Wednesday, July 24, 2019

ভারত সরকার কর্তৃক ঘোষিত “তালাক ফৌজদারী অপরাধ” প্রসঙ্গে

নারী-পুরুষের অধিকার
(প্রসঙ্গ: ভারতে ”তালাক-ফৌজদারী অপরাধ”) 
- নাজমুল চৌধুরী


সাম্প্রতিককালে পত্র-পত্রিকায়, ইউ টিউবে, মানবাধিকার সংস্থা এবং অন্যান্য গণমাধ্যমে ভারতীয় মুসলিম সমাজে ”তালাক - ফৌজদারী অপরাধ” শীর্ষক আলোচনা সমগ্র ভারত সরগরম হয়ে উঠেছে। ভারত সরকার অর্ডিন্যান্স জারীর মাধ্যমে ভারতীয় মুসলিম সমাজে তালাকের মাধ্যমে বিবাহ-বিচ্ছেদকে ”ফৌজদারী অপরাধ” হিসাবে গণ্য করে আইন পাশ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। 

মুসলিম ধর্মগ্রন্থে এবং বিধিবিধানে ভুল ধরা কিংবা ভারতের পঁচিশ কোটি মুসলিম জনসাধারণকে হেয় প্রতিপন্ন করা ভারতীয় সরকারের সাংবিধানিক দায়িতে¦র অংশ কিনা তা আলোচনার প্রতিপাদ্য। এক বিশাল মুসলিম জনগোষ্টির ধর্মীয় সত্ত¡ায় কিংবা আচারঅনুষ্ঠানে তাদের জন্য হালাল আমিষ খাদ্য (গো-মাংস) ভক্ষণে কিংবা হিন্দু ধর্মের ”জয় শ্রীরাম” মন্ত্র কিংবা ”বন্দেমাতরম (মাতৃভূমির বন্দনা)” জোরপূর্বক পড়িয়ে নেয়া কিংবা ধর্মীয় অনুশাসনে বাধাপ্রদান ইত্যাদি বিষয় একধরণের হিংসার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হয়। মুসলিমরা একমাত্র আল্লাহর বন্দনা করে, আল্লাহ সৃষ্ট মাটিকে নয় তাই ”বন্দেমাতরম” উচ্চারণে তাদের আপত্তি। ”বন্দেমাতরম” শব্দটি শ্রী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার লেখালেখিতে প্রথমে উচ্চারণ করেন। এ শব্দটি যে হিন্দু ধর্মের কোন প্রবর্তক কিংবা ধর্মীয় গ্রন্থ বেদের নির্দেশ তা কিন্তু নয়। তাই ”বন্দেমাতরম” না বলায় যে ভারতীয় মুসলিমরা দেশপ্রেমিক নন এটা প্রমাণিত হয়না। 

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতীয় মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সকল সম্প্রদায়ের লোকজনের অবদান অনস্বীকার্য। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে পাকভারত উপমহাদেশের সকল শ্রেণীর লোকই অংশগ্রহণ করেছিল এবং এ আন্দোলনের ফসল হিসাবে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তবে ব্রিটিশরা ”ডিভাইড এন্ড রোল” মন্ত্রটি ভারতবর্ষের নের্তৃবৃন্দের মগজে এমনভাবে পাকাপোক্ত করে গেছে যে, যার প্রতিক্রিয়া এ উপমহাদেশের অধিবাসীদের রক্তে স্থায়ীভাবে মিশে আছে। এ উপমহাদেশে হাজার হাজার বছর ধরে প্রত্যেক ধর্মের লোকই নিজেদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করে আসছে। মুঘল শাসনে ধর্মপালনে পরম সহিষ্ণুতা ছিল এবং কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা ছিলনা।      

