Tuesday, October 6, 2020

কল্কি অবতার পৃথিবীতে আগমণের সপক্ষে হিন্দু ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উন্মোচনঃ (Must Read)

কল্কি অবতার পৃথিবীতে আগমণের সপক্ষে হিন্দু ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উন্মোচনঃ 

-  নাজমুল চৌধুরী

 

কল্কি অবতার ও মোহাম্মদ সাহেব” বইটি মূল হিন্দি ভাষায় লিখেছেন ধর্মাচার্য অধ্যাপক ড: বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়, (এম.এ.(সংস্কৃত), বেদ ডি.ফিল,ধর্মাচার্য, ডিপ,ইন-জার্মান রিসার্চ স্কলার, সংস্কৃত বিভাগ, প্রয়াগ বিশ্ববিদ্যালয়, এলাহাবাদ, পরিচালকঃ সারস্বত বেদান্ত প্রকাশ সংঘ, প্রয়াগ, ভারত)।

বইটি অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক ডঃ অসিত কুমার বন্দোপাধ্যায় (কাব্য-ব্যাকরণ তীর্থ, বিদ্যারত্ন, জ্যোতিষশাস্ত্রী, সাহিত্য প্রভাকর, প্রাক্তন অধ্যাপক, পঞ্চানন সংস্কৃত বিদ্যামন্দির, শিবপুর, হাওড়া, প্রাক্তন পরিদর্শক, সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদ, হাওড়া এবং বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট গবেষক, সমালোচক ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা)

                            

অধ্যাপিকা ডঃ গৌরী ভট্টাচার্য (এম.এম.পিএইচডি (কলিকাতা) রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।

বইটি প্রকাশের পর ভারতের স্বনামধন্য কয়েকজন পন্ডিত ও গবেষককে বইটির প্রতিপাদ্যে তথ্য যাচাইয়ের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। পন্ডিতগণ ব্যাপক গবেষণা ও অনুসন্ধান করে বইটির তথ্যসমূহ সঠিক এবং বিশ্বাসযোগ্য হিসাবে নিজেদের মত ব্যক্ত করেছেন।

পন্ডিত ডঃ বেদপ্রকাশ উপাধ্যায় তাঁর গবেষণার বিশ্বাসযোগ্যতার পেছনে হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বেদ থেকে কিছু যুক্তি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সামনে উপস্থাপন করেছেন যা “সম্প্রীতি” সাহিত্যপত্রিকার পাঠক এবং দেশ-বিদেশের অসংখ্য হিন্দু-মুসলিম পাঠকদের অবগতির জন্য প্রদত্ত হলঃ

কল্কি অবতার এবং মোহাম্মদ সাহেবঃ 

রাজকন্যার সাথে জগৎগুরু (মোহাম্মদ) বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন। বিবাহ অনুষ্ঠানে তাঁর চাচা এবং নিকটস্থ আত্মীয় সম্পর্কে তিন ভাই উপস্থিত থাকবেন। পরশুরাম (স্রষ্টা)এক গুহায় তাঁকে শিক্ষাদান করবেন। শম্ভলাতে তিনি যখন ধর্মপ্রচার করবেন তখন তাঁর আত্মীয়-স্বজনেরা বিরোধিতা করবে। অত্যাচার আর নিপীড়নের ফলে তিনি উত্তর পাহাড়ের দিকে চলে যেতে বাধ্য হবেন কিন্তু কিছুদিন পর তিনি শম্ভলা শহরে পুনরায় প্রবেশ করবেন এবং সমগ্র দেশ জয় করবেন। জগৎগুরু অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করে পৃথিবী ও সপ্তস্বর্গ পরিভ্রমণ করবেন।

