প্রজাপতি মন
-নাজমুল চৌধুরী
মাত্র বিশ রিয়াল ... স্রেফ বিছ রিয়াল .. এশরিন রিয়াল ফাকাৎ ... বেন্টি রিয়ালাং ... ওনলি টুয়েনটি রিয়ালস্.
বাংলা, উর্দু, আরবি, ফিলিপিনো ও ইংলিশের সংমিশ্রণে কাষ্টমারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শাহেদ। চীন ও জাপানে তৈরি ওমেক্স এবং ক্যাসিও ব্রান্ডের এক একটি ঘড়িতে লাভ থাকে পাঁচ হতে দশ রিয়াল। দিনান্তে লাভের পরিমাণ দাঁড়ায় ষাট সত্তর রিয়ালের মত। তার মধ্যে দশ রিয়াল করে দিতে হয় ওয়াচম্যানদেরে।
ওয়াচম্যানদের কাজই আলাদা। দশ পনর মিটার দূরত্ব বজায় রেখে পুলিশ আর মিউনিসিপ্যালিটির লোকদের উপর শ্যান দৃষ্টি রাখা। ধর-পাকড়ের গন্ধ পেলেই প্রথম সংকেত ধ্বনি বেজে উঠবে। বুঝতে হবে পুলিশের লোকজন ধারে কাছেই আছে। দ্বিতীয় সংকেতের অর্থ ধর-পাকড়ের প্রস্তুতি চলছে, আর তৃতীয়টি হল ধর-পাকড় চলছে, পালাও নিরাপদ দূরত্বে।
সপ্তাহের প্রতিদিন হকারদের রুটিন বাঁধা জীবন। কোন্দিন কোন্ জায়গায় ফেরিওয়ালাদের হাট বসবে তা পূর্ব নির্ধারিত। ফেরি করে রুজি করা - এটা সাময়িক ব্যবস্থা। যাদের চাকরি নেই বা চাকরি খুঁজছে, তারাই কেবল এ লাইনের সদস্য। বেঁচে থাকার জন্য এক নিরলস সংগ্রাম।
একই কারণে বাধ্য হয়ে ফেরি করে শাহেদ। রিসিপশনিস্ট-এর চাকরির জন্য কত ধর্ণা দিয়েছে গত দশ বছরে তার ইয়ত্তা নেই। চাকরির অফার যে পায়নি তা নয়, তবে সব ক’টিই লেখাপড়ার কাজ। যে কাজটি করতে পারবে না সে আজীবন। মুক্তিযুদ্ধে যদি ডান হাতটি না হারাতো তাহলে তার জীবন আজ অন্যরকম হত।
বেন্টি রিয়ালাং ..... ফিলিপিনো Kvógvরেi দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গিয়েই ঘটে গেল ব্যাপারটি। পিছন হতে কে যেন খপ করে ধরল তার ডান হাতের কব্জিতে। বাম হাতে ধরা ঘড়িসমেত ব্রিফকেসটি ফসকে পড়ে মাটিতে। তাকিয়ে শাহেদের বুঝতে অসুবিধা হয়না ছদ্মবেশী পুলিশকে। শাহেদের হাত ধরে অপেক্ষমান প্রিজন ভ্যানের দিকে পুলিশ যেই না সাজোরে টান দিল, অমনি প্লাস্টিকের হাতটি পুলিশের চৌদ্দগোষ্টিকে অভিশম্পাত দিয়ে রাস্তায় খসে পড়ল।
কুঁকড়ে উঠে শাহেদ ব্যথায়। পুলিশ আরবিতে চুক চুক শব্দ করে বলে উঠে – তোমার হাতটা কি সত্যিই আসল নয়? আমি দুঃখিত ...।
বে-আইনী ব্যবসার অপরাধে শাহেদকে ফিরে আসতে হয়েছিল দেশে। প্লাস্টিক সার্জারীর মাধ্যমে কনুইয়ের সাথে প্লাস্টিকের হাতটি ফিক্স করা হয়েছিল ভারতের পুনা হাসপাতালে। ত্রিশবছর মেয়াদি হাতখানা মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই খসে গেল।
পৈত্রিক সম্পত্তির শেষ জমিটুকু বিক্রি করে এক বন্ধুর সহায়তায় সৌদিতে এসেছিল শাহেদ। গত দশবছরে ফেরি করে যা কামিয়েছে তার সিংহভাগই পাঠিয়ে দিয়েছে গ্রামের স্কুলটি মেরামতের কাজে যা একাত্তরে হানাদার বাহিনী পুড়িয়ে দিয়েছিল। সৌদি হতে ফিরে খালার বাড়িতেই উঠে শাহেদ। আপন বলতে তার এই খালাই একমাত্র জীবিত।
কিরে, আজ না তোর হাসপাতালে যাবার কথা? একগ্লাস দুধ নিয়ে হাজির হন খালা।
হাঁ, সাতটার বাসে করেই মিটফোর্ড হাসপাতালে যাব। ওখানে জার্মান প্লাস্টিক সার্জনদের একটি দল এসেছে লায়ন্স ক্লাবের সৌজন্যে।
