Friday, November 12, 2021

স্বর্ণমৃগ

          স্বর্ণমৃগ       

  গুলশান চৌধুরী


হজ্ব টার্মিনাল আবার সরগরম হজ্ব শেষে বিদায়ী হাজীবৃন্দের এখন যার যার দেশে ফেরার পালা মিনিটে মিনিটে আসা বাসের বহর থেকে দলে দলে এখানে নামছে সবাই নীড়েফেরা পাখির মত শত শত বিমান একে একে উড়াল দিচ্ছে একেক দেশের হাজার হাজার হাজী নিয়ে আরো কিছু ফ্লাইট বাকি কয়েক দিনের মধ্যে ওদের পালা শেষ হলে শেষ হবে ক্লিনারদের প্রাণান্ত খাটুনি এরপর সুনসান নিরবতা নেমে আসবে টার্মিনাল চত্বরে

আজকের মত ডিউটি শেষ ক্লান্ত দেহ নিয়ে বসে আছে মারুফ অপেক্ষা করছে পরের শিফটের ক্লিনারদের ক্যাম্পের বাস ওদেরকে নামিয়ে দেবে আর মারুফদেরকে নিয়ে পৌঁছে দেবে মেসের সামনে

মপ ঠেলতে ঠেলতে রাগী চেহারা নিয়ে কাছে আসে সুরুয মিয়া বলে, মারুফ ভাই, শ্রীলংকান বেটা কী কয় শুনেছেন?

মারুফ মাথা নাড়ে সুরুয বলে, শালায় কয় কি, এই হজ্ব টার্মিনাল যে, ইঞ্জিনীয়ার এফ আর খানের নকশা দিয়ে বানানো, উনি নাকি বাংলাদেশী না আমার সাথে বাজি ধরে বলে কি, এফ আর খান তো, খান খান বংশ শুধুমাত্র ইন্ডিয়া পাকিস্তানেই আছে যেমন, ইমরান খান, শাহরুখ খান, আমির খান সো, উনি ইন্ডিয়ান অথবা পাকিস্তানি 

‘বাজিতে সে হারবেই নূতন এসেছে তো জানেনা।’

ভালমত জানিয়ে দেন তো ডাকব ওকে?’

‘আরে নাহ্ কাইজ্যা করে লাভ নেই নিজেই একদিন জানবে লজ্জাও পাবে।’

সুরুয মিয়া এমনই নিজে যাই হোক, নিজের দেশ বা দেশবাসী সম্পর্কে একটু ত্যাড়া কথা শুনলে মাথা গরম করে ফেলে তুমুল ঝগড়া করতেও ছাড়েনা

মারুফের আশ্বাসে গরম মাথা ঠান্ডা করে বলে,  হুম সেদিন ওর মুখটা আমি দেখে নেব আসি

কাজ শেষ হয়নি?’   

হা, প্রায় শেষ শুধু ওয়াশরুমটা বাকি ভেতরে একজন হাজী আছেন ওয়েট করছি উনি বের হলেই শেষ

সুরুযের কথা শেষ না হতেই শোরগোল শোনা যায় ওয়াশরুমের দিক থেকে সেই হাজী হঠাৎ বেসিনের সামনে স্ট্রোক করে পড়ে গিয়ে মারাই গেলেন আঘাত লাগা কপালের রক্ত আর মেডিকেল ক্যাম্পের লোকজনের জুতার দাগে পুরো ওয়াশরুমের যা তা অবস্থা 

মারুফদের কাছে এমন ঘটনা নূতন কিছু না প্রতিবছর হজে¦ সময় দুএকজন অসুস্থ বয়স্ক হাজী মারা যান স্বদেশের মাটিতে তাদের আর ফেরা হয়না নিষ্পাপ নিষ্প্রাণ দেহ আশ্রয় নেয় এদেশের মাটির নীচে কিন্তু তরুণ ভদ্রলোকের হঠাৎ মৃত্যুটা কেমন যেন অন্যরকম 

অল্পক্ষণের মধ্যে এ্যাম্বুলেন্স এসে লাশ নিয়ে গেলে স্বাভাবিক হয়ে আসে চারপাশের পরিস্থিতি মারুফ আগের জায়গায় বসে ভাবতে থাকে দেশের কথা মুহররম মাসের পর হজ্বডিউটি ক্লোজড হয়ে গেলে ছুটি পাবার সম্ভাবনা দেশে যাবে দুমাসের জন্য  বেতন-বোনাস পেয়ে মারুফ তার বিয়ের সরঞ্জাম কেনাকাটা করবে সুরুয তার পরিবারের জন্য লিস্ট করে রেখেছে আগে থেকেই দুজনে একসাথেই শপিং করবে এই তো আর টা দিন বাকি