পৃথিবীর সর্বত্রই অর্থাৎ ৯৭ টি ধর্মেই এবং শতকরা ৯৯.৯ টি দেশেই গো-মাংস ভক্ষণে বা কে কি খাবে বা না খাবে তার উপর কোন বিধিনিষেধ নেই। এমনকি সাম্প্রতিককালে জাপানের বিশেষায়িত কিছু রেষ্টুরেন্টে সদ্য মৃত মানুষের মাংসসহ নানাধরণের কীট-পতঙ্গ ভক্ষণ করারও সরকারী লাইসেন্স রয়েছে। কোরিয়া, ভিয়েতনাম, চীন কিংবা আফ্রিকার অনেক দেশেই কীট-পতঙ্গ, সরীসৃপ, কুকুর, বিড়াল, শুকর ইত্যাদির মাংসও মানুষ ভক্ষণ করে থাকে এবং এজন্য রেষ্টুরেন্টগুলো সরকারী অনুমোদন পেয়ে থাকে। এমনকি সনাতন হিন্দুধর্মের প্রবর্তক ও পুরোহিত পর্যায়ে গো-মাংস ভক্ষণের রেওয়াজও প্রচলিত ছিল। বর্তমান ভারতে ও বাংলাদেশে অনেক হিন্দুরা গো-মাংস পছন্দ করে থাকেন। ভারতে গো-মাংস নিষিদ্ধ করে যখন আইন পাশ হয় তখনও অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের নের্তৃবৃন্দ এবং আমজনতার কিছু অংশ প্রতিবাদ করেছিলেন এবং তারা নিজেও গো-মাংসে ভুরিভোজন পছন্দ করেন বলে প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন। তারা এও বলেছিলেন হিন্দুধর্মে গো-মাংস ভক্ষণ অপরাধযোগ্য নয়। হিন্দুধর্মের ঋগবেদের ১০ নং গ্রন্থের ৮৬ অনুচ্ছেদের ১৩ পরিচ্ছেদে, মনুশ্রুতির ৫ নং অধ্যায়ের  ৩০-৩১-৩৫ ও ৪২ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে তোমরা মাংস খাবে, মাংস উপকারী। প্রাচীনকালে হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা গরু বলি দিত এবং গরুর মাংস ভক্ষণও করত। গান্ধী রচিত “হিন্দু ধর্ম” গ্রন্থে বর্ণীত হয়েছে প্রাচীন ব্রাক্ষণরা গরুর মাংস ভক্ষণ করিত। মহাভারতের ৮৮ অনুশাসন পর্বে এবং মনুশ্রুতির ৩ নং অধ্যায়ের ২৬৬-২৭২ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে ঈশ্বর বিষ্ণু যুধিষ্ঠিরকে উপদেশ দিচ্ছেন তোমাদের পূর্বপুরুষদের প্রয়াত আত্মাকে সন্তুষ্ঠ করতে যদি শাকসব্জি খাদ্য হিসাবে বিতরণ কর তাহলে আত্মা ১ মাস, মাছ দিলে ২ মাস, হরিণের মাংস দিলে ৩ মাস, ভেড়ার মাংস দিলে ৪ মাস, পাঠার মাংস দিলে ৫ মাস, ছাগলের মাংস দিলে ৬ মাস, চিত্রা হরিণের মাংস দিলে ৭ মাস, কালো হরিণের মাংস দিলে ৮ মাস, গরুর মাংস দিলে ১২ মাস, ষাড়ের মাংস দিলে ১২ বছর এবং গন্ডারের লাল মাংস খাওয়ালে তাদের আত্মা অনন্তকাল সন্তুষ্ট থাকবে।

পৃথিবীর খাদ্যসম্ভার মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। প্রত্যেকটি জীবেরই তার পছন্দনীয় খাবার ভোগ করার অধিকার মহান সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন। শুধুমাত্র ভারতেই এর ব্যতিক্রম। সাম্প্রতিককালে গো-মাংস ভক্ষণের বা বহনের অপরাধে কিংবা প্রতিহিংসার কারণে মিথ্যে অপবাদে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে অনেক মুসলিম নাগরিককে প্রাণ দিতে হয় অথবা শারিরীকভাবে লাঞ্চনার শিকার হতে হয়। ভারতে অসংখ্য ধর্মবলম্বীদের বসবাস, তাদের খাদ্যদ্রব্যের মেনু নিয়ে সরকার বা হিন্দু জনতা কখনো মাথা ঘামায়নি বা কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার প্রমাণ নেই অথচ শুধুমাত্র মুসলিম নাগরিকদের অধিকারের উপর সরকার কিংবা মৌলবাদী হিন্দুদের খর্গহস্ত কেন তা বোধগম্য নয়।     

”তালাক ফৌজদারী অপরাধ” - ভারত সরকার কর্তৃক এ অর্ডিন্যান্স জারী প্রসঙ্গে কিছু কথা ঃ

এ অর্ডিন্যান্স জারির প্রাক্কালে ভারত সরকার কি কোন মুসলিম ধর্ম বিশেষজ্ঞ কিংবা মুসলিম ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কু’রআনে বিশদভাবে বর্ণিত বিধিবিধানের স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন নাকি চোখ-কান বন্ধ করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে একটি শৃঙ্খলিত ধর্মের অনুশাসনকে অবজ্ঞা করে এ ধরণের অনধিকার চর্চার প্রয়াস চালিয়ে আসছেন তা ভারতীয় এবং পৃথিবীব্যাপী মুসলিম সমাজে আজ প্রশ্নবিদ্ধ। 