তোর হাতের দিকে চাইলে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায় বাবা। এদিকে বয়সও বাড়ছে। সংসার করতে হবে না তোকে? এভাবে আর কতদিন ছন্নছাড়া থাকবি বলতো? বুবু দুলাভাই বেঁচে থাকলে আমাকে এত ভাবতে হত না - একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে খালার বুক চিরে।
হাসালে খালা। তুমি যদি মেয়ের মা হতে তাহলে জেনেশুনে একটি আতুড়ের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে পারতে? আমার হাতে যে অনেক কাজ পড়ে আছে খালা দেশের জন্য, সমাজের জন্য। শুধু দোয়া কর অবশিষ্ট কাজটা যাতে শেষ করে যেতে পারি...।
তোর মুখে শুধু দেশ আর দেশ। দেশ তোকে কি দিল? তোর সাথে আর কথায় পারিনে বাবা... চোখ মুছতে মুছতে খালি গ্লাস নিয়ে অদৃশ্য হন খালা।
সকাল ছ'টার দিকে বেরিয়ে পড়ে শাহেদ। সুলতানপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ ধানী জমি পেরিয়ে তার পৈত্রিক নিবাস বাড়শ্রী গ্রামের পাশ দিয়ে একমাইলের মত হেঁটে গিয়ে বড় রাস্তার মোড়ে দাঁড়ালেই বাসে মিটফোর্ড হাসপাতাল মাত্র দুঘন্টার পথ। পৈতৃক ভিটার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল শাহেদ। পঁচিশ বছর পূর্বে বাড়িটি পুড়িয়ে দিয়েছিল পাক সেনারা। কয়েকটি পোড়া পিলার দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়াতে স্থানীয় দালালদের সহায়তায় তার বাপ, মা ও ভাইবোন শিরিন ও মাজেদকে ঘরবন্দী করে পুড়িয়ে মেরেছিল ওরা। বাড়ির সামনের বড় পুকুরটা পেরোলেই প্রতিবেশী হৈমপ্যাথিক ডাক্তার সদানন্দ বাবুর বাড়ি। ওনার একমাত্র মেয়ে জানকী ছিল তার ছোটবোন শিরিনের ক্লাসমেট। কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী তখন ওরা দুজন। শাহেদ তখন ঢাকা ভার্সিটির ছাত্র। একই রাতে জানকীর পিতা-মাতাকে হত্যা করে জানকীকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল নরপশুরা। সেই হতে জানকীর আর কোন পাত্তাই মিলেনি।
জানকীকে আজ ভীষণ মনে পড়ছে শাহেদের। ওদের বাগানে ফুটে থাকতো প্রচুর রক্তগোলাপ। প্রতিদিন সকালে একগুচ্ছ টাটকা গোলাপ নিয়ে হাজির হত সে। গানের গলা ছিল মোহনীয় বাঁশীর মত। সদানন্দবাবু একমাত্র মেয়েকে গড়তে চেয়েছিলেন মনের মত করে। কি গানে, কি লেখাপড়ায়! দুজন প্রাইভেট টিউটর লাগাই থাকত জানকীর জন্য।
দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে চলে শাহেদ। সাতটার বাস ধরতেই হবে। সৌদিতে তার প্লাস্টিকের হাত দিয়ে এসেছে। এ চিকিৎসা তাকে নিতেই হবে। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সহায়তায় তার নাম এক নম্বরে আছে। প্লাস্টিকের হাত হলে কব্জি পর্যন্ত সার্টের হাত মুড়ে নিলে দেখতে তেমন খারাপ লাগে না। কিন্তু হাত না থাকলে ফুল সার্টের হাত বাতাসের তালে তালে নাচার দৃশ্য নিষ্ঠুর ঠাট্টার মত মনে হয়।
অপেক্ষমান শাহেদ বাস আসা মাত্রই উঠে পড়ে। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই কালিগঞ্জ সেতুর কাছে এসে পড়ে বাসটি। মহাকালের সাক্ষী হয়ে সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে। এর সাথে জড়িয়ে আছে শাহেদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। জানালাপথে একদৃষ্টে চেয়ে আছে সে। নদীর বুক চিরে ভেসে যাচ্ছে কত শত নৌকা। এই সেতুর কাছাকাছি শাহেদ হারিয়েছিল তার ডান হাতটা। হাতের হাড়টি নিশ্চয়ই মাটির নিচে এতদিনে ফসিল হয়ে গেছে। নদী তীরে পড়ে থাকা সাকেরের লাশ পথিকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ব্রিজের লোহার খুঁটির সাথে বেঁধে রেখেছিল নরপশুরা।