এখন দেখা যাক এর সত্যতা কতটুকু? তিনি বিবাহবন্ধনে প্রথমে আবদ্ধ হয়েছিলেন মক্কার সম্ভ্রান্ত বংশের ধনী মহিলা “খোদেজার” সাথে যিনি তখনকার মক্কার শ্রেষ্ঠ ধনী ও উঁচু-বংশীয় নারী ছিলেন। বিবাহ অনুষ্ঠানে তাঁর চাচা/কাকা আবু তালেব ও কাকাতো/চাচাতো ভাইদের মধ্যে আলী, আকিল এবং জাফর উপস্থিত ছিলেন। তিনি হেরা পর্বতের গুহায় সৃষ্টিকর্তা হতে ফেরেশতা জিবরাইলের মাধ্যমে ওহীপ্রাপ্ত হন এবং সে অনুযায়ী ধর্মপ্রচার শুরু করেন। উক্ত সময় পৌত্তলিক আত্মীয়স্বজনের প্রায় সকলেই প্রথমে ইসলাম ধর্মের বিরোধিতা করেছিল। এ কারণে তিনি মক্কা হতে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দুরে শান্তির শহর মদীনায় তাঁর নিকটতম সহচর অবুবকর, ওমর ও আলীকে নিয়ে রাতের অন্ধকারে হিজরত করেন। মদীনাবাসীরা তাঁকে সাদরে অভ্যর্থনা জানায় এবং মদীনায় জিবরীল ফেরেশতা আল্লাহর নির্দেশে ওহীর মাধ্যমে পবিত্র কু’রআন অবতীর্ণ করতে থাকেন। শান্তির ধর্ম ইসলাম এবং কু’রআনের সত্যতা প্রচারের কারণে ক্রমেই মদীনাবাসী মুসলিম ধর্মে দীক্ষিত হতে থাকে। পরবর্তী পর্যায়ে দলবল নিয়ে তিনি পুনরায় মক্কা বিজয় করেন। যে ব্যক্তি সমগ্র বিশ্বের মানবমন্ডলীর গুরু তিনিই জগৎগুরু, তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র মানবজাতির মুক্তিদূত বিধায় তাঁকে জগৎগুরু হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পবিত্র কু’রআনে বর্ণিত হয়েছে- হে মানবজাতি আমি তোমাদের সকলের জন্য আমার নবী ও রাসুল মোহাম্মদ (সঃ)-কে প্রেরণ করেছি।

অশ্বপৃষ্ঠে পৃথিবী ও সপ্তস্বর্গ পরিভ্রমণঃ 

হিন্দুগ্রন্থে বলা হয়েছে কল্কি অবতার অশ্বপৃষ্ঠে পৃথিবী ও সপ্তস্বর্গ পরিভ্রমণ করবেন। মোহাম্মদ (সঃ) অশ্বপৃষ্ঠে (সেই অশ্বকে আরবীতে বোরাক বলা হয়) সপ্ত আকাশে পরিভ্রমণ করে মহান সৃষ্টিকর্তার দীদার লাভ করেছিলেন। এ সম্পর্কে আরেকটি শ্লোক উল্লেখ করা যেতে পারে-”বিরন্নাশুনা মৌন্যাংহয়েনা প্রতিম দ্যুতি”। 

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদ-এ উল্লেখ আছে যে, কলির অবতার ঘোড় সওয়ার, তীর চালনা ও তলোয়ারবাজিতে খুবই পারদর্শী হবেন। ডঃ বেদপ্রকাশ লিখেছেন ঘোড় সওয়ারী, তীরবাজি এবং তলোয়ারবাজির দিন অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আধূনিক যুগে অস্ত্রসম্ভারে যুক্ত হয়েছে ট্যাংক, ক্ষেপনাস্ত্র, কামান, বন্দুক, যুদ্ধবিমান ইত্যাদি। সুতরাং তীর, ধনুক, তলোয়ার সজ্জিত কল্কি অবতারের অপেক্ষা করা কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য ও সময়োপযোগী নয়। প্রকৃত বাস্তবতায় ধর্মগ্রন্থে যেভাবে উল্লেখ আছে তা পরিষ্কারভাবে মুহাম্মদ (তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক)–এর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য; যার উপর নাযিল হয়েছিল সর্বশেষ আসমানী কিতাব মহাগ্রন্থ আল-কুরআন।

”কল্কি অবতার এবং মুহাম্মদ (সঃ) সাহেব” গ্রন্থ সম্পর্কে স্বচ্ছ চিন্তা-চেতনাসম্পন্ন ভারতীয় গবেষকদের অভিমতঃ

