখুঁতে থাকবে।
তোমাকে এমনি এক অনির্দিষ্ট পরিস্থিতির
শিকার হতে দেব কি দেব না এরকম এক অন্তর্দ্বন্ধের জ্বালায় যখন জ্বলছিলাম তখন মনই
বলে দিল সাদেক এবং তোমার পৃথক হয়ে যাওয়াটা বাঞ্ছনীয়।এতে তোমাদের উভয়ের মঙ্গল
হবে। কারণ এমন কিছু ভুল মানুষ করে যা শোধরাতে গিয়ে আবারো ভুল করে বসে। যার তীব্র
দহন আজীবন মানুষকে পুড়িয়ে মারে। তোমাদের দুজনের ভুল হচ্ছে ঠিক এধরনের একটি ভুল। তোমাদের
ভুলের শিকার হলাম শেষ পর্যন্ত আমিও।
এই বলে তোমার বন্ধুটি ক্ষান্ত হল
কিছুক্ষণের জন্য। আকস্মিক আমার মাথা ঘুরে গেল। অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম মাটিতে।
পানির ঝাপটায় একসময় জ্ঞান ফিরে এল। মাসুদকে চিন্তামগ্ন দেখলাম। বলল,দ্যাখো রীতা,
তোমার এই মানসিক কষ্টের জন্য হয়তো আমিই দায়ী। একটু সুস্থ হয়ে উঠলেই তোমাকে সাদেকের
কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসব। বিশ্বাস কর,আমি তোমাদের পথের কাঁটা হয়ে থাকতে চাইনি। শুধু সঠিক
সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না বলেই তোমাকে নিয়ে এসেছিলাম বন্ধুপ্রতীম সাদেককে না
জানিয়ে। আমার জন্য আমি আর ভাবতে চাই না। যে ছন্নছাড়া জীবনের সাথে আমি চিরকাল
পরিচিত সে জীবনেই না হয় ফিরে যাব, কিন্তু তোমাদের দু'জনের কোন মনঃকষ্ট সইতে পারব
না,একটা চাপা আর্তনাদের মত শুনালো মাসুদের কথাগুলো।
ওর সরল মুখের পানে চেয়ে রইলাম। ও
আনাড়ী কিন্তু আমিতো অভিজ্ঞ। বাঁধনের সময় হানিমুনে তোমার সাথে কক্সসবাজারে হোটেলকক্ষে
ঠিক এভাবেই অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম, কি মনে নেই? সুতরাং আমি কি ধারণ করছি মাসুদের
বুঝতে অসুবিধা হলেও আমার হয়নি। ওকে বললাম, তুমি আমার স্বামী আর তোমার ভালবাসার
ফসল আমি ধারণ করছি। অতীত আমার কাছে, যতই পীড়াদায়ক হোকনা না কেন বর্তমানকে আমি
অস্বীকার করি কিভাবে? মাসুদ অনুশোচনার স্বরে বলল, আমাকে ক্ষমা কর রীতা। ব্যাপারটি
যে এতটুকু গড়িয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি। জীবনে কোন নারীকে অকারণে আমি বিব্রত করিনি
এটাই ছিল আমার অহংকার, কিন্তু কেন যে আমি ....।
বিশ্বাস কর সাদেক, তোমার ব্যাপারে
ভাবতে ভাবতে সে আজকাল এমনই খামখেয়ালী হয়েছে যে, জীবনের সব খেই যেন হারিয়ে
ফেলেছে। আমি ওকে সমগ্র শক্তি দিয়ে ধরে রেখেছি, নতুবা সে অন্তর্দ্বন্ধের জ্বালায়
জ্বলে পুড়ে এতদিনে নিঃশেষ হয়ে যেত। ওকে বুঝিয়েছি,বিধি মোতাবেক আমি তোমার স্ত্রী।
সে অধিকারে তুমি আমার উপর অধিকার খাটিয়েছ,তাতে তোমার ভুল হয়নি বরং তুমি যা করেছ
তা ধর্মের বিধি মোতাবেক অধিকতর গ্রহণযোগ্য। এতে তার অপরাধবোধ কিছুটা পাতলা হয়েছে।
পরদিন মাসুদ সাক্ষীদের তলব করে স্থানীয়
কাজীর কোর্টে গিয়ে দলিলের মাধ্যমে আমাদের সম্মন্ধকে পাকাপোক্ত করে এসেছে। কিন্তু
সে তোমাকে ভালবাসে বলেই হয়তো তাকে অপরাধী ভাবে সারাক্ষণ। ইতোমধ্যে সে একটা
প্রস্তাব নিয়ে আমার সাথে কথা বলেছে। তার একমাত্র বোন সেতু, যে ঢাকা ভার্সিটিতে
পড়ে, তাকে তোমার হাতে তুলে দিয়ে সে স্বস্থি পেতে চায়। তোমাকে সুখী দেখার সাথে
সাথে সে আরও নিবিড় করে নিতে চায় সম্পর্কের দূরত্বকে। ভেবে দেখলাম, তার
সিদ্ধান্তই আমাদের সকলের জন্য মঙ্গল। আশা করি সেতুকে বরণ করে নিতে তোমার আপত্তি
নেই। বাঁধনও তার নতুন মা পাবে, একথা ভেবে আমিও একটু শান্তি পাব। বাঁধনের আটবছর পূর্ণ
হল। এ বয়সে শিশুমন অনায়াসে সবকিছু খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এখানে আসা অবধি
মুহূর্তের জন্য ওকে ভুলতে পারছি না। যে আমাকে একটি মুহূর্ত ছেড়ে থাকার পাত্রী
নয়, আজ সে কিভাবে আছে জানি না ?