মনে পড়ে সে রাতের কথা। রাতের অন্ধকার ভেদ করে পাশাপাশি হাঁটছিল ওরা দু’জন। গুরু গুরু শব্দে আকাশের বুক চিরে তখন বিজলী চমকাচ্ছিল। চারদিকে ঝড়ো হাওয়া। মুক্তিযুদ্ধের চরম মুহূর্ত। কোথাও জনমানুষের চিহ্ন নেই। রাতের অন্ধকারে একমাত্র হানাদার বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের এসাইনম্যান্ট অনুযায়ী চলাফেরা করে
ঝড়ো হাওয়ার ঝাপটা সামলাতে সামলাতে ওরা দু'জন শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছে নির্দিষ্ট জায়গায়। এখান হতে শুরু হবে অপারেশন। রাত পোহাবার আগেই কাজ সিদ্ধ করে পৌঁছতে হবে ক্যাম্পে। হেড কোয়ার্টারে অপেক্ষমান ফলোআপ কমিটি বসে আছে মিশন সফলের প্রতীক্ষায়। বিদ্যুতের আলোয় বয়ে চলা নদীটিকে মনে হচ্ছে দীর্ঘ এক সরীসৃপের মত। তিনশত মিটার দুরে কালিগঞ্জ সেতুটি অপেক্ষা করছিল এক মহাপ্রলয়ের
সেতুর দু'পাশে হানাদার বাহিনীর বাঙ্কার। কাঁধ হতে ভারি টি,এন,টি-র বাক্সটি নামায় দু’জন মিলে। যা রসদ আছে তা দিয়ে এ ধরনের দুটো সেতু উড়ে যাবে মুহূর্তে। চারিদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে নদীর কুল ঘেষে এগুতে থাকে দু’জন। রাত দুটোর পূর্বে টি,এন,টি-র বাক্সটি সেতুটির পিলারে বেঁধে রেখে আসতে হবে নির্দিষ্ট জায়গায়। তারপর সংকেত বাতি ক্রমান্বয়ে জ্বলে উঠবে একমাইল ভাটি হতে অপেক্ষমান দলের অন্যান্য তিনজন হতে। তিন নম্বর সংকেত পাওয়া মাত্র রিমোটকন্ট্রোলে টিপ দিলেই বিকট শব্দে তূলোর মত উড়ে যাবে সেতুটি এবং তৎসংলগ্ন বাঙ্কারের শত্রু সেনারা
নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কনুই এবং হাঁটুর উপর ভর করে একসময় দু’জন সেতুর কাছে এসে নদীপাড়ের কাঁশবনে কিছুক্ষণের জন্য জিরিয়ে নেয়। লক্ষ্যস্থানের দিকে দু'জন এঁকেবেঁকে এগিয়ে যায় টিকটিকির মত। অতি সন্তপর্ণে ওরা নেমে আসে কোমর পানিতে। সেতু সংলগ্ন বাঙ্কার হতে আকস্মিক গুলির আওয়াজ শুনে দু’জন দু’দিকে পজিশন নেয় তড়িৎ গতিতে। কোমর হতে একটি করে হ্যান্ড গ্রেনেড মুখের কাছে নিয়ে দাঁত দিয়ে সেফটি পিন চেপে ধরে। চারটি গ্রেনেডের মধ্যে তিনটি ব্যবহার করতে হবে শত্রু নিপাত করতে, আর অবশিষ্ট একটি আত্মসমর্পণ না করে প্রয়োজনে নিজেদের উড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা হিসাবে। কিন্তু না, আর গুলি হয়নি। শত্রুরা সতর্কতামূলক ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে
অতি সাবধানে এবারে ওরা এগিয়ে যায় সেতুর পিলার বরাবর। দু’মিনিট প্রতীক্ষার পর পিলারের কাছে একজন আরেকজনের কাঁধে উঠে। নিচের জন আস্তে করে টি,এন,টি-র বাক্সটি এগিয়ে দেয়। পিলার ভীম হতে বেরিয়ে আসা লোহার রডে শক্ত করে বাক্সটি বেঁধে উপরের জন সাথীর কাঁধের উপর ভর করে আস্তে আস্তে নেমে আসে।