গোবিন্দ কবিরাজ, (ডাঃ এ.এম.এস.এইচ, এম.ডি.পিএইচডি দর্শন আচার্য, দিয়া কিরণ আচার্য, সাহিত্য আচার্য, আয়ুর্বেদ ও গেনান আচার্য, ভিষক আচার্য, বিদ্যারতন, হিন্দি সাহিত্য রতন, বেদান্ত শাস্ত্রী, প্রফেসর, অরাণ্য সংস্কৃত ভার্সিটি; প্রিন্সিপাল নেপালী সংস্কৃত কলেজ,বেনারস)।

মন্তব্যঃ ডঃ বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়ের ’কল্কি অবতার এবং মোহাম্মদ সাহেব” গ্রন্থটি আমি পড়েছি। সমগ্র দুনিয়ার সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতার অবসান ঘটিয়ে সমগ্র মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল করতে গবেষক গ্রন্থটি রচনায় যে পরিশ্রম করেছেন তা অনস্বীকার্যভাবেই প্রশংসনীয়। আর সমগ্র পৃথিবীর মানুষ এ থেকে উপকৃত হোক এটাই আমার কাম্য।

প্রফেসর ড. শ্রী গোপাল চান্দ মিশরা (এম.এ.পিএইচডি, ধর্মশাস্ত্র আচার্য, সভাপতি বেদ বন্ধন, সংস্কৃত ভার্সিটি, বেনারস)।

মন্তব্যঃ ”কল্কি অবতার এবং মোহাম্মদ সাহেব” গ্রন্থটি আমি পড়েছি। স্রষ্টার সৃষ্টিজগতের মধ্যে মানবতার স্তর এবং তার উন্নতি অবনতির পথ ও পদ্বতি এক এবং অভিন্ন। কোন ব্যক্তি নবী, রাসুল হতে পারেনা। হযরত মোহাম্মদ (সঃ) আরবদেশের দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে আল্লাহর নূরের দ্বারাই নবী হিসাবে এসেছিলেন। এ সত্যকে উপলব্ধি করার জন্য কারোর দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা উচিত নয়। পৃথিবীর যেকোন প্রান্তরে মহাপুরুষ বা নবী হোক তাঁর শ্রেষ্ঠত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে অন্যান্য দেশের মানুষেরাও তাদের রীতিনীতি ও সংস্কৃতি অনুযায়ী শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে। এ সত্যের বাস্তব উপলব্ধি ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়ের গ্রন্থ “কল্কি অবতার এবং মোহাম্মদ সাহেব” গ্রন্থটির মধ্যে পাওয়া যায়। যে বা যারা এ বাস্তব সত্যটি উপলব্ধি করবেন তাঁরাই সফলতা লাভ করবেন”।

ঝুপাশরী জয় কিশোর শর্মা (দয়া কিরণ আচার্য, পরকান আচার্য, সওদা মণি সংস্কৃত ভার্সিটি, এলাহাবাদ)।

মন্তব্যঃ  ”কল্কি অবতার এবং মোহাম্মদ সাহেব” গ্রন্থটি অভিনব, অতুলনীয় এবং সুখপাঠ্য। এর পরতে পরতে রয়েছে অজানা বিষয়ে নতুনত্বের ছাপ। গ্রন্থটি পাঠ করে আশা ও আশ্বাসে মন ভরে ওঠে।” 


হিন্দু ধর্মে চরিটি যুগের কথা বলা হয়েছে:

১) সত্য  ২) ত্রেতা  ৩) দ্বাপর  এবং ৪) কলি যুগ।

সামবেদ (১৩/৫/১ শ্লোক)

যে অন্তিম অবতারের অনুসরণ করবে সে স্বর্গে যাবে।


হিন্দু ধর্মে দশজন অবতারের কথা বলা হয়েছেঃ 

১) মৎস ২) কূর্ম (কচ্ছপরূপে) ৩) বরাহ (শুকররূপে) ৪) নৃসিংহ (শরীরের উপরের অংশ মানুষ এবং নীচের অংশ সিংহাকৃতি) ৫) বামন (৩ পা বিশিষ্ট ক্ষুদ্রাকৃতি মানুষ) ৬) পরশুরাম  ৭) শ্রীরামচন্দ্র  ৮) শ্রীকৃষ্ণ/বলরাম ৯) গৌতমবুদ্ধ ১০) কল্কি অবতার (শেষ অবতার)। হিন্দু ধর্মগ্রন্থসমূহে তাঁদের শেষ অবতারের জন্মস্থান, জন্ম তারিখ, পিতা-মাতা, বিবাহ, সহচর ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। 