সাদেক, আমি তোমার সুখ দুঃখের সাথী
ছিলাম দীর্ঘ বারটি বছর। এ অধিকারে আশা করি সেতুকে গ্রহণ করতে রাজী হবে। এ বুকভরা
আশা নিয়েই আমি তোমার মতামতের অপেক্ষায় থাকব।
আমাদের ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে তোমার সহজ সরল বন্ধুটিকেও। মাসুদ দেশে যাওয়ার পায়তারা করছে। ফিরে আসার সময় সেতু ও আমাকে সাথে নিয়ে আসবে। আমার পাসপোর্টে একজিট লাগিয়ে বাঁধনকে নিয়ে শিগগির আসবে সে আশায় পথ চেয়ে রইলাম। ইতি, রীতা।
ভাবনার AZjvšÍ গভীরে হারিয়ে যায় সাদেকের মন।তবে কি তারই ভুলে গোছানো সংসারটি তছনছ হয়ে গেল? তাই বা কি করে হয়? গত একবছর ধরে সামান্য কারণে অহেতুক ঝগড়া লেগেই ছিল রীতার সাথে। নিত্যনৈমিত্তিক ঝগড়ার রেশ ধরে রীতাকে তালাক দিতে বাধ্য হয় সে। কিন্তু সত্যি কি রীতাই এর জন্য একা দায়ী? সেওতো কম যায়নি। ঝগড়ার wewfbœ ch©v‡q সে কি বিষ ঢালেনি? ওকে AK_¨ fvlvq গালিগালাজ করেনি?
তিনতালাক দিয়েই রীতার বিছানা আলাদা করে দেয় সাদেক যদিও এ ব্যাপারে তার বা রীতার জ্ঞানের পরিধি বা ধর্মীয় রীতিনীতি m¤§‡Ü পর্যাপ্ত Ávb ছিলনা। রাগের মাথায় রীতাও বলে উঠে, তুমি তালাক দেবার আগে আমিই তোমাকে তালাক দিচ্ছি, তোমার সাথে সংসার করতে আমার বয়েই গেছে।
রীতা কেঁদে বুক ভাসায় নিরবে।একই ছাদের নিচে দু’রুমের দু’টো বিছানায় বারবছরের বিবাহিত জীবন শরবিদ্ধ পাখির ন্যায় ছটফট করে।দেশে হলে রীতা চলে যেত বাপের বাড়ি কিন্তু এই প্রবাসে কোথায় যাবে সে? কার কাছেই বা জানাবে Df‡qi fz‡ji এ চরম পরিণতির কথা? তাদের একমাত্র মেয়ে euva‡bi K_v bv †f‡eB এমন গর্হিত কাজ করতে দ্বিধাবোধ করলনা কেউই!
অনেক ভেবেচিন্তে ZwoNwo K‡i এ অবস্থা হতে DËi‡Yi পথ খুঁজে পেল সাদেক। তায়েফে চাকুরীরত তার শৈশবের প্রিয় বন্ধু সংসারবিমুখ মাসুদকে ফোনে ডেকে civgk© K‡i †jvK RvbvRvwb Ges mgv‡Ri KUzw³ n‡Z †invB †c‡Z GB weaŸsmx mgvav‡bi c_ †e‡Q wbj|
gvmLv‡b‡Ki gv_vq ¸wjj GjvKvi gmwR‡`i evOvjx Cgvg
†gŠjvbv Avãyi iv¾vK mv‡n‡ei K_v g‡b n‡ZB GKw`b †`Lv K‡i Zvjv‡Ki weav‡bi e¨vcv‡i
we¯ÍvwiZ Rvb‡Z Pvq mv‡`K| †gŠjvbv Avãyi iv¾vK GK ch©v‡q e‡jb, ‡Kvb ¯^vgx স্ত্রীকে
রাগের বশে তিনতালাক বললেই তালাক হয়না। স্বামীর স্ত্রীর বনিবনা না হলে Aby‡kvPbv
m„wói j‡ÿ
প্রথমে বিছানা আলাদা করতে হয়, দ্বিতীয়তঃ ভুল সংশোধনের জন্য দু’জন wZbgvm
নিরাপদ দুরত্বে বসবাস করবে যাতে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে পুনরায় সংসারে ফিরে আসতে
পারে, এতেও যদি কাজ না হয় তাহলে দু’পক্ষের
আত্মীয়স্বজন এসে মধ্যস্থতা করে ভুলবুঝাবুঝির অবসান ঘটাতে সচেষ্ট হবে। এরপরও যদি ¯^vgx
¯¿x g‡b K‡i Zv‡`i c‡ÿ Avi msmvi Kiv m¤¢e bq তাহলে দু’পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে দেনাপাওনা পরিশোধসাপেক্ষে
বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানো যাবে। Rv‡bb, বিবাহবিচ্ছেদকে ধর্মে অতি গর্হিত কাজ
বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
ধর্মের বিধান m¤ú‡K© AbwfÁ সাদেক hw` c~‡e©B †gŠjvbv mv‡n‡ei ¯§iYvcbœ nZ Zvn‡j AvR‡Ki GB D™¢U cwiw¯’wZi m„wó nZbv|
চিন্তায় ছেদ পড়ে সাদেকের, যখন অফিসবয় ঝড়ের বেগে তার রুমে এসে জানালো, বড়া সাহাব আপকো জরুরি তলব কিয়া।
টেবিলের একপাশে চিঠিখানা রেখে ধীর
পদক্ষেপে এগিয়ে যায় সাদেক বড় সাহেবের রুমের দিকে। গ্রীক জেনারেল ম্যানেজার মিঃ
সিভাসতানীর সাথে গত পনরো বছর ধরে কাজ করে আসছে সে। নিজের কর্মনৈপুণ্য দেখিয়ে
সুপারভাইজার,সেইলস্ থেকে একলাফে এসিস্টেন্ট সেইলস ম্যানেজার পদে উন্নীত হয়েছে
অনেক দায় দায়ীত্ব মাথায় নিয়ে।
গুড মর্নিং স্যার। রুমে ঢুকতেই মিঃ সিভাসতানী সাদেকের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন। কুশলবার্তা বিনিময়ের পর বলেন, আজ তোমাকে এত নার্ভাস দেখাচ্ছে কেন সাদেক? এ্যানি প্রোব্লেম?