নদীর কূলে উঠার প্রস্তুতি নিতেই আকস্মিক টর্চ লাইটের তীব্র আলোয় তাদের দু’জনের চোখ ঝলসে যায়। গুরুগম্ভীর আদেশ - হ্যান্ডস আপ...। সাকেরের হাত মুহূর্তে কোমরে বাঁধা হ্যান্ডগ্রেনেড স্পর্শ করা মাত্রই শা করে একটি বুলেট ওর বক্ষ ভেদ করে চলে যায়। ধপাশ করে তার দেহ নদীবক্ষে লুটিয়ে পড়ে। চোখের পলকে নদীবক্ষে ঝাপ দেয়ার পুর্বেই শাহেদের হাতের কনুইতে এসে লাগে দ্বিতীয় বুলেট। ভেসে আসা কচুরিপানা মাথায় দিয়ে ভাসতে ভাসতে নদীর ওপারে এসে পৌঁছে শাহেদ। উঠতে গিয়ে এই প্রথমে অনুভব করে ডান হাতটি কনুই ch©šÍ সামান্য চামড়ার সাথে ঝুলে আছে। প্রচুর রক্তক্ষরণে শরীরটা অবশ হয়ে আসছে। কোনরকম নদীপারে পৌঁছে প্রাণপণে দৌঁড়াতে থাকে দলের অন্যান্যদের অবস্থান লক্ষ্য করে। বা হাতে পকেট হতে ধারালো চাকু বের করে ঝুলে থাকা হাতটি কেটে দেয়।
প্রায় পঞ্চাশ মিটার দুরে প্রথম সংকেত বাতি জ্বলে উঠে আকাশের গায়ে। অসহ্য যন্ত্রণায় চীৎকার করে উঠে শাহেদ - রহিম ভাই! লালা ভাই। আর পারছিনা, আমাকে ধর, সাকের নেই। আমিও হয়ত কিছুক্ষণের জন্য আছি। এক আর্তচিৎকারের মধ্য দিয়ে জ্ঞান হারায় শাহেদ।
কেমন করে ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে এই পুনা হাসপাতালের বেডে এসে পৌঁছলো তা আজও জানতে পারেনি শাহেদ। তিনদিন পর জ্ঞান ফিরে আসতেই দেখতে পেল কনুই পর্যন্ত প্লাস্টিকের হাত লাগানো। দীর্ঘ চারমাস হাসপাতালে থেকে একসময় ছাড়পত্র পায়।
একাত্তরের ১৩ই ডিসেম্বর অনেক শরণার্থীর সাথে সীমান্ত অতিক্রম করে মার্তৃভূমিতে পা রাখে সে। ১৬ই ডিসেম্বর,'৭১ সাল। দেশ শত্রুমুক্ত। পাকসেনারা আত্মসমর্পণ করেছে। শাহেদ ফিরে আসে নিজ গ্রামে। স্থানীয় হাইস্কুলে বিশেষ অনুষ্ঠান ডেকে তাকে বীরের মর্যাদা দিয়ে বরণ করে নেয় গ্রামবাসী। ৭০-এর নির্বাচনে জয়ী জাতীয় সংসদ সদস্য হাফেজ পাটোয়ারী উদাত্ত কণ্ঠে বলেন - ভাইসব, আপনাদের সামনে আজ এ শুভক্ষণে যাকে দেখতে পাচ্ছেন সে এই গ্রামেরই কৃতীসন্তান। একজন আত্মত্যাগী মুক্তিযোদ্ধা। দেশকে বাঁচাতে গিয়ে পিতামাতা, ভাইবোন এমনকি নিজের হাতটি পর্যন্ত হারিয়েছে। তার মত মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। আমরা কি সারাজীবন ওকে আমাদের মাথায় তুলে রাখতে পারি না? আমাদের শাহেদ হাত হারিয়েছে সত্য, কিন্তু দেখিয়েছে দেশপ্রেম আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
হাজার হাজার গ্রামবাসীর করতালীর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল সভার কাজ। শাহেদকে কাঁধে তুলে গ্রামবাসীরা সমস্ত বাজার ঘুরিয়ে এনেছিল সেদিন। সব হারানোর বেদনার মাঝেও সেদিন শাহেদ খুঁজে পেয়েছিল এক অপূর্ব প্রশান্তি। বুকখানা গর্বে ফুলে উঠেছিল তার। যে মাটির ঘাসপাতায় গড়াগড়ি খেয়ে সে বড় হয়েছে সে মাটিকে মুক্ত করতে গিয়েই তাকে হারাতে হয়েছে অনেক, কিন্তু সে হেরে যায় নি। প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে গিয়ে সে প্রমাণ করেছে দেশ মার্তৃকার সে একজন সুযোগ্য সন্তান।