একথা অনস্বীকার্য যে, ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে চলা সকল ধর্মের মানুষের মৌলিক অধিকার, এটাকে পরিবর্তন করার অধিকার কোন সরকার বা ব্যক্তিবিশেষের নেই। কারণ ধর্ম মানুষ পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে পালন করে আসছে এবং যুগে যুগে মহান সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রেরিত ধর্মপ্রবর্তকদের মাধ্যমে সেই সময়ের মানুষকে ধর্মপালনের বিধিবদ্ধ নিয়মে বিধাতার গুণগান, সমাজের মধ্যে বৈষম্য, হিংসাবিদ্বেষ, লোভ, পরশ্রীকাতরতা, সামাজিক অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট গন্ডিতে আবদ্ধ রাখার প্রয়োজনে সে সমস্ত জনগোষ্টির জন্য ধর্মপ্রচার করে গেছেন। পবিত্র কু’রআনে মহান আল্লাহ বলেছেন : আমি প্রত্যেক দেশে, প্রত্যেক জাতি ও সমাজের কাছে বার্তাবাহক পাঠিয়েছি যাতে তারা বলতে না পারে আমাদেরকে পূর্বে হুশিয়ার করা হয়নি।  

মানুষের জন্যই ধর্ম এবং ধর্ম যুগে যুগে প্রবর্তিত হয়েছে। যেমন হিন্দু ধর্ম প্রায় পাঁচহাজার বছরের পুরানো, বৌদ্ধ, মসীহি (ইয়াহুদ) ও ঈসায়ী (খ্রিষ্ট) ধর্ম প্রচারের সময়কাল দু’হাজার পাঁচশত থেকে তিনহাজার পাঁচশত বছরের মধ্যে এবং সর্বশেষ ইসলাম প্রায় পনরো বছরের পুরানো।

তাই সকল ধর্মেই সমাজে নর-নারীর অধিকার সজ্ঞায়িত করা হয়েছে যা শুধু সেই সমাজের বা সেই ধর্মের জন্যই প্রযোজ্য। সকল ধর্মেই নর-নারীর অধিকারের সীমা নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে, যদি কোন ধর্মে নর-নারীর সামাজিক অধিকারের প্রশ্নে কোনরূপ বৈষম্য থাকে কিংবা কোন ব্যাপারে ধর্ম কোন সমাধান দিতে পারেনা সেক্ষেত্রে ধর্মীয় পুরোহিতগণ ধর্মগ্রন্থ মোতাবেক বিচার বিবেচনা করে একটি সমাধানের পথ বের করেন যা সেই সমাজ মেনে নেয় এবং সেভাবেই ধর্মপালনে ব্রতী হয়। কিন্তু কোন রাজনৈতিক নেতা, গোষ্ঠী বা সরকার তাদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে হাজার হাজার বছরের নিয়মপ্রথা কিংবা ধর্মের চিরাচরিত বিধান পরিবর্তন করে তাদের নিজস্ব মতামতের প্রেক্ষিতে আইন প্রণয়ন করার অধিকার রাখেনা। 


মুসলিম ধর্মে তালাকের বিধান এবং নারী অধিকার প্রশ্নে ধর্মগ্রন্থ আল-কু’রআনে বিশদভাবে বর্ণনা ব্যক্ত করা হয়েছে যা অন্যান্য ধর্মের সাথে ত‚লনা করলে দেখা যায় ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যে ধর্মে নারীদের অধিকার সুষ্টভাবে বন্টন করা হয়েছে। 

আসুন মুসলিম ধর্মে নারী-পুরুষের অধিকার নিয়ে যে সমস্ত বিধিবিধান রয়েছে সে সমস্ত বিষয়ের উপর আলোকপাত করা যাক।

পবিত্র কু’রআনে বলা হয়েছে ঃ  ”তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের সাথে শান্তিতে বসবাস করতে পার এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাদি রয়েছে। (সুরা রুম ঃ ২০)”

”তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ (সুরা বাকারা ঃ ১৮৭)”

রাসুল (সঃ) বলেছেন  তোমাদের মধ্যে বেশী উত্তম সে, যে নিজের স্ত্রীর কাছে উত্তম আর আমি আমার স্ত্রীদের কাছে উত্তম (বুখারী ও মুসলিম)।

পারিবারিক জীবনগঠনের কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে।

এক ঃ নৈতিক চরিত্রের এবং সতীত্বের হেফাজত।

দুই ঃ পারস্পরিক ভালবাসা ও আন্তরিকতা।

তিন ঃ আদর্শ পরিবার গঠন এবং এ পরিবারের মাধ্যমে জন্ম নেয়া বংশধরগণ দেশ, জাতি ও সমাজগঠনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করবে এবং একটি আদর্শ সমাজ ও সরকার গঠন করবে।

পবিত্র কু’রআনের বিভিন্ন সুরায় মানবজাতির জীবনবিধানের কথা উল্লেখ রয়েছে। তন্মধ্যে বেশীরভাগ সুরাতেই পারিবারিক জীবনের বিষয়, যেমন : বিবাহের মাধ্যমে সম্পর্ক, বিবাহ-বিচ্ছেদ, সন্তান পালন, স্ত্রীর ভরণপোষণ, স্বামী-স্ত্রীর অধিকার ও কর্তব্যের কথা রয়েছে। 

রাসুল (সঃ) এর হাদীসে উল্লেখ আছে ”তালাকপ্রথা আল্লাহর কাছে হালাল বস্তুর মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণিত বস্তু। কোন মহিলাকে তার স্বামী অন্যায়ভাবে তালাক দিলে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠে।” 

তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে নিয়মের ভেতর সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসাবে তালাক প্রযোজ্য। তবে এ ক্ষেত্রগুলোর ব্যাপারে কমসংখ্যক লোকই অবহিত। ধর্মের বিধিবিধান না জানার কারণে বা অজ্ঞতাপ্রসূত তালাকের কারণে অনেকর সাজানো সংসার নষ্ট হয়ে যায়।

ইসলাম যেখানে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বিধান দিয়েছে সেখানে নিজেদের মধ্যে ভুলবুঝাবুঝি, ঝগড়াবিবাদ নিষ্পত্তির পথও বাৎলে দিয়েছে। পবিত্র কু’রআন ও হাদিসের বিধান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে সমস্যা সমাধানে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকেনা।
 
রাগের মাথায় অনেকে অতি তুচ্ছ কারণে ঝগড়াবিবাদকে কেন্দ্র করে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেয়। তিনতালাক দিয়েই বিবাহবিচ্ছেদের পরিসমাপ্তি ঘটায়। অথচ ইসলাম এ ধরণের তাৎক্ষণিক তিন তালাক সমর্থন করেনা।
 
আমি ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পবিত্র কা’বা শরীফের ঈমাম ডঃ সালেহ বিন হুমাইদ কর্তৃক প্রদত্ত জু’মার খুতবায় তালাকের বিধান সম্পর্কিত বয়ানের কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করছি। তিনি তার খুতবার ভাষণে বলেছেন ঃ      

ক) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতভেদের কারণে তালাক শব্দ প্রয়োগ করার কোন যৌক্তিকতা নেই। মানসিক উত্তেজনা ত্যাগ করে বিভেদের মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের কোন কাজ বা আচরণ পছন্দ নাও হতে পারে কিন্তু তাই বলে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। স্ত্রীর কোন কাজ পছন্দ না হলে তার সাথে দুর্ব্যবহার করা যাবেনা। 

পবিত্র কু’রআনে সুরা নিসার ১৯নং আয়াতে বলা হয়েছে ঃ ”স্ত্রীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে। যদি তোমরা তাদের কোন কাজ অপছন্দ কর তাহলে মনে রাখবে যে, তাদের অনকে বিষয় তোমাদের পছন্দ হয়না কিন্তু আল্লাহ এর মধ্যে তোমাদের জন্য মঙ্গল রেখেছেন।” 

খ) যদি স্ত্রীর বাস্তবিক কোন গর্হিত ত্রুটি ধরা পড়ে বা তিনি যদি স্বামীর সাথে অবাধ্যমূলক বা পছন্দের পরিপন্থী আচরণ করেন, এমতাবস্থায় তাকে তালাক দেওয়ার কথা এমনকি আকারে ইঙ্গিতেও তালাক শব্দ ব্যবহার করা অন্যায়। সুরা নিসার ৩৪ নং আয়াতে পবিত্র আল্লাহ বলেছেন ঃ ”তোমাদের স্ত্রীদের ব্যাপারে তাদের আচরণে যদি আশংকা জাগে তাহলে তাদেরকে উপদেশ দাও। উপদেশ দেওয়ার নিয়ম হচ্ছে ন¤্রভাবে বুঝানো। স্নেহমমতার ভাষায় তার ত্রæটিগুলো ধরিয়ে দিতে হবে এবং এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করতে হবে।” 

গ) আয়াতের দ্বিতীয় পর্যায়ে বলা হয়েছে নম্রভাবে ভুল সংশোধনের ব্যাপারে যদি স্ত্রী সংশোধিত না হয় তাহলে তার বিছানা আলাদা করে দাও। এ পর্যায়েও যদি কাজ না হয় তাহলে তাকে ভিন্ন রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দিবে। এ পদ্বতিতে একাকীত্বের কারণে স্ত্রীর মনে শুভ চিন্তার উদয় হতে পারে এবং অনুশোচনা জাগতে পারে। বিছানা আলাদা করে দেওয়া মানে ঘর থেকে বের করে দেওয়া নয়। স্ত্রীর প্রতি অরোপিত শাস্তির কথা অন্যের কাছে প্রকাশ করাটাও জায়েজ নয় যেহেতু এটি স্বামী-স্ত্রীর আভ্যন্তরিণ ব্যাপার। 

ঘ) এরপরও যদি স্ত্রী অবাধ্যতার ব্যাপারে জেদ ধরে তাহলে তাকে মৃদৃ প্রহার করবে তবে এ ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে এ প্রহারে সীমালঙ্গিত না হয় অর্থাৎ স্ত্রীর কোন অঙ্গহানি বা মারাত্মক শারিরীক ক্ষতি না হয়।