মাই চাইল্ড ইজ সিরিয়াসলি সিক। গত দশদিন ধরে জ্বর ছাড়তেই চাইছে না।
ডাক্তার দেখিয়েছ?
হাঁ, ওষুধ চলছে, আজ আবার যাব ডাক্তারের কাছে।
অবিলম্বে ওর রোগমুক্তি কামনা করছি। তোমার স্ত্রীকে অত্যন্ত বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমতী বলে মনে হয়েছিল সেরাটন হোটেলে আমাদের অফিসিয়াল এক পার্টিতে। কি, মনে নেই? আশা করি ওর নিঃস্বার্থ সেবায় মেয়েটি ভাল হয়ে উঠবে।
তোমাকে ডেকেছি একটি সুখবর দেওয়ার জন্য। আশা করি তুমি আমার উপর খুশি হবে এই ভেবে যে, সিভাসতানী গুণীর কদর দিতে জানে। তোমার কর্মনিষ্ঠার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত মনে করে আমাদের ইতালি ব্রাঞ্চের সেইল ম্যানেজার পদের জন্য তোমার নাম কর্তৃপক্ষের কাছে ফরওয়ার্ড করেছিলাম। কর্তৃপক্ষ তা মেনে নিয়েছে। কনগ্রাচুলেশন মিঃ সাদেক। একটু ভেবে চিন্তে জানাও কবে চার্জ টেক-ওভার করতে পারবে?
সাদেক তাকিয়ে থাকে মিঃ সিভাসতানীর মুখের পানে ভাবলেশহীনভাবে। এমন একটি সুসংবাদ জানার পরও সাদেকের মুখায়বে কোন লক্ষণীয় পরিবর্তন না দেখে মিঃ সিভাসতানী পুনরায় বলে ওঠেন, এ্যানি থিং রং মিঃ সাদেক? এ ধরনের একটি অফার পেয়েও তুমি খুশী হওনি? আশ্চর্য, কি হয়েছে তোমার? আমিতো আশা করেছিলাম সিভাসতানীর মুখের কথা মুখেই রয়ে যায়....।
আই সুড বি গ্রেটফুল টু ইউ স্যার ফর সাচ এ গুড নিউজ। বাট আই হ্যাভ সাম সিরিয়াস ফ্যামিলি প্রোব্লেম, পিওরলি পার্সোনেল। আই ডোন্ট নো হাউ টু ট্যাকেল ইট। বাট আই হোপ ,আই ক্যান ওভারকাম দি প্রোব্লেম উইদইন দি কামিং ডেইজ।
তুমি কি ভেবে বলছ? চান্স নেভার কামস্ অলওয়েজ। জীবনে আকস্মিক ভাবে আসে। এটাকে হাতপেতে নিতে হয়। তুমি আমাকে নিরাশ করেছ সাদেক। কর্তৃপক্ষ যদি জানে তাহলে তোমার স্থলে অন্যকে রিপ্লেস করবে। বুঝতেই পারছ এমন অফার কে না লুফে নেবে? আই হোপ ইউ উইল কাম টু মি উইথ এ পজিটিভ আন্সার বাই টুমরো দি লেটেস্ট এন্ড উইস ইউ গুড লাক। ইউ মে গো নাও।
আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট টু গিভ ইউ এ গুড নিউজ,থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। ধীর পদক্ষেপে চিন্তিত মনে বেরিয়ে আসে সাদেক বড় সাহেবের রুম থেকে।
সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের হাতছানি এ মুহূর্তে তার কাছে নিষ্প্রভ এক প্রদীপের মত মিট মিট করে জ্বলছে। বর্তমান ও ভবিষ্যতের লড়াইয়ে সে যেন হেরে যাচ্ছে। কি হবে প্রমোশন দিয়ে? এ ধরনের খবরে সবচেয়ে যে বেশি খুশি হত আজ সে অন্যের বাহুডোরে বন্দিনী। টুকরো টুকরো ঘটনার স্মৃতি তাকে তন্ময় করে দেয়। সুপারভাইজার থেকে সহকারি সেইলস ম্যানেজার পদে উন্নীত হওয়ার পর প্রমোশন লেটার নিয়ে বাসায় ফিরছিল। ফেরার পথে রীতার জন্য দু'গাছা সোনার বালা কিনে নিতে ভুলেনি সে।
দরজা খুলে দিতেই কৃত্রিম সুরে রীতাকে বলল। এ্যাই, কাল হতে চাকরি নেই, বুঝেছ? অবিলম্বে সবকিছু গুটিয়ে নাও শীঘ্রই দেশে ফিরে যেতে হবে।
তোমাদের জেঃ ম্যানেজার সিভাসতানীর চাকরি আছে?
ওর চাকরি থাকবে না মানে?
জীবন থাকতে ও তোমাকে ছেড়ে দিবে সেটাও কি আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?
বিশ্বাস হয়না, না? তাহলে দেখে নাও এই ছাড়পত্র। রীতার ব্লাউজের একফাঁকে চিঠিখানা গুজে দিয়ে জুতা খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সাদেক।
পড়তে হবে না। বলেই ফেলনা বোনাস কত পেয়েছো?
কি দেবে ?
যা চাও তাই দেব। কোনকিছুর কম আছে তোমার এই বউটির কাছে ?