এরপরের ঘটনা অত্যন্ত দুর্বিসহ। শাহেদের চোখের সামনে কত লোকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে, রচিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরত্বগাঁথা। হাফেজ পাটোয়ারী প্রতিমন্ত্রী হলেন। সম্মানজনক উপায়ে বেঁচে থাকার জন্য শাহেদ সরকারি প্রাইমারী স্কুলের মাস্টারির জন্য হাফেজ পাটোয়ারীর স্মরণাপন্ন হতে গিয়ে দারোয়ানের গলাধাক্কা খেয়ে সচিবালয় থেকে ফিরে এসেছিল নিরাশ হয়ে। যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের নয়মাস লুটের টাকা দিয়ে পরদেশে ফুর্তি করে কাটিয়েছে তাদের অনেকেই পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বড় বড় সনদ, সরকারি বড় বড় পদ। সে স্বাধীনতার চেতনা দেখেছে, লাখো মানুষের চোখের গভীরে মুক্তির কামনা দেখেছে। স্বাধীনতার জন্য লক্ষ লক্ষ লোককে অকাতরে প্রাণ দিতে দেখেছে আবার এটাও দেখেছে কিভাবে দেশের কোটি কোটি টাকার সম্পদ পাচার হয়েছে। দেশের ধ্বজাধারীরা স্বাধীনতার সুফল নিয়ে কিভাবে নিজেদের ভাগ্য গড়েছে। অত্যাচার, অনাচার আর ভুখানাঙ্গা মানুষের আহাজারী, কুকুর এবং মানুষের সহবস্থান, একমুঠো ভাতের জন্য যুবতী মেয়ের নির্দিধায় দেহ দান এসমস্ত দেখে দেখে শাহেদের মন যখন তীব্র দহনে জ্বলছিল তখনই এক বন্ধুর সহায়তায় সে সৌদিতে যায়। অভিশপ্ত হাতের জন্য কয়েকটি চাকরির অফার পেয়েও করতে না পারার ব্যথা নিয়ে বাধ্য হয়ে ফেরীওয়ালা সেজে রুটিরুজির পথ বেছে নেয় কিন্তু শেষ রক্ষা হলনা।
বাস কন্ডাক্টরের ডাকে সম্বিত ফিরে পায় শাহেদ। নেমে পড়ে হাসপাতালের সামনের বড় রাস্তার মোড়ে। সকাল ন'টায় রিসিপশনে কাগজ দাখিলের কথা। এমনিতেই আধঘন্টা দেরি হয়ে গেছে। পকেট হতে বামহাতে এ্যাপয়েন্টম্যান্ট লেটার বের করে রিসিপশন কাউন্টারের দিকে এগিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে শাহেদের ডাক পড়ে। অপারেশন থিয়েটারের দিকে অগ্রসরমান শাহেদের হৃৎপিণ্ড আশা নিরাশার দোলায় দুলে উঠে। জার্মান প্লাস্টিক সার্জনদের উপর তার আস্থা অনেক। ওরাই প্লাস্টিক সার্জারির জন্মদাতা। নিশ্চয়ই হাতখানাকে দেখতে অরিজিনাল মনে হবে। এক অজানা আবেগে দোল খায় তার দেহমন।
এক সপ্তাহ হাসপাতাল বেডে অবস্থানের পর আজ শাহেদের ছুটি নেয়ার পালা। ডান হাতের কনুইয়ের সাথে পুনরায় প্লাস্টিকের হাত জুড়ে দেয়া হয়েছে। দেখে বুঝাই যায় না এটা নকল। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নকল হাতখানাকে দেখে শাহেদ। খালা নিশ্চয়ই দেখে খুশি হবেন তবে বিয়ের জন্য যে উঠেপড়ে লেগে যাবেন এটা সুনিশ্চিত। হাসি পায় শাহেদের। বিয়ে দিতে পারলেই যেন খালার চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার পাবে।
আকস্মিক তন্ময়তা কেটে যায় শাহেদের কারো পদশব্দে। ভূত দেখার মতই চমকে উঠে। একি সম্ভব ? ভুল দেখছি নাতো? নাকি স্মৃতি রোমন্থন তাকে হিপনোটাইজ করেছে? সেই সরল মুখের উপর ভাসছে ডাগর ডাগর চোখ। একরাশ কাল চুলের গভীরে ক্লিপআঁটা নার্সের সাদা বেল্ট। ভাষাহীন শাহেদ অপলক নেত্রে চেয়ে থাকে আগন্তকের দিকে। অপর প্রান্ত হতে একই অভিব্যক্তি ! আশ্চর্যান্বিত দৃষ্টিতে দু’জন একে অপরের পানে অপলক নেত্রে চেয়ে থাকে। ভাষার পাখি যেন বোবা হয়ে ওড়াল মেরেছে বিস্তৃত মহাশূন্যে। নার্সের হাত থেকে খসে পড়ে ওষুধের বোতল। গোলাপী রংয়ের ওষুধ মেঝেতে গোলাপী রং ছড়ায়।
তুমি এখানে ? ভুল দেখছিনাতো? বিড় বিড় করে বলে উঠে শাহেদ।
শাহেদ, তুমি না মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলে? তাহলে কি আমি ভুল শুনেছিলাম?