মারুফের চোখ যখন তার দীর্ঘ দুই বছরের লালিত স্বপ্নের রাজকন্যার দিকে, সুরুযের চোখ তখন টয়লেটের ভেতরে দরজায় ঝুলানো সেই সদ্যপ্রয়াত হাজীর ফেলে যাওয়া ছোট ব্যাগের দিকে ব্যাগের ভেতর মখমলের ছোট পুটলিতে বেশ কয়েকটা সোনার কয়েন হজ্ব শেষে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের সময় কেউ কেউ সৌদিআরব থেকে যৎসামান্য স্বর্ণালংকার কিনে নিয়ে যায় আপনজনের জন্য গিফট বা হজ্বের পবিত্র স্মৃতি হিসেবে কিন্তু ইনি কিনেছেন স্বর্ণমুদ্রা কেন, কে জানে? হয়ত ব্যবসার জন্য সুরুযের চোখ ধাঁধিয়ে চকচকে কয়েনগুলো ওর পকেটে ঢুকে পড়ে বাকি জিনিসসহ ব্যাগটা জমা হয় অফিসে

মেসে ফিরতেই হঠাৎ করে সুরুযের ভয়ানক অবস্থা জ্বরের ঘোরে বার বার বেহুঁশ হচ্ছে মেসের স্বদেশী বিদেশী কলিগরা দেখতে এসে দরদী কন্ঠে বলে, চোখের সামনে ওযাশরুমে এমন একটা মৃত্যুর ঘটনার চাপ কিছুতেই নিতে পারছেনা ওকে মর্নিং শিফটে যেতে না দেওয়াই ভাল আমরা সুপাভাইজারকে বলে রাখব

ওরা রুম থেকে চলে গেলে সুরুয মারুফের হাত ধরে বলে, আমার কি হবে রে, ভাই হাতকাটা যাবে? কেউ দেখে ফেলেনি তো?

মনে তো হয়না

কিন্তু ঐযে, সিসি ক্যামেরা না কি যেন বলে, ওতে যদি দেখা যায়? খবর হয়ে গেলে তো সোজা হাতকাটা সবাই বলবে, ছি ছি --- এই বুঝি এফ আর খানের দেশের মানুষ! আর শ্রীলংকান বেটার কাছে, বলতে গেলে হেরে গেলাম, মারুফভাই

শান্ত হোন ওয়াশরুমে সিসি ক্যামেরা থাকে না নিশ্চিন্ত থাকেন কিন্তু কাজ আপনি করতে গেলেন কেন?’

জানি নারে ভাই বড় শয়তানে ধরেছিল হাজীদের উচিত আমার উপরই কংকর মারা এই  চিজগুলো এখন কি করব, বলেন তো?’

গরীবদেরকে দান করে ল্যাটা চুকিয়ে ফেলবেন

সে তো পরের কথা এখন কি করব? কেউ এসে যদি দেখে?’

সবাই ডিউটিতে যাচ্ছে আপাতত কেউ আসবে না আসলেও কেউ আপনার সুটকেস ঘাটাঘাটি করবে না দরজা বন্ধ করে দোয়া পড়তে পড়তে ঘুমান সাবধান, বিষয়টা কিন্তু আপনার-আমার মধ্যেই থাকলো কারো সাথে শেয়ার করবেন না আর, আমি না আসা পর্যন্ত ঘর থেকে বেরোবেন না

মর্নিং শিফটে সুরুযের ছুটি মঞ্জুর হয়েছে মারুফ ওকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে ডিউটিতে গিয়েছিল ওখান থেকেই খবর পায়, আলুথালু বেশে সুরুয সিগারেট কিনতে বেরিয়েছিল আনমনা হয়ে রাস্তা ক্রস করতে গিয়ে গাড়ির ধাক্কায় মারাত্মকভাবে আহত এখন কিং ফাহাদ হাসপাতালে

আইসিইউতে দেখা করার উপায় নেই হাসপাতালের বাঙালি ডাক্তার মতিউর রহমানের কাছে ছুটে যায় মারুফ উনি বললেন, অবস্থা এক্সট্রিম পর্যায়ে বাঁচার আশা শতকরা এক ভাগ বাঁচলেও অন্ধ হয়ে থাকতে হবে অবস্থায় এখনই দেশে তার পরিবারের কাছে খবর পাঠানো উচিত আর, মারা গেলে লাশ দেশে যাবে, নাকি এদেশে দাফন করতে হবে তারও এজাজত নিতে হবে   

দেরি না করে সুরুযের ডাইরি থেকে তার বড়ভাই ফিরোজের নাম্বার নিয়ে কল দেয় মারুফ

হ্যালো, আপনি কি ফিরোজ ভাই?’

হা আপনি ?’