তাই না কি? তাহলে এক্ষুণি গত পরশুদিন যে খয়েরী কাতান শাড়িটি কিনে দিয়েছিলাম তা পরে আস।
ঠিক আছে পরব। আগে বলনা কত পেয়েছ? হাত ধুতে ধুতে প্রশ্ন করে রীতা।
তোমার মুখেই অংকের উচ্চারণটা শুনাবে ভাল। কাগজটা খুলে একবার পড়েই দেখনা।
ব্লাউজের এক ফাঁকে গুজে থাকা অফিসিয়াল এনভেলাপটি চোখের সামনে মেলে ধরে রীতা। বিস্ময়ে বলে উঠে। সহকারী সেইলস ম্যানেজার? বোনাস নয়, প্রমোশন! ঠিক আছে এক্ষুণি শাড়ি পরে আসছি। এমন সুখবর শুনে আমি কি বসে থাকতে পারি? এই এলাম।
ড্রেসিংরুমে গিয়ে হালকা মেক-আপ শেষে সাদেকের কথানুযায়ী শাড়িটি পরে কাছে এসে বলে,বলুন মহাশয় এখন কি করতে হবে?
চোখ বুজে দু'হাত বাড়াও।
দু'হাত বাড়িয়ে দিয়ে রীতা বলে, এই বাড়ালাম।
দু'হাতে দু’টো সোনার বালা পরিয়ে দিয়ে সাদেক বলে এখন চোখ খোল।
এত বড় বড় বালা? কি সুন্দর দেখতে? কত হয়েছেগো? তোমার পছন্দের তারিফ করতেই হয়। তা এত দামের জিনিষ কেনার কি দরকার ছিল?
তোমার দামের তুলনায় অবশ্যই তা হাজার গুণে কম। তোমাকে এই শাড়িতে আর বালাতে যা সুন্দর লাগছে না - মনে হচ্ছে এক্ষুণি একটা কাণ্ড ঘটাই। বাঁধন কোথায়?
ও সেই দুপুর থেকে একনাগাড়ে ঘুমুচ্ছে।
ঠিক আছে, বেডরুমে চল। কতকাল তোমাকে অফিস হতে ফিরে এভাবে দেখিনি। মেঘলা আকাশে ফুলবাগানের মাঝখানে ফুটে থাকা টাটকা রক্তগোলাপ দেখেছো কখনো? মনে কর তুমি হচ্ছ এখনের সেই দুর্লভ রক্তগোলাপ।
সাহেবের মতলবটা খুব একটা ভাল মনে হচ্ছে না।
বিশ্বাস যদি না হয় তাহলে আমার এই চোখ
দুটো একবার তোমার চোখে লাগিয়ে দেখ?
মে আই কাম ইন স্যার? আগন্তক ভদ্রলোকটির দিকে চেয়ে আকস্মিক চিন্তায় ছেদ পড়ে সাদেকের।
ইয়েস - কাম ইন। ।
জেঃ ম্যানেজার মিঃ সিভাসতানী আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। আমি ওরিয়েন্ট কার্গো কোম্পানি থেকে এসেছি। আমরা খুব কমপিটেটিভ রেইটে জলে বা স্থলপথে মালামাল পোঁছে দেই। আপনার নাকি দরকার লাগতে পারে স্যার, জি,এম তাই বললেন।
আমার কিছু মালামাল তায়েফ যাবে - পারবেন? আর কতদিন লাগবে?
মাত্র দু'দিনের ভিতর আমাদের লোকজন আপনার দেওয়া লিস্ট অনুযায়ী সব মালামাল বাসা হতে কালেকশন করে তায়েফে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দিতে পারবে স্যার।
ঠিক আছে, আমি লিস্ট বানিয়ে নিয়ে আসব। কাল আপনি এলে কন্ট্রাক্ট পেপারে সই করব - কেমন?
থ্যাঙ্ক ইউ স্যার, এখন আসি।
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে সাদেকের বুক চিরে। কাজে কিছুতেই মন বসাতে পারছেনা। রীতার ও বাঁধনের পাসপোর্টে এগজিট লাগানোর কাজটা আগামীকাল দুপুরের আগেই সেরে নিতে হবে।
ক্রিং ক্রিং ফোন আবার বেজে উঠতেই ফোন উঠায় সাদেক। ওপাশ হতে বাঁধনের কণ্ঠ ভেসে আসে - বাপ্পি, আমার মাথা যে পুড়ে যাচ্ছে। তুমি আসছ না কেন? ওদের সাথে কথা বল বাপ্পি ...।
কার সাথে? কাদের সাথে?
এবারে কণ্ঠ ভেসে আসে প্রতিবেশী ফিলিস্তিনী মহিলার। আপনার মেয়ের জ¦রের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ভীষণ বমি করছে। বুদ্ধি করে দরজা খুলে আমাকে ডাক না দিলে এতক্ষণে যে কি হত? তা মেয়ের মা কোথায় - দেখছিনা যে?
ও আমার এক বন্ধুর বাসায়। ঠিক আছে, এক্ষুণি আসছি - আপনি দয়া করে মেয়ের পাশে একটু বসুন।
দশমিনিটের মধ্যেই সাদেক এসে বাসায় পৌঁছে। ঘরে ঢুকতেই ফিলিwস্তনী মহিলা বাঁধনকে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে কেটে পড়ে। পাuজাকোলা করে বাঁধনকে নিয়ে গাড়িতে উঠিয়েই পাশাপাশি ডাঃ মাগরাবী হাসপাতালের ইমারজেন্সির উদ্দেশ্যে গাড়ির গতিবেগ বাড়িয়ে দেয় সাদেক।
ডাক্তার বাঁধনের নাড়ী পরীক্ষা করে জ্বর নামার ওষুধ ও ইনজেকশন দিয়ে বললেন, যদি বিকালের ভিতর জ্বর না ছাড়ে তাহলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
বাসায় ফেরার পথে হোটেল হতে তার ও বাঁধনের জন্য কিছু খাবারদাবার কিনে নিতে ভুলেনা সাদেক। ঘন্টাখানেক পর বাঁধন বলে - বাপ্পী, আমি এখন অনেকটা সুস্থ। চলনা, তায়েফে গিয়ে মামণিকে নিয়ে আসি? মামণিকে নিয়ে এলে আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাব সে তুমি দেখে নিও।
ঠিক আছে। আজ এবং কাল সকালে আমার জরুরি কিছু কাজ আছে। কাল বিকেলে তোমাকে তোমার মায়ের কাছে নিয়ে যাব কথা দিলাম।
সত্যি বলছ?