শহীদ হলে কি এখানে দেখতে পেতে ? তবে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিল আমার এ ডান হাতটা
এতদিন কোথায় ছিলে?
বাংলার বুকে ভুখানাঙ্গা মানুষের মিছিল এবং সীমাহীন অন্যায় অবিচার সহ্য না করতে পেরে দশ বছর আগে চলে যাই সৌদিতে। অক্ষমতার জন্য ধরা পড়ে ফিরে আসি দেশে। আর এখন তেমার সামনে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি প্লাস্টিকের হাত নিয়ে।
জানতে পারি তুমি এতদিন কোথায় ছিলে?
শাহেদ, আমি জানকীর প্রেতাত্মা। জানকী কবে মরে গেছে সে দিন যেদিন নরপশুরা আমার সামনে আমার বাবা মাকে হত্যা করে আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে এসেছিল তাদের বাঙ্কারে। ওখানে আমাকে চারমাস ওরা পুষে রেখেছিল নিজেদের প্রয়োজনে। মৃত্যু কামনা করেছি বার বার, কিন্তু আমাকে মরতে দেয়নি ওরা। একটানা চারমাস বাঙ্কারে বন্দী জীবন কাটানোর পর হঠাৎ একদিন সকালে শুনতে পেলাম হাজারো মানুষের বিজয়োল্লাস। বাঙ্কার হতে কোনরকমে উঠে যখন দেখলাম কাছে কেউ নেই, মৃত্যুর প্রচণ্ড সুযোগ আমার দুয়ারে উপস্থিত তখনই দৌড়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছি - আর কিছুই মনে নেই।
জ্ঞান ফিরতেই দেখি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। স্থানীয় নের্তৃবৃন্দ এসে আমাকে বীরাঙ্গনা' উপাধিতে ভূষিত করলেন এবং সাথে সাথে হাসপাতালের চাকরিটাও পেয়ে গেলাম। আর্তের সেবায় জীবনটা কাটিয়ে দেয়ার জন্য যেন নতুন করে জন্ম নিলাম। সে হতে আজও আছি।
বিয়ে করনি?
বিয়ে ? আমার মত অস্পৃশ্যাকে কে বিয়ে করবে শুনি? আর কেনই বা বিয়ে করতে যাব? বললামতো তোমাদের সেই পূতপবিত্র জানকীর মৃত্যু হয়ে গেছে আজ হতে পঁচিশ বছর পূর্বে। আমার কোন পরিচয় নেই, ধর্ম নেই। জানকীর এই দেহমন শুধু রোগীদের তরে নিবেদিত। একটু অন্যমনস্ক হয়ে জানকী বলে, এতক্ষণ শুধু নিজের কথাই বললাম স্বার্থপরের মত। তোমার ব্যাপারে কিছুই জানা হয়নি – তোমার বউ অর্থাৎ ভাবী কোথায় ?
ভা-বী? সে তো সুস্থ মানুষের জন্য। আতুড় অনাথের কাছে কে মেয়ে বিয়ে দেবে বল?
বিয়ে করে সংসারী হওনি কেন? তুমিতো আর আমার মত নও। সমাজ তোমাকে মাখায় তুলে রেখেছে
জীবনের সূর্য একদিন অস্তমিত হয়ে যাবে, সেদিনতো আর বেশী দুরে নেই। তার চেয়ে কি এইভাল নয়, যে চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম সে চেতনা বুকে পোষণ করে দেশপ্রেমিক কিছু মানুষ গড়ি?
শাহেদের কথা শুনে জানকীর চোখ বেয়ে নেমে আসে প্রবল অশ্রুধারা। এ অশ্রুতো অনেক আগেই শুকিয়ে গিয়েছিল, আজ তবে এমন হল কেন? চোখ মুছতে গিয়ে চোখের প্লাবন থামাতে পারে না জানকী। অশান্ত ঢেউয়ের মত তা আছড়ে পড়ে চোখের দু’'কূল বেয়ে
জানকী! তুমি কাঁদছ? কেন, কোন দুঃখে? শাহেদ জানকীর মৌনতা ভাঙ্গার প্রয়াস চালায়।
হঠাৎ জানকী আড়ষ্ট কন্ঠে বলে উঠে তোমাকে আজ দেশের বড়ই প্রয়োজন শাহেদ। ভাবছি, আমার জীবনের বিনিময়ে বিধাতা যদি তোমার এ হাতটি ফিরিয়ে দিতেন তাহলে আমার মত সুখী আর কেউ হতোনা।
কিছুক্ষণ জানকীর দিকে তাকিয়ে শাহেদ বলে উঠে, হাসপাতালের বাগানে কত গোলাপ ফুটেছে। ওরাতো সুন্দরের জন্য ফুটে, তাই না? মনে পড়ে তোমার পঁচিশ বছর আগের কথা? তোমাদের বাগানে প্রচুর রক্তগোলাপ ফুটতো। প্রতিদিন সকালে টকটকে লাল এক সাঝি ফুল আমার পড়ার টেবিলে রেখে যেতে, কি মনে নেই ?