ধর্মাচার্য্য অধ্যাপক ডঃ বেদপ্রকাশ উপাধ্যায় বলেছেন ‘কল্কি অবতার’ শেষ নবী মুহাম্মদ (তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক) ছাড়া আর কেউ নন। কারণ ধর্মগ্রন্থে কল্কি অবতারের যে সমস্ত গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে তার সব ক’টি গুণ মুহাম্মদের মধ্যে পাওয়া যায়। অন্য কারোর মধ্যে সবগুলো বৈশিষ্ট একত্রে পাওয়া যায়না।

ডঃ বেদপ্রকাশ উপাধ্যায় আরো বলেছেন ‘যে ইসলাম গ্রহণ করেনা, মুহাম্মদ (সঃ) এবং তাঁর ধর্মমতকে মানেনা সে প্রকৃত হিন্দু নয়। যদি কল্কি অবতার আগমণের পর তাঁকে এবং তাঁর ধর্মমতকে মানেনা সে মৃত্যুর পর নরকে জ্বলবে এবং স্রষ্টার দর্শন থেকে বঞ্চিত হবে এবং তাঁর ক্রোধের শিকার হবে।

ঋগবেদ (১/১৮/৯শ্লোকে) কল্কি অবতারের বর্ণনাঃ

নরাশংস (নরাশংসং সুদৃষ্টযমপশ্যং সপ্রথস্তমং)

নরাশংস অর্থ প্রশংসিত পুরুষ। আরবীতে মুহাম্মদ অর্থ প্রশংসিত পুরুষ।


হিন্দু ধর্মের শতাব্দীর সংস্করক শ্রী শ্রী বালক ব্রক্ষাচারী শ্যামবেদের এই মন্ত্রে উল্লেখ করেনঃ

’মদৌ বর্তিতা দেবাদকারান্তে প্রকৃত্তিতা, বৃষাণাংভক্ষয়েৎ সদামেদা শাস্ত্রে চ স্মৃতা (অর্থাৎ যে দেবের প্রথম অক্ষর ‘ম’ এবং শেষ অক্ষর ‘দ’ হবে এবং যিনি গরুর মাংস ভক্ষণ করাকে সর্বকালের জন্য বৈধ ঘোষণা করবেন তিনিই হবেন বেদানুযায়ী শেষ ঋষি (কল্কি অবতার)।

তিনি এই উদ্বৃতি উল্লেখ করে বলেন, মুহাম্মদ নামের প্রথম অক্ষর ‘ম’ এবং শেষ অক্ষর ‘দ’ হওয়ায় তাঁকে মান্য করা আমাদের শাস্ত্রের নির্দেশ আর তিনিই গরুর মাংস খাওয়াকে বৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

ঋগবেদ (৮/৬/১০ শ্লোক) এ বলা হয়েছেঃ

”আহমিদ্দি ‍পিতুস্পরি মেধামৃৎস্য জগ্রভ অর্থাৎ কল্কি অবতারের অন্য নাম হবে ‘আহমদ’ এবং মুহাম্মদ (সঃ)এর অন্য নাম হচ্ছে ’আহমদ’ এটা আমরা সকলেই জানি।

ভগবত মহাপুরাণ (১/৩/২৫ শ্লোকঃ)

জনিতা বিষ্ণুইয়াশো নাম্মা কল্কিজগৎপতি” অর্থাৎ কল্কি অবতারের পিতার নাম হবে “বিষ্ণুইয়াশ” (ঈশ্বরের দাস) অর্থাৎ মোহাম্মদের পিতা অব্দুল্লাহ অর্থ (আরবী পরিভাষায় ঈশ্বরের দাস)।

মহাভারত বনপর্বতে বলা হয়েছেঃ

কালক্রমে বিষ্ণুইয়াশো নামেতে ব্রাক্ষণ, শম্ভল গ্রামেতে জন্ম লইবে তখন। মহাবী্র্য্ মহাবুদ্ধি কল্কী তার ঘরে, জন্মিবে যথাকালে দেব কার্য্য তরে..।