মায়ের কাছে কেউ মিথ্যে বলে না কি? কাল যাবোই যাব - দেখে নিও, কেমন?
সারারাত জেগে লেখাপড়ার কাজে মগ্ন থাকে সাদেক। পাশেই বাঁধন ঘুমুচ্ছে। গায়ে হাত দিয়ে R¦রের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখে। অনেকটা কমার পথে। বাঁধনের কপালে চুমু খেয়ে চুলে বিলি কেটে দেয়। এ মেয়েটি তার হৃদয়ের সব কÕটি জায়গা দখল করে আছে। এতটুকুন মেয়ে মা ছাড়া কেমন করে এতদিন ঠিকে আছে ভাবতে গিয়ে তার দু’চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। দু'ফোটা অশ্রু বাঁধনের গালে গড়িয়ে পড়তেই চোখ মুছে সাদেক।
পরদিন সকালে অফিসে এসে জি.এম মিঃ সিভাসতানীর সাথে প্রথমে দেখা করে সাদেক। সুন্দর পোষাকে আজ তাকে ভীষণ মানিয়েছে। অফিস সংক্রান্ত কিছু আলোচনার পর সাদেক তার সম্মতি জানায়। সিভাসতানী খুশি হয়ে সাদেকের কাঁধে ঝাকুনি দিয়ে বলেন, গুড লাক সাদেক - আগামী ছয়মাসের মধ্যেই আমাকেও ইতালিতে তোমার পাশে পাবে, স্মার্ট ম্যান -... দ্যাটস্ হোয়াই আই লাইক ইউ ভেরি মাচ।
কথানুযায়ী বাঁধনকে পরদিন বিকেলে তায়েফে রওয়ানা দেয় সাদেক। বাঁধন আজ মহাখুশী। খই ফুটছে মুখে। গায়ে এখনো জ্বর আছে তবে সহ্য করার মত।
পাহাড়গুলো কি সুন্দর, তাই না বাপ্পী? ঐ দ্যাখো, কি সুন্দর পাহাড়ের গায়ে সাদা সাদা মেঘগুলো লেপটে আছে যেন তূলোর মত - চেয়েই দেখোনা বাপ্পী! ও বুঝেছি এজন্যই বোধহয় মামণি ফিরে আসছে না। বাপ্পী, দেখো, দেখো - কি সুন্দর চারটি বানর আমাদের গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে, ওরা বোধহয় আমাদের সাথে তায়েফ যেতে চায়। গাড়িটা একটু থামাও না বাপ্পী - প্লিজ? দেখি ওরা কি করে? আমার কি যে খুশি লাগছে !
এই থামালাম। এক কাজ কর – তোমার বিস্কুটের প্যাকেট হতে চারটি বিস্কুট আর চারটি কলা ওদের দিকে ছুঁড়ে মারো - দেখবে ওরা খুব মজা করে খাবে।
কথানুযায়ী বাঁধন কলা ও বিস্কুট গাড়ির জানালাপথে ছুঁড়ে দিতেই বানরগুলো লুফে নিল। বাঁধন তা দেখে আনন্দে নেচে উঠে।
আঁকা বাঁকা পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে সামনে আল-হাদা হাসপাতাল নজরে পড়তেই গাড়ির গতি শ্লথ করে দেয় সাদেক। এই হাসপাতালে ডাঃ মিজানসহ বেশ কয়েকজন পরিচিত বাঙ্গালী ডাক্তার রয়েছেন। ওখানে বাঁধনকে পুনরায় পরীক্ষা করিয়ে নিলে কেমন হয়?
ইমারজেন্সি রুমে যাওয়ার পথেই ডাঃ
মিজানের সাথে দেখা হয়ে যায় সাদেকের।
আরে সাদেকভাই যে? কেমন আছেন? কতদিন হল দেখিনি? মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছে ওর শরীরে জ্বর আছে। ভাবীকে আনেন নি? একসাথে অনেকগুলো কথা বলে সাদেকের সাথে করমর্দন করতে থাকেন ডাঃ মিজান।
তা আপনি কেমন? তায়েফে যখন আসলাম তখন আপনাদেরকে না দেখে যাওয়ার প্রশ্নই উঠেনা, তাছাড়া ভাবলাম বাঁধনকে এই সুযোগে একটু পরীক্ষা করিয়ে নেয়া যাবে। প্রায় দশদিন থেকে ওর জ্বর। আজ একটু ভালো মনে হচ্ছে।
ঠিক আছে, চিন্তা করবেন না। এক্ষুণি পরীক্ষা করে ভাল ওষুধ দেব। জ্বর ছাড়তেই হবে,ছাড়বে না কেন? বোধহয় সঠিক এনটিবায়োটিক পড়েনি। তবে এর আগে রক্ত পরীক্ষা করতেই হবে।
আমি না হয় কিছুক্ষণ পরে এসে ওকে নিয়ে যাব। ততক্ষণে আপনি পরীক্ষাগুলো সেরে নিন। ওর মা আমার এক বন্ধুর বাসায়। ঘন্টাখানেকের মধ্যে আসলে চলবে?