আছে। তুমি না গোলাপ খুবই ভালবাসতে?
শুধু ফুল নয়, যে ফুল রেখে যেতে গিয়ে অনেকসময় ধরা পড়ে হাসতে হাসতে পালিয়ে যেত তার চলার ছন্দকেও কি কম? সে দিনগুলোতো কবে বাসী হয়ে গেছে, তাই না? একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে শাহেদের বুকের গভীর হতে।
তাই নাকি? যে প্রতিদিন সাতসকালে গোলাপ দিয়ে যেত সে কেন তোমাকে স্মরণ করত তা কোনদিন জিজ্ঞেস করেছিলে? আর স্মৃতি কোনদিন বাসী হয় না। এমনও কিছু স্মৃতি মানুষকে ভাবায় যা জীবনভর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করে। তুমি আমার কাছে এ ধরনেরই একটি স্মৃতি।
ঠিকই বলেছ জানকী। সেই টাটকা গোলাপের মত তুমিও আমার স্মৃতিতে অদ্যাবধি সুগন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছ, এতটুকু ম্লান হওনি। জীবনের মধ্যাকাশে দাঁড়িয়ে আজও সেই স্মৃতি আমাকে সময় সময় কাঁদায়। এ গভীর স্মৃতিগুলো যেন খোদিত হয়ে আছে হৃদয়ের ঝকঝকে মার্বেলে - একে মুছে ফেলার সাধ্যি কোথায়?
কেন এমন হল শাহেদ? কি পাপে আমাদের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল? সেই কবে তোমাকে সাতসকালে একগুচ্ছ গোলাপ তোমার টেবিলে রেখে আসার প্রত্যাশায় প্রত্যুষে ঘুম ভাঙতো, যেদিন দিতে পারতামনা সেদিন আমার মন খুব খারাপ হয়ে যেত। আর আজ যে জানকী তোমার সামনে দাঁড়িয়ে সে শুকনো ডালে পাপড়ি ঝরা গোলাপের কান্না। দু’'হাতে মুখ ঢাকে জানকী।
শাহেদ এগিয়ে এসে জানকীর মাথা উঁচু করে ধরে বলে, জান, হাসপাতালে আসার প্রাক্কালে তোমাদের বাড়ি যখন অতিক্রম করছিলাম তখন তোমার কথা মনে করে খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। আমি জানতাম তুমি বেঁচে নেই। কি অদ্ভুত যোগাযোগ!
আর আজ সকালে আমাকে এ ওয়ার্ডে বদলি করা হয় সে কি তোমার সাথে দেখা হবে বলে? অশ্রুসিক্ত জানকী অস্পষ্ট ভাষায় বলে উঠে।
এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই জানকী। তবে এ পৃথীবিতে অনেক কিছুই ঘটে যায় যা মানুষ পূর্বে কখনো জানে না। জান, আমার হাতে প্রচণ্ড শক্তি পাচ্ছি এ মুহূর্তে। মাসখানেক যাবত স্কুলের সেক্রেটারি পিছনে লেগে আছেন। দেরি করছিলাম শুধু এ হাতটার জন্য। ভাবছি জয়েন করব। দেশের জন্য উত্তরসূরীদের মধ্য হতে কিছু দেশপ্রেমিক সৃষ্টি করতে হবে। দেশে ফেরার পর এটির বড় অভাব অনুভব করছি।
যাবে জানকী? যাবে আমার সাথে? আমাদের দু’জনের মিলিত শক্তি দিয়ে কি পারবনা উভয়ের জীবনের ব্রতকে সত্যিকার রূপ দিতে? ভবিষ্যতে তোমার এবং আমার বাড়ির জায়গা একত্র করে একটি হাইস্কুল নিজেদের মত সাজিয়ে আমাদের উত্তরসূরীদের জন্য গড়ে তুলব দেশপ্রেমিক wkwÿZ এক যুবসম্প্রদায়। দেশকে যারা আগামী দিনে নের্তৃত্ব দেবে, গড়ে তুলবে আমাদের ঘুণে ধরা সমাজের বুকে এক আদর্শ সমাজব্যবস্থা। দুর্নীতি দমন করে প্রতিষ্ঠা করবে ন্যায়বিচারের মানদন্ড, শাহেদের চোখমুখে ফুটে উঠে এক গভীর আত্মপ্রত্যয়।