ঙ) এতদসত্তে¡ও যদি স্বামীর আনুগত্যে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে পরবর্তী পর্যায় সমঝোতা বা মধ্যস্থতার পথ খোলা রাখা। এ পদ্ধতি সম্মন্ধে কু’রআনে বর্ণিত সুরা নিসার ৩৫নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে ঃ ”যদি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভাঙ্গনের আশংকা দেখা দেয় তাহলে এ পর্যায়ে স্বামীর পক্ষ থেকে একজন এবং স্ত্রীর পক্ষ থেকে একজন সালিশ উপস্থিত কর। যদি তারা মধ্যস্থতায় উপনীত হয় তাহলে আল্লাহ তাদের মধ্যস্থতাকারীদের এবং তাদেরকে সাহায্য করবেন।” 

চ) সব ধরণের উপদেশ ও যাবতীয় পদ্বতি অবলম্বন করা সত্ত্বেও যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা সম্ভব না হয় এবং স্বামী-স্ত্রীর পরিবারের লোকজনের সকল চেষ্ঠা ব্যর্থ হয় তখনই তালাকের আশ্রয় নিতে হবে। 

এ হচ্ছে পবিত্র কা’বা শরীফের ঈমামের জুমার নামাজে প্রদত্ত তালাক সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত ভাষণের অংশবিশেষ। 

এখন আসা যাক্ ইসলামে তালাকের বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যা মুসলিম ধর্মে এবং মুসলিম সমাজে প্রযোজ্য।

একান্তই বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে যদি তালাক দিতে হয় তাহলে অবশ্যই নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে নতুবা ইসলামের দৃষ্টিতে তা বৈধ বলে গণ্য হবেনা।

১)প্রথমে স্ত্রীকে এক তালাক দিতে হবে এবং একমাস পর্যন্ত এক তালাক অবস্থায় ছেড়ে দিতে হয়। এ অবস্থায় তাকে ঘর থেকে বহিষ্কার করা যাবেনা বরং স্ত্রী তার স্বামীর বাড়িতেই অবস্থান করবে। উভয়ের সম্পর্ক পূর্বের মতই বহাল থাকবে বটে তবে ক্ষণিক সময়ের জন্য তাদেরকে আলাদা থাকতে হবে যাতে স্ত্রী বা স্বামী নিজেদের মনোভাব পরিবর্তন করার সুযোগ পান। একমাসের মধ্যে স্ত্রী সংশোধিত হলে স্বামী পুনরায় নিজের কাছে গ্রহণ করে নিতে পারবেন।

২)যদি একমাস পেরিয়ে যায় এবং স্ত্রী সংশোধিত না হন বা অনুশোচনা না জাগে তাহলে মাসপুর্তির পরপরই তাকে দ্বিতীয় তালাক দেওয়া যাবে এবং এভাবে আরও একমাস এ অবস্থায় ছেড়ে দিতে হবে। দ্বিতীয় মাসের শেষ অবধি পর্যন্ত যদি স্ত্রী সংশোধিত হয়ে স্বামীর ঘর করতে রাজী হন তাহলে স্বামী স্ত্রীকে পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে গ্রহণ করাতে কোন আপত্তি নেই। 

৩)এরপরও যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হয় তাহলে পারিবারিকভাবে উভয়পক্ষের মনোনিত ব্যক্তিদ্বয়ের মধ্যস্থতায় সমঝোতার চেষ্টা করতে হবে যাতে বিচ্ছেদের ভয়াবহ পরিণতি এবং ভবিষ্যতের কথা মনে রেখে পুনরায় সংসারে ফিরে আসতে পারে।

৪)মহিলাদের মাসিক রক্তস্রাব অবস্থায় তালাক দেওয়া ইসলামে জায়েজ নহে। 

৫)উপরোক্ত নিয়ম পালন করে যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সংসার করা সম্ভব না হয় তখন স্বামী চূড়ান্ত তালাক বা আরবী পরিভাষায় ”তালাকে মুগাল্লাজা” দিতে পারেন। তবে স্বামী স্ত্রীকে সম্মানের সাথে বিদায় দিতে হবে। স্ত্রীর প্রাপ্য মোহরানা সময়ের ব্যবধানে সমপরিমাণ, অলংকারাদি, পরনের বস্ত্র এবং বাড়তি কিছু সাহায্য দিয়ে বিদায় দিতে হবে। সেজন্য আল্লাহতায়ালা স্ত্রীকে উত্তম পদ্ধতিতে বিদায় দেওয়ার কথা বলেছেন (সুরা বাকারা ঃ ২৩১ এবং সুরা তালাক ঃ ১-২)। 