হু - চলবে।
মামণি, তোমার এই আঙ্কেল অনেক বড় ডাক্তার। তোমার রক্ত পরীক্ষা করে ভাল ওষুধ দেবেন। এরমধ্যে আমি তোমার মাসুদ আঙ্কেলের অফিস হতে একটু ঘুরে আসি,কেমন? রক্ত দিতে ভয় পাবেনাতো? মাগরিবী হাসপাতালে যেভাবে সাহস করে দিয়েছ, ঠিক তেমনি সামান্য রক্ত দিতে হবে, কেমন?
ঠিক আছে। আংকেল কষ্ট দেবেননাতো?
আমার সাহসী মেয়ে, কি যে বল? উনিতো তোমার আংকেল? কষ্ট দেবেন কেন? আচ্ছা আমার সামনেই তোমার আংকেল রক্ত নেবেন, কেমন ?
ঠিক আছে, একটুখানি ভাবতে দে ... সময়তো আর ফুরিয়ে যাচ্ছেনা যে এখনই তোকে উত্তর দিতে হবে।
উঁচু টিলার উপরে সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে হাঁফাতে থাকে সাদেক। বলল- এত উপরে বাসা নিয়েছিস?
আমার চাকরি কি আর তোর মত? কম পয়সার বাসা অনেক উপরেই হয়।
বাসার গেটের কাছে পৌঁছে হাঁফাতে হাঁফাতে সাদেক বলে,এখানেই একটা চেয়ার দে ভাই। বাইরে একটু বসি। পাহাড়ের গায়ে লেপটে থাকা ভাসমান মেঘগুলো দেখতে খুবই ভাল লাগছে।
ঠিক আছে তোর যেখানে ইচ্ছা বস্। এর মধ্যে আমি গোসলটা সেরে আসি।
এক কাপ চা নিয়ে হাজির হয় রীতা। গেইটের বাইরে এসে দেখে সাদেক পিছন ফেরে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে পাহাড়গুলোর দিকে। যেন এক ধ্যানমগ্ন সন্যাসী। নিজের উপস্থিতি কিভাবে বুঝাবে সে? এত কাছের লোকটি আজ কত দূরের! দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কাপ প্লেটে টুং টাং শব্দ করতেই সাদেক সোজা হয়ে বসে।
এই নাও তোমার চা।
মাটিতেই রেখে দাও।
বাঁধনের শরীর এখন কেমন?
দশদিন হল জ্বর। আজ বেশ ভাল মনে হচ্ছে। আল-হাদা হাসপাতালে ডাঃ মিজানের কাছে ভালভাবে পরীক্ষার জন্য রেখে এসেছি। ঘন্টাখানেক পর নিয়ে আসব।
এক অজানা আশংকায় কেঁপে উঠে রীতার হৃৎপিণ্ড। কাঁপা কাঁপা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে,এতদিন আমি জানতে পারিনি কেন? ও কি আমার কিছু নয়?
নিজ থেকে খবর নিয়েছিলে ?
সুযোগ পাইনি, তাছাড়া ফোন করলে ওর মন বেশি খারাপ হবে,তাই করিনি। আমার চিঠি পেয়েছিলে ?
পেয়েছি।
তোমাকে না জানিয়ে চলে আসতে হল বলে মনে কিছু করনিতো?
কারণতো চিঠিতেই ব্যক্ত করেছ।
তোমার পিঠে এখনো এলারজিক বের হয়?
মধ্যে মধ্যে হয়।
কে চুলকিয়ে দেয় - বাঁধন?
চুলকাতে হয়না, চুলকানোকে জয় করে নিয়েছি।
নিজেই রান্নাবান্না কর, রান্নাবান্না শিখেছ?
না, কিন্তু এতসব জিজ্ঞাসার মানে...?
এমনিতেই ... তোমার পায়ের জ্বালাপোড়া কিছু কমেছে? একটু থেমে প্রশ্ন করে রীতা।
পায়ের জ্বালাপোড়া মনের চেয়ে বেশি নয়। কথাটি বলে হকচকিয়ে উঠে সাদেক। কি বলতে কি বেরিয়ে এল অজান্তে। প্রসঙ্গ এড়ানোর জন্য বলে, মাসুদ কোথায় ?
বাথরুমে।
তুমি না হয় ওখানে যাও। ওর হয়ত কিছুর প্রয়োজন হতে পারে।
উনি আমার উপর এত নির্ভরশীল নন। প্রয়োজনীয় জিনিষ সাথে নিয়েই বাথরুমে ঢুকেছেন। তারপর একটু থেমে বলে,তোমার এবং বাঁধনের খাওয়াদাওয়া নিশ্চয় হোটেলে চলছে?
আমার এবং বাঁধনের মত হাজার হাজার মানুষ হোটেলেই খেতে অভ্যস্থ। প্রয়োজনে মানুষ সবই পারে। মানুষ অভ্যাসের দাস।
সিগারেট খাওয়া কমিয়েছ ?
বাড়িয়েছি কি কমিয়েছি,তাতে তোমার কি? কথাটি বলতে গিয়েও সাদেকের কণ্ঠ আড়ষ্ট হয়ে যায়। না, রাগের সময় এখন নয়। যথাসম্ভব স্বাভাবিক স্বরে বলে উঠে মাত্রা একটু বেড়েছে বলে মনে হয়।
এত সিগারেট খাও? এতে ফুসফুসের ক্ষতি হবে যে? আগেতো এক প্যাকেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলে। এখানে আসার পর এখন পর্যন্ত দশটি খেয়ে ফেলেছ?
ফুসফুসের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায় কিন্তু বড় কিছু একটা বলতে গিয়ে সাদেক থেমে যায়। প্রসঙ্গ এড়াতে গিয়ে বলে,মাসুদ বোধহয় তোমার জন্য অপেক্ষা করছে,সেদিকে যাও।
বাথরুমে যাওয়ার প্রাক্কালে তোমার ভালমন্দ জানার জন্য বলে গেলেন। তাইতো জেনে নিচ্ছি। আমার দিকে একবারও তাকালে নাতো?