এগিয়ে এসে জানকী শাহেদের ডান হাতখানা নিজের হাতের মুঠোয় তুলে নিয়ে বলে, তোমার ডান হাত নেই, কিন্তু আমারতো আছে। আমার এ হাতকে কাজে লাগাও শাহেদ তোমার যত্ত খুশি। একবার পরীক্ষা করে দেখ জানকীর এ হাত শাহেদের ডানহাতের প্রয়োজন মেটাতে পারে কিনা? তবে তোমার পবিত্র বুকে ঠাঁই দেয়ার আগে আমাকে ধূঁয়ে মুছে পবিত্র করে নাও। গঙ্গাজল দিয়ে পবিত্র হতে চেয়েছিলাম মানসিক শান্তির জন্য কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল গঙ্গাজলতো পবিত্র হতে পারেনা কারণ এ নদী দিয়ে ভেসে যায় খুনের লাশ, বৈর্জ্য,পশুপক্ষীর লাশ, অবৈধ সন্তান কিংবা চিতার ভষ্ম। পত্রিকায় পড়েছি পৃথিবীর সবচে দুষিত নদী এ গঙ্গা। মানুষ প্রতিনিয়ত একে অপবিত্র করছে। তাই এতদিন ধরে আশা পোষণ করে আসছিলাম যদি পবিত্র জমজমের জল পেতাম তাহলে স্নান করে পবিত্র হতে পারতাম কারণ বর্তমান বিশ্বে একমাত্র বিশুদ্ধ জলের উৎস স্রষ্টার বিস্ময়কর সৃষ্টি জমজমের কূপের জল।
জানকীর চোখের তারায় শাহেদ খুঁজে পায় এক স্বপ্নিল ভবিষ্যৎ। বলে, তোমার মানসিক শান্তির জন্য তোমার ইচ্ছা পূর্ণ হবে। তুমিতো কোন দোষ করনি? তুমি সবসময়ই আকাশের ধ্রুব তারার মতই উজ্জ্বল এবং জমজমের পানির মতই পবিত্র যে কূপের পানির উৎস মানুষ বা পশুর স্পর্শের বাইরে। সৌদি হতে ফেরার সেময় ত্রিশ লিটার জমজমের পানির জার নিয়ে এসেছিলাম। সে পানিতে গোসল করে তোমার মনের গ্লানি দুর করতে চাইলে করবে কিন্তু এতসব আয়োজনের প্রয়োজন আছে কি? তুমি আমার কাছে সবসময়ই নিষ্পাপ ফুলের মতই পবিত্র।
ওর দীঘল কেশরাশিতে বিলি কেটে দিতে দিতে বলে - কলেজে পড়তে তোমার যে গানটি একসময় আমাকে তন্ময় করে দিত, সে গানটি তোমার মনে আছে জানকী? ঐ যে .. ক্লান্তি আমার ক্ষমা কর প্রভু.......।
অশ্রুসিক্ত জানকী শাহেদের বুকে মাথা রেখে গুণ গুণ করে সুর ধরে হৃদয়ের সমস্ত আবেগ মিশিয়ে ..... ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু ....পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু......।
শাহেদের বুকে ঢেউ খেলে যায় এক বিচিত্র অনুভূতি। যে অনুভূতি পূর্বে সে কখনো অনুভব করেনি, আজ তা বহুকাল পরে এই নিভৃত পরিবেশে তার হৃদয় বীণায় সুরের গুঞ্জন ছড়াচ্ছে থেকে থেকে। জানকীকে চেপে ধরে আর জোরে বুকের গভীরে। নিবিড় এ পরশে জানকী চোখ মুদে পরমতৃপ্তিতে। বিশ্বাসের গভীরে দু’Õজনার নিঃশ্বাস বন্দী হয়ে শিহরিত হয় চরম পুলকে।
পর্দার ফাঁক দিয়ে জানালার কাঁচ ভেদ করে শাহেদের চোখ দু’Õটো হাসপাতালের পুষ্পিত গোলাপকুঞ্জে খুঁজতে থাকে পঁচিশ বছর আগের সেই চপলা, চঞ্চলা জানকীর সুকোমল মুখায়োবব। শিশিরসিক্ত একগুচ্ছ তাজা গোলাপ প্রতিদিন ভোরে ভালবাসার cÖZxK হিসাবে যে উপহার দিয়ে যেত। মন তার জানকীকে নিয়ে প্রজাপতির মত উড়তে থাকে gy³ বিহঙ্গের মত যেখানে ভালবাসার মৃত্যু নেই, শুধুই সৌরভ ছড়ায় নিজস্ব স্বকীয়তায়।
======================
No comments:
Post a Comment
What do you think?