তালাকের ব্যাপারে ইসলামে স্ত্রীর অধিকারসমূহ ঃ

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্ধ বা বাড়াবড়ি যেমন স্ত্রীর পক্ষ থেকে হতে পারে তেমনি স্বামীর পক্ষ থেকেও হতে পারে। সমাজে বহু বদ-মেজাজী, দুশ্চরিত্র, লম্পট, কপট, যৌতুকলোভী স্বার্থপর স্বামী আছে যারা স্ত্রীর উপর অত্যাচার নিপীড়ন চালায়। অনেক সময় মারধর, খুন এবং এসিড নিক্ষেপ করে অথবা নিঃসম্বল অবস্থায় ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়। এধরণের লোকেরা মুসলিম নামধারী হলেও ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার সম্মন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে সমাজে স্ত্রীদেরকে ক্রীতদাসী মনে করে। স্ত্রী মানেই ঘরের কাজকর্ম করবে, স্বামীর পিতামাতা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনের সেবা করবে এরূপ মনমানসিকতা আমাদের সমাজে চালু রয়েছে। বাড়ির মুরব্বীদের খেদমত কিংবা দেবর-ননদের সাথে মতপার্থক্য হলে তার উপর সম্মিলিতভাবে চালানো হয় অত্যাচারের ষ্টীমরোলার। অনেক সময় শশুর-শাশুড়ী, দেবর-ননদরা ছেলের বউয়ের উপর অন্যায়ভাবে অকথ্য নির্যাতন চালায় এবং স্ত্রীকে তালাক দিতে স্বামীকে উস্কানী দেয়। স্বামী স্ত্রীকে মনেপ্রাণে ভালবাসলেও পরিবারের লোকজনের উস্কানিতে স্ত্রীকে অনেকসময় তালাক দিতে বাধ্য হয়। স্বামী স্ত্রী উভয়েই এ কারণে নির্মম পরিণতির শিকার হয়। 

আমাদের মনে রাখতে হবে ইসলামে স্ত্রীদেরকে শুধুমাত্র স্বামীর ভালমন্দ দেখা, সেবা করা এবং সন্তানদের লালনপালন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এর বাইরে উপরোক্ত দায়িত্ব স্ত্রীর দায়িত্বের অংশ নয়। তবে স্বামীর পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, ভাইবোনদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের ভালমন্দের সাথে একাত্মতা পোষণ করা, স্বামীর পরিবারের উন্নতিতে অবদান রাখা স্ত্রীর মহানুভবতা হিসাবে বিবেচিত হতে পারে এবং এ কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা প্রগাঢ় হয়, সুখের সংসার রচিত হয়।

স্বামীর আয়ের উপর স্ত্রীর পূর্ণ অধিকার থাকে। মহান আল্লাহ তাকে এ অধিকার দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের সমাজে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সে অধিকার দেওয়া হয়না। স্ত্রীর হাতখরচের জন্য স্বামীর আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ তুলে দিক এটা মুরব্বীদের পছন্দ নয়। মুরব্বীরা চান ছেলের উপার্জিত সমুদয় অর্থ তাদের হাতে আসুক, তারপর ইচ্ছে হলে ছেলের বউকে হাতখরচের জন্য কিছু দেবেন নতুবা দেবেননা এটা নির্ভর করে তাদের ইচ্ছার উপর। এটাও স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীকে উস্কানী দেবার অন্যতম কারণ। 

ইসলামে যৌতুকপ্রথার কোন বিধান নেই। ক’নেপক্ষ ছেলেপক্ষকে যৌতুক দিতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই, অপরদিকে স্বামী স্ত্রীকে সম্পূর্ণ দেনমোহর প্রধান করার পর তার অধিকার প্রয়োগ করবে। স্বামীর আর্থিক স্বচ্ছলতার উপর দেনমোহর নির্ধারিত হওয়ার কথা থাকলেও ক’নেপক্ষের মুরব্বীরা জোরপূর্বক স্বামীর আর্থিক ক্ষমতা বহির্ভূত অর্থ মোহরানা হিসাবে নির্ধারণ করার প্রয়াস চালিয়ে যান, এতে স্বামী সম্পূর্ণ দেনমোহর প্রদান না করে আংশিক পরিশোধ করে স্ত্রীকে স্পর্শ করে যা ইসলামে বৈধ নয়। অনেক সময় স্বামী অপারগ হয়ে বাসর ঘরে স্ত্রীর কাছে দেনমোহর প্রদানে অপারগতার কারণে স্ত্রীর কাছে  মাফ চেয়ে নেন, পারিপার্শিক কারণে অগত্যা স্ত্রী একরকম বাধ্য হয়ে স্বামীর দেনমোহরের  বোঝা মাফ করে দেয়। তাই ইসলামিক বিধান মতে ছেলেমেয়ের পরিবার বিয়েতে সম্মত হলে উভয়পক্ষ ছেলের আর্থিক সংগতির উপর নির্ভর করে এবং ছেলের মতামত নিয়ে মোহরানা ধার্য করাকে ইসলাম উৎসাহিত করে। 