আমি কায়া ক্যাম্প থেকে মারুফ

কায়া মানে ?’

কে আই - কায়া মানে কিং আব্দুল আজীজ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট

বুঝেছি আমার ভাই সুরুয তো ওখানেই চাকরি করে চিনেন ?’

জ্বী, আমার কলিগ ওর কথা বলার জন্যই ফোন করলাম

মারুফ ডাক্তার মতিউর রহমানের কথাগুলো জানায় এরপর সুরুযের স্ত্রী তামান্নার নাম্বারে কল দেয় বুঝতে পারে, মোবাইল এখন ওর শাশুড়ি ব্যবহার করেন রাগত স্বরে বললেন, বেয়াদব বেটি এক বছর ধরে বাপের বাড়ি ওর বাপের কাছ থেকেই ওর খবর নাও না বাপু

মারুফ আর কথা বাড়াল না সুরুযের খবর জানাতেও ইচ্ছে করল না যা বলার বড় ছেলেই বলুক

শোকের ধাক্কা কাটিয়ে উঠার পর বড় তিন ভাই শারীরিক আর্থিক দুর্বলতার ওজর পেশ করে বলে, এয়ারপোর্ট থেকে লাশ আনার মত ঝক্কি-ঝামেলার মোকাবেলা করা বা টাকা জোগাড় করা কোনটাই সম্ভব না মারা গেলে লাশ যেন ওখানেই দাফন করা হয়

মারুফ আহত স্বরে ফিরোজকে বলে, কি বলেন ভাইজান ? এখনো তো বেঁচে আছে মরে তো আর যায়নি  বেঁচে থাকলে তাকে দেশেই যেতে হবে যেহেতু চাকরি বাকরি আর সম্ভব না

তাহলে তামান্নার বাপের বাড়ি যাবে অসুস্থ স্বামীর খেদমত করা স্ত্রীর জন্য ফরয তাছাড়া সব টাকা তো সুরুয ওখানেই ঢালে তিন মাস ধরে আমাদের কাছে টাকা পাঠায় না কোথায় পাব এত টাকা ?’

ওকে কিন্তু ভুল বুঝলেন, ভাইজান দেশে আসবে বলে গাধার মত দিনরাত খেটে সবার জন্য টাকা জমাচ্ছিল তিন মাস ধরে ভাবীকেও টাকা দিচ্ছিল না যাকগে এটা আপনাদের পারিবারিক ব্যাপার সুরুযের খবর জানানোটা আমার দায়িত্ব ছিল, জানিয়েছি বাকিটা আপনারা বুঝবেন 

সুরুযকে সৌদি আরবের কবরে শুইয়ে  দেশে এসেছে মারুফ তামান্নার সাথে দেখা করা দরকার দুবছরের ছেলে নিয়ে বাবার বাসায় থাকে ভালই হল শ্বশুরবাড়ির ধুরন্ধর সদস্যদের অগোচরে সুরুযের ওযেজআর্নার স্কীমের কাগজপত্র, ব্যাঙ্কের চেকবই আর স্বর্ণমুদ্রার পুটলি বুঝিয়ে দিতে পারবে তারপর দেখা করবে সুরুযের মার সাথে কোম্পানি থেকে পাওয়া ইনডেমনিটি মৃত্যুজনিত কমপেনসেশনের টাকার উনিও একজন ওয়ারিশ তাকে ফোন করে বলবে, নির্ধারিত সময়ে যেন উনি তামান্নার বাবার বাড়িতে চলে আসেন  ওনাদের গ্রামের বাড়ি যাওয়া ওর পক্ষে সম্ভব না।

তামান্না শক্ত মনে শোকার্ত দিনগুলো কাটাচ্ছে মারুফের সামনেও আসছে না ড্রয়িংরুমের পর্দার ওপাশে বসে কথা বলছে ওর বাবার মাধ্যমে স্যুটকেসের সবকিছু বুঝিয়ে দেয় মারুফ স্বর্ণমুদ্রার রহস্যটা চেপে রেখেছে অকূলপাথারে ভাসমান সদ্যবিধবার মনে সুরুযের প্রতি কোনো ঘৃণা জন্মাতে দেবেনা খানিকটা অস্বস্তি নিয়ে সব শেষে স্বর্ণমুদ্রার পুটলি পাঠাতেই ফেরৎ দিয়ে ভারাক্রান্ত গলায় তামান্না বলে, ভাই, আপনার ঋণ জীবনেও শোধ করার মত না কিন্তু একটা অনুরোধ আপনি আমাকে এগুলো নিতে বলবেন না স্বামী যেখানে নেই, স্বর্ণ দিয়ে আমি কি করব?