তেমন কোন প্রয়োজন আছে কি?
বেদনার বহ্নিশিখা চিতার আগুনের মত রীতার মনে জ্বলে উঠে দপ করে। কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে - ভাত বসিয়েছি, একটু দেরি হবে। আরো এককাপ চা দেই?
না ভাবী। এখানে আসার পথে কয়েকদফা হয়ে গেছে। রাতে ঘুমের ব্যঘাত হবে।
ভা - বী । হৃদয়ের সমস্ত শাখাপ্রশাখা ভেঙ্গে যেন এ মুহূর্তে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। কান্নাজড়িত গলায় বলে,ও নামে না ডেকে রীতা ডাকলেই অধিক খুশি হতাম। ফুঁফাতে ফুঁফাতে ঘরের দিকে পা বাড়াতে গিয়ে বাঁধাপ্রাপ্ত হয় সে।
চেয়ার ছেড়ে সাদেক এসে সামনে দাঁড়িয়ে বলে - সত্যকে সত্য বলেই মেনে নিতে হয় তা যতই কঠিন হোকনা কেন? বন্ধুপত্নীকে কেউ কোনদিন নাম ধরে ডাকে না, ভাবী বলেই ডাকে। ওহ্ বাঁধন একটি চিঠি লিখেছিল তোমার কাছে অনেক আগে। পোষ্ট করা হয়নি সময়মত। এই নাও। মাসুদকে বলো আমি বাঁধনকে আনতে হাসপাতালে যাচ্ছি, ঘন্টাখানেকের মধ্যেই এসে পড়ব।
চোখ মুছতে মুছতে সাদেকের গমন পথের দিকে চেয়ে থাকে রীতা একদৃষ্টে। যা সত্য তা-ই সে বলেছে। একবর্ণও মিথ্যে বলেনি। যে বন্ধন টুটে গেছে তাকে মেনে নেওয়ার নামইতো জীবন। কিন্তু মন এত সহজে তা মানতে চায়না কেন? বাঁধনের চিঠির কথা মনে হতেই খাম ছিঁড়ে চিঠি বের করে চোখের সামনে মেলে ধরে।
”এতদিন হয়ে গেল, তুমি ফিরে আসছনা কেন মামণি? তুমি না বলেছিলে সপ্তাহখানেক পরে চলে আসবে। তোমাকে ছেড়ে আমার কিছুই ভাল লাগছেনা মামণি। জানো, বাপ্পী রাতে একেবারে ঘুমায়না। শুধু সিগারেট খায় আর হাঁটে। বাপ্পী বলেছে তুমি নাকি হাসপাতাল থেকে একটি ছেলে বেবী নিয়ে আসবে, সত্যি নাকি মামণি? তাহলেতো খুব মজা হবে। একা একা খেলতে আমার ভাল লাগে না। তাড়াতাড়ি ছেলে বেবীটাকে নিয়ে চলে এস মামণি। .... বাঁধন।”
বাঁধনের চিঠি বুকে চেপে ধরে রীতা। অশান্ত মনের সমস্ত জ্বালা যেন হৃদয় বিদির্ণ করে দেবে এই মুহূর্তে। শ্রাবণের বৃষ্টিধারার মতই চোখ প্লাবিত করে নেমে আসে অবাধ্য অশ্রুর বন্যা। কোন কথা না বলে বাঁধনের চিঠিখানা এগিয়ে দেয় বাথরুম ফেরত মাসুদের হাতে।
মাসুদ এক পলক চিঠিতে চোখ বুলিয়ে সাদেককে ডাকতে থাকে। কোন সাড়া না পেয়ে রীতাকে শুধায়,সাদেক কোথায় ?
বাঁধনকে আনতে গেছে। শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢাকে রীতা। এদিকে মাসুদও চিন্তার অবগাহনে ডুবে রয়। কারোর মুখে যেন কোন কথা জুটছে না।
বাঁধনকে মাসুদের বাসার পাশে ছেড়ে দিয়ে ফিরে আসতে গিয়ে সাদেকের পা যেন জড়িয়ে যায়। উঁচু টিলার কয়েকটি সিড়ি উঠতেই সাদেক পুনরায় বাঁধনকে ডাকে, মামণি আরেকটি কথা শুনে যাও - আর মাত্র একটি ..।
সাদেকের ডাকে ফিরে এসে বাঁধন বলে - এই নিয়ে দু'বার ডেকে নামিয়েছ। পাপ্পীতো অনেক দিয়েছি। তুমি ফিরে এলে আরো অনেক দিব। কিছু বলার থাকলে তাড়াতাড়ি বলেই ফেলোনা? বারে বারে নামতে কষ্ট হয় যে ?
কিছু বলার নেই মা। আরেকটিবার বেশি করে আমার বুকে পাপ্পী দিয়ে যাও না মা! বুকটা যে জ্বলে যাচ্ছে মা। চোখের অশ্রু আর বাঁধ মানে না সাদেকের।
জ্বলবে না? কতদিন না তোমাকে বলেছি সিগারেট না খেতে - শুনেছ?
আচ্ছা, আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করছি আর খাব না। তবে তোমাকে একটি কথা রাখতে হবে - কেমন ?
খাবে না। সত্যি বলছ ?
তোমার কাছে কোনদিন মিথ্যে বলেছি?
ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি বলো? আমি কিন্তু মামণির কাছে অনেকদিন থাকব, তাতে কিন্তু বাধা দিতে পারবে না বলে দিলাম।।
তোমার যতদিন ইচ্ছে থাকবে। দরকার হলে সারাজীবন থাকবে, আমি চাকুরীর কারণে বিদেশে যাচ্ছি, আসতে দেরী হলে কথা দাও কাঁদতে পারবে না। আমিতো তোমার কথা রাখলাম, তুমি রাখবেতো? এই দেখো এখনই তোমার সামনে সিগারেটের প্যাকেট ফেলে দিচ্ছি।
ঠিক আছে, কাঁদব না। তবে তুমি এখন কাঁদছ কেন ? চোখ মুছ, দিনে দিনে বয়স বাড়ছে না কমছে বল দিকিন? তায়েফের আঙ্কেল যদি তোমাকে কাঁদতে দেখেন তাহলে লজ্জা কোথায় রাখবে বলো?
এত দুঃখেও সাদেকের হাসি পায় মেয়ের মুখে পাকা কথা শুনে। চোখ মুছে বলে কানে কানে যা বলে দিলাম তা মনে থাকবেতো?
হ্যাঁ - সবকিছু মনে আছে।
মাসুদ ও রীতার প্রতীক্ষায় ভাটা পড়ে কচিকন্ঠে মামণি ডাক শুনে। মামণি আমি এসে গেছি। দ্যাখো, তোমার জন্য কতকিছু নিয়ে এসেছি। হাসতে হাসতে এগিয়ে যায় বাঁধন।
আমার কলিজার টুকরো। আমাকে দেখতে এসেছ? চুমুতে চুমুতে বাঁধনকে পাগল করে তোলে রীতা। তোমার অসুখ সেরেছে মামণি?
অসুখ ছিল কিন্তু ভাল হয়ে গেছি। দ্যাখো, কত ওষুধ নিয়ে এসেছি। আমি ঠিকমত ওষুধ খাব, তুমি দেখে নিও।।
তোমার বাপ্পী কোথায়? মাসুদ বাঁধনকে আদর করতে করতে বলে।
বাপ্পী গাড়ি নিয়ে ওদিকে কোথায় যেন গেল। আর এই এনভেলাপটা আপনাকে দিতে বলেছে।
এনভেলাপে আবার কি? রীতা প্রশ্ন করে।
অ-নে-ক টাকা আর জরুরি কাগজপত্র। খুলেই দেখোনা মামণি। জানো, বাপ্পী বলেছেন এখন হতে আমি তোমার কাছেই থাকব। এখানে অনেক বানর আছে। রাস্তায় বানরগুলো কি করছিল জান?
ঠিক আছে পরে শুনব। তুমি বাইরে গিয়ে পাহাড়গুলো দেখ। এরমধ্যে তোমার বাপ্পীর চিঠিটা পড়ে নেই - কেমন? মাসুদের দিকে চিঠিখানা এগিয়ে দিয়ে বলে একটু জোরে পড়ো।
“মাসুদ-বন্ধু আমার। তোদের দু’জনের উদ্দেশ্যে আমার এ পত্র লিখা। হাতে সময় খুবই অল্প। বাঁধন নিশ্চয়ই তার মাকে পেয়ে খুশি। তোদের কাছে আমার কলিজার টুকরো বাঁধনকে রেখে গেলাম। আজ হতে তুই ওকে নিজের মেয়ে বলেই জানিস। লেখাপড়া শিখিয়ে ভাল দেখে বিয়ে দিস্। তোদের দু'জনকে আমার চাকরি জীবনের গচ্ছিত ব্যাংকের সমুদয় টাকা ও ‡`‡ki যাবতীয় স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি উপহার হিসাবে দিয়ে গেলাম। এর স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র ও চেকবই রইল।
মা মেয়ের পাসপোর্টে একজিট লাগানো
হয়েছে। সাথে বিমানের ওপেন টিকেটও রইল। তোর বোন সেতুকে ভাল পাত্র দেখে বিয়ে দিস্।
আর মাত্র তিন চার ঘন্টার মধ্যে আমি এদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি চিরতরে, দূরে-বহুদূরে।
আর কোনদিন দেখা হবে না বন্ধু। দোয়া করি তোর ছেলে হোক, বাঁধনের খেলার সাথী হয়ে
বেঁচে থাকুক আজীবন।
তোর বাসার সামনে ‡`‡LwQ
GK †g‡N XvKv আচ্ছাদিত
পর্বত, এটির ঠিক উপরে দেখবি একটি উজ্জ্বল তারা। মধ্যে মধ্যে মেঘ এসে তাকে ঢেকে
দেয় কিন্তু তার উজ্জ্বল জ্যোতি ঠিকরে
বেরিয়ে আসে মেঘের ফাকে ফাঁকে। আমি ঐ মেঘে ঢাকা তারার মতই তোদের তিনজনের শুভ কামনা
করে যাব দূর থেকে। সুখে থাক বন্ধু। বিদায় .....।”
অশ্রুসিক্ত মাসুদের বুক থেকে বেরিয়ে আসে পাথরচাপা এক দীর্ঘনিঃশ্বাস। ভেঙ্গে পড়া রীতাকে টেনে নিয়ে আসে বাইরে। পর্বতশৃঙ্গের ঠিক উপরে ঝিলমিল মেঘে ঢাকা তারাটির দিকে চেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, সাদেককে ওখানেই মানায় রীতা,পাহাড়ের উপরে w`M›Z‡iLvq `xwßgvb D¾¡j ZvivwU nj mv‡`K Avi Avwg njvg †auvqvkv”Qbœ †g‡N XvKv cvnvo Avi ZvB‡Zv Ae¯’v‡bi Kvi‡Y Ii কাছে আবারো হেরে গেলাম।
কোন উত্তর না দিয়ে এলোকেশী রীতা পাগলিনীর মত সন্ধ্যার অন্ধকারে নতজানু হয়ে মাটিতে খুঁজতে থাকে কিছুক্ষণ আগের এক অতি পরিচিত পদচিহ্ন। জীবনভর এই পদচিহ্ন স্মৃতি হয়ে ধক ধক করে জ্বলবে মনের ¯§„wZc‡U।
========================
No comments:
Post a Comment
What do you think?