বিষ্ণুইয়াশ মানে ঈশ্বরের দাস আর্থাৎ কল্কি অবতারের পিতার নাম ‘আব্দুল্লাহ’ এবং আব্দুল্লাহ অর্থ(আল্লার দাস)

কল্কি পুরাণ (২/১১ শ্লোকঃ)

“শম্ভলে বিষ্ণুয়শাসে গৃহ প্রাদৃর্ভাবা মাহম সুমতাং বিষ্ণুযশা গর্ভ মাধও বৈষ্ণসম” অর্থাৎ শম্ভল শহরের প্রধান পুরোহিতের ঘরে তিনি জন্মগ্রহণ করবেন। 

মোহম্মদ (সঃ)-এর দাদা (পিতার পিতা) আব্দুল মোত্তালিব ছিলেন তৎকালীন প্রধান পুরোহিত বা মক্কার কুরাইশদের নেতা। তাঁর পিতার নাম হবে বিষ্ণুযশা এবং মাতার নাম হবে সুমতি। পৌরাণিক ভাষায় বিষ্ণু অর্থ সৃষ্টিকর্তা এবং যশা অর্থ দাস। আর বিষ্ণুযশা (ঈশ্বরের দাস) আরবী পরিভাষায় আব্দুল্লাহ অর্থ হল ‘আল্লাহর দাস”। কল্কি অবতারের জন্ম হবে সুমতির গর্ভে। তাহলে সুমতি কে?

সু-অর্থ উত্তম, মতি অর্থ অন্তর বা তৃপ্ত হৃদয়। আরবী পরিভাষায় সুমতি অর্থ ‘আমেনা”। মুহাম্মদ (সঃ) পিতা আব্দুল্লার ঔরসে, মা আমেনার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

ভগবত মহাপুরাণের (১২/২/১৮) মন্ত্রে বলা হয়েছেঃ

’শম্ভলগ্রামুমুখাস্য ব্রাক্ষণস্য মহাত্মনঃ ভবনে বিষ্ণুয়াশসঃ কল্কিঃ প্রাদুর্ভবিষ্যতি”।

“শম্ভল” এলাকা অর্থাৎ সংরক্ষিত এলাকা কোথায়? আমরা জানি ‘মক্কা’ একটি সংরক্ষিত এলাকা যার চতুর্পাশে পাথুরে পাহাড় দিয়ে ঘেরা এবং একটি মাত্র প্রবেশপথ। অধ্যাপক ডঃ বেদপ্রকাশ উপাধ্যায় বলেনে পৌরাণিক বা হিন্দু শাস্ত্রমতে পৃথিবীকে ৭ টি দ্বীপে ভাগ করা হয়েছে আর এর মধ্যে একটি দ্বীপ হল “শম্ভল দ্বীপ”। শম্ভল দ্বীপের অবস্থান আরব এবং এশিয়া মাইনর। হিন্দু পূরাণে পৃথিবীকে ৭টি দ্বীপে ভাগ করা হয়েছে, তারমধ্যে একটি দ্বীপের নাম “শম্ভল দ্বীপ”। শম্ভল দ্বীপ (মক্কা) একসময় লোহিত সাগরের পার্শবর্তী একটি দ্বীপ ছিল। কালের আবর্তনে এবং ভূমিকম্পের প্রভাবে এ দ্বীপটি ভরাট হয়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে জেদ্দা শহরের পাশেই লোহিত সাগরের বর্তমান অবস্থান।

মুহাম্মদ আরব দেশের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন।

কল্কি পুরাণ (২/১৫ শ্লোকঃ)

”দ্বাশশ্যাং শুক্লপক্ষসা মাধবে মাসি মাধবস”: জাতেদদৃশতুঃ পুত্রং পিতরৌ হৃষ্টমানসৌ” অর্থাৎ ১২ বৈশাখ সোমবার শুক্লপক্ষীয় দ্বাদশ তিথিতে তিনি জন্ম নিবেন। তাঁর জন্মে তার মাতা ও দাদু অতিশয় আনন্দিত হবেন।

এ শ্লোক অনুযায়ী দেখা যায় আরবী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দ্বাদশ মাসের ১২ তারিখ (বিক্রমী পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখ মাসকে মাধব মাস বলা হয় আর মাধবের আরবী পরিভাষা হচ্ছে রবি) অর্থাৎ