রাসুল (সঃ) এর আমলে অনেক গরীব সাহাবারা শুধুমাত্র ছোটখাটো খেজুর বাগান কিংবা দা, কুড়াল ইত্যাদি দেনমোহর স্বাব্যস্থ করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অসংখ্য নজীর রয়েছে। এমনকি বর্তমান যুগেও আরবের যুবকেরা কিছু খেজুর এবং মাত্র পাঁচ/দশ রিয়াল মোহরানা দিয়ে বিয়ে করার কথা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপা হতে দেখা যায়। তারা ক’নেকে দেনমোহর হিসাবে প্রচুর অর্থপ্রদানে যে অপারগ সে কারণে নয়, শুধুমাত্র মুসলিম সমাজে দু’পক্ষকে মোহরানা সংক্রান্ত দেন-দরবারের অবসানের উদ্দেশ্যে এ মহৎ উদ্যোগ নিতে দেখা যায়।             

ইসলামে বিয়ের পূর্বে ছেলে মেয়ে একে অপরকে স্বচক্ষে দেখার এবং প্রয়োজনীয় খোঁজখবর নেবার অধিকার দেয়া হয়েছে অথচ আমাদের সমাজে দু’পক্ষের মুরব্বীরা ছেলে-মেয়েকে দেখে বিয়ের সম্পর্ক স্থাপন করেন যে কারণে অনেকসময় বিয়ের কিছুদিন পরেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অপছন্দের কারণে মনমালিন্যের সৃষ্টি হয়।  

লম্পট, লোভী, দুশ্চরিত্র স্বামীর কারণে নারীরা যেমন নির্যাতিত হয় তেমনি অনেক স্ত্রীও আছে যারা পরকীয়া প্রেমে আসক্তির বশবর্তী হয়ে কিংবা শারিরীকভাবে দুর্বল, মানসিক বিকারগ্রস্থ ও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল স্বামীর উপর নির্যাতন চালায়। পরকীয়ার কারণে স্বামীকে স্ত্রী খুন করতেও দেখা যায়। এরূপ ঘটনা আমাদের সমাজে বিদ্যমান। এক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদ জরুরী হয়ে পড়ে। 

স্বামী স্ত্রীকে বিশ্বাসভঙ্গের কারণে বা অবাধ্য হওয়ার কারণে তালাক দিতে বাধ্য হয় তেমনি নারীরাও স্বামীর অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে কোর্টের মাধ্যমে, গ্রামীন সালিশের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। একজন মহিলা আল্লাহর রাসুল (সঃ) এর কাছে স্বামীর অত্যাচারের কারণে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানোর আবেদন জানালে তিনি তাকে বিচ্ছেদের অনুমতি দিলেন এবং সেই সাথে স্বামীর কাছ থেকে ঐ স্ত্রী মোহর হিসাবে যে খেজুরবাগানটি পেয়েছিলেন তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। ইসলামী পরিভাষায় স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেওয়ার এ বিধানকে বাংলাভাষায় ”খোলা” বলে। সকল ঈমাম ও ফিকাহবিদদের মতে ”খোলা”র মাধ্যমে স্ত্রী লম্পট স্বামীর কাছ থেকে তালাক নিতে পারে। এক্ষেত্রে স্বামীর কাছ থেকে প্রাপ্ত সম্পদ সুন্দরভাবে ফেরত দিতে হবে।

সুখী দাম্পত্যজীবনের জন্য আমাদের প্রিয় নবীর একটি হাদিস রয়েছে। তিনি বলেন ” মানুষ সাধারণত যে কোন চারটি গুণের ভিত্তিতে বিয়ে করে থাকে যেমন, এক সৌন্দর্য্য, দুই সম্পদ, তিন বংশ এবং চার ধর্মীয় আদর্শ। তবে ধর্মীয় আদর্শবান নারীকে যে বিবাহ করবে সে-ই দাম্পত্যজীবনে সফল হবে”।   
  
উপরোক্ত নিয়মসমূহ উপেক্ষা করে তালাক দেওয়ার কোন বিধান ইসলামে নেই। পারিবারিক প্রশান্তি এবং স্থায়িত্বের জন্য ইসলাম যে বিধান দিয়েছে এর চেয়ে শ্রেষ্ট, যুক্তিসঙ্গত, উন্নত এবং সঠিক বিধান আজ পর্যন্ত অন্য কোন ধর্ম দিতে পারেনি। 

তাই পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্ধ, অবিশ্বাস, পারিবারিক বিশৃঙ্খলা, কলহ, নির্যাতন, পরকীয়া, ডিভোর্স, বিয়ে না করে লিভ-টুগেদার ইত্যাদি লেগেই আছে। ইসলাম নারী-পুরুষের সামাজিক অধিকার পূর্ণমাত্রায় দিয়েছে, পৈর্তৃক সম্পত্তি কিংবা স্বামীর মরনোত্তর সম্পত্তিতে নারীর নিশ্চিত অধিকার সংরক্ষণ করেছে যা অন্যধর্মে নেই। 