মারুফ তো এটাই শুনতে চেয়েছিল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তাহলে, বোন, গরীব আত্মীয়দের মাঝে বিলিয়ে দিন

মাফ করবেন, ভাই আমি ছুঁবোও না আমার শাশুড়ি এসে গেলে ওনার হাতেই দিয়ে দিন সুরুয জেদ্দায় চলে যাবার পর উনারা আমার বিয়ের গয়ন এমনকি সুরুযের আংটিও রেখে দিয়েছেন ননদের বিয়েতে দেবেন বলে এই কয়েনগুলোও ওনাদেরই থাক সুরুযের সবচে বড় সম্পদ, এই মাসুম বাচ্চা নিয়ে আমি জীবন কাটাতে পারব আমাকে প্রায়ই বলত, ছেলেকে এফ আর খানের মত ওয়ার্ল্ড ফেমাস ইঞ্জিনীয়ার বানাবে আল্লাহ্ চাইলে আমি তা বানাবো

শ্রদ্ধায় আপ্লুত অভিভূত মারুফ কি বলবে, ভাষা খুঁজে পায়না আপন বোন হলে ওকে মাথায় হাত বুলিয়ে বুকের সমস্ত আদর ঢেলে আশীর্বাদ করত

বিকেলে ফিরোজকে নিয়ে তামান্নার শাশুড়ি চলে আসেন নাতিকে জড়িয়ে ধরে অঝোর ধারায় অনেকক্ষণ কাঁদলেন করূণ পরিবেশ স্বাভাবিক হতে বেশ সময় যাচ্ছে মারুফ বলে, খালাম্মা, আমাকে এখন যেতে হবে যে গচ্ছিত আমানত আপনার হাতে সমঝিয়ে দিতে চাই এই যে আপনার ফাইল আপনার নামে কোম্পানীর পাঠানো একটা চেক আছে ওতে কাগজে কয়েকটা সই দিয়ে দিন আর, এই পুটলিতে সুরুযের কয়েকটা স্বর্ণের কয়েন আছে তামান্নাভাবীর জন্য কিনেছিল হয়ত কিন্তু উনি নেননি আপনাকেই দিতে বললেন আমার মনে হয়, খালাম্মা -

কি? বল বাবা

স্বর্ণমুদ্রার রহস্যটা আবারো চেপে রাখে মারুফ বলে, খালাম্মা, ওগুলো গরীব আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দিলে সুরুযের আত্মা শান্তি পাবে

ফিরোজ প্রায় ছোঁ মেরে পুটলি নিয়ে বলে, মা বুড়ো মানুষ কই না কই রাখবেন, ঠিক নাই আমার কাছেই থাক আর গরীব আত্মীয়ের কথা বলছেন? আমরাও তো গরীব বাড়ির মেয়েরা বড় হচ্ছে তাছাড়া, সামনে আমার ছোট ভাই সুমনের বিয়ে ওগুলো লাগবে আপনাকে আমি কৈফিয়তই বা দিচ্ছি কেন? এটা তো আমাদের পারিবারিক ব্যাপার তাই না?   

অপমান গায়ে না মেখে ফিরোজের ধূর্ত চোখে ফুটে ওঠা ছকের দিকে তাকিয়ে থাকে মারুফ তামান্নার বাবার কাছে শোনা তথ্যটা হুবহু মিলে যাচ্ছে উনি দুঃখ করে বলেছিলেন, ওরা নাকি তামান্নার ইদ্দত শেষ হলে হাবাগোবা সুমনের সাথে তামান্নার বিয়ে দিয়ে গ্রামে ফিরিয়ে নেবার পাঁয়তারা করছে

অসহ্য লোকটার সামনে আর এক মূহুর্তও থাকতে ইচ্ছে করছে না  


মাসের বিশ তারিখ মারুফের বিয়ে দীর্ঘ দুই বছর প্রতীক্ষার পর তার সেই লালিত স্বপ্নের রাজকন্যা আসবে রাণী হয়ে লাগাতার ব্যস্ততায় কয়েকদিন যাবৎ তামান্নার খোঁজবার্তা নিতে পারেনি আজ ফোন করবে এবং দাওয়াত দেবে পুরো পরিবারকে তামান্না আসবে না, জানা কথা তবু দোয়া তো চাইতে হবে

চাওয়ার আগেই তামান্নার কান্নাভেজা কন্ঠে আরেকটা ধারাবাহিক মৃত্যুর মর্মান্তিক খবর পায় এক পুটলি স্বর্ণমুদ্রা গ্রামবাসীর মুখে মুখে এক ব্যাগ স্বর্ণমুদ্রা হয়ে খৈয়ের মত ফুটছিল ডাকাতরা পুটলি কেড়ে নেবার পর, রটনাকৃত সেই ব্যাগ পাবার জন্য  ফিরোজকে খুন করে 

 

No comments:

Post a Comment

What do you think?