তাই আজ একথা প্রমাণিত, যারা ইসলামের বিধান মেনে চলবে তারাই সুখী দাম্পত্যজীবন অতিবাহিত করবে। এ সত্যটি আজ পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নারীসমাজের অনেকেই উপলব্ধি করতে পেরেছে তাই অন্যান্য ধর্মের নারীরা ইসলামে নারী অধিকার সংরক্ষণের বিধানসমূহে আকৃষ্ট হয়ে প্রতিদিন ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে। 

ভারত সরকার ইসলামকে অবমাননার জন্য ”তালাক-ফৌজদারী অপরাধ” আইনটি পাশ করার কারণে  পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩৩% মুসলিমদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু? ভারত সরকার যদি ভারতীয় মুসলিমদেরকে ইসলামে তালাকের বিধান না মানলে ”ফৈৗজদারী অপরাধ” বলে গণ্য হবে এ ধরণের একটি আইন পাশ করত তাহলে সমগ্র মুসলিম জাহানে ভারত সরকার নিঃসন্দেহে প্রশংসিত হত।  হিন্দু সমাজের চিরাচরিত একস্ত্রীবাদী রীতি বর্তমান  সমাজ আর তেমনভাবে গ্রহণ করছেনা এবং এটা কোন যৌক্তিক সমাধান নয়। একজন স্ত্রী কিংবা একজন স্বামী উম্মাদ, মাদকাসক্ত, অত্যাচারী, পরকিয়ার আসক্ত একজনকে নিয়ে চিরদিন সংসার করতে পারেনা। তাছাড়া যৌতুক দেয়নেয়ার ভয়কে হিন্দুসমাজ কোনক্রমেই এড়াতে পারেনা। তাই হিন্দু সমাজে অসংখ্য কন্যসন্তানকে প্রসবের পূর্বেই হত্যা করা হয়।তাই ভারত সরকার যদি সামাজিক এ সমস্ত ব্যাধি এড়াতে তালাক আইনের পরিবর্তে নিজেদের ধর্মের বিধিবিধানের উন্নতিকল্পে প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ নিত তাহলে হিন্দু সমাজের ভিত আরও মজবুত হত। 
 
বিভিন্ন ধর্মের উপদেশবাণী ঃ  

মানুষের যে সমস্ত জিনিষ বা ব্যবহার তোমার পছন্দ হয় সে সমস্ত জিনিষ বা ব্যবহার তোমার পক্ষ হতে মানুষকে ফিরিয়ে দিও : Christianity/Islamism

মহান আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করনা, প্রতিবেশীকে ভুখা রেখে খেয়োনা, অনাথ এতিমকে দয়া কর, নিজের মঙ্গলের জন্য যা যা কর, প্রতিবেশীর জন্যও তাই করবে এবং ভিন্ন ধর্মের লোককে গালমন্দ করনা  বরং তার সত্য উপলব্ধি ও হেদায়তপ্রাপ্তির জন্য দোয়া কর : Islamism

তুমি অন্যকে মনোকষ্ট দিওনা, যে অনুরূপ কষ্ট তোমাকে দেয়। কোন জীবকে অহেতুক কষ্ট দিওনা, প্রত্যেক জীবকে ভালবাসার মধ্যে ধর্ম :  Buddhism

অন্যের প্রতি এমন ব্যবহার করিওনা, অন্য হতে প্রাপ্ত যে অনুরূপ ব্যবহার তোমাকে পীড়া দেয় : Brahmanism/Hinduism 

তোমার প্রতিবেশীর খুশীতে খুশী হও এবং তাদের বিপদকে তোমার বিপদ মনে কর : Taoism,Confucius preached, চীন)

তোমার কাছে যা খারাপ বলে মনে হয়, তোমার প্রতিবেশীর জন্যও তা খারাপ বলে মনে করবে ঃ Judaism//Islamism

একজন মানুষ পৃথিবীর প্রত্যেক সৃষ্টিকূলের প্রতি সতর্ক থাকবে যেমন সতর্কতা নিজের প্রতি অবলম্বন করে :Jainism 

তোমার চোখে যে বিচারটি সঠিক বলে মনে হয়, প্রতিবেশীর প্রতিও সে সুবিচার কর : Baha'i /Islamism

তাই আসুন, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে উপরোক্ত উপদেশসমূহের আলোকে আমরা মানবতার জয়গান গাই, নিজের ধর্মে অটল থাকি এবং অন্যের ধর্মকে শ্রদ্ধা করি কারণ প্রত্যেক ধর্মের মূলমন্ত্রই মানবজাতির মঙ্গলসাধন।

সকল ধর্মের মূলমন্ত্রই মানবতা রক্ষা, ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ পরিহার করতে উপদেশ দেয়া হয়েছে। আশা করা যায় ভারত সরকার এবং জনগণ তাদের সনাতন ধর্মের অনুশাসন মেনে চলবেন এবং সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলিমসহ অন্যান্য ধর্মের লোকদের সামাজিক ও ধর্মীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন এবং মনগড়া আইন প্রণয়ন করে তাদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন করবেননা। 

=========================

No comments:

Post a Comment

What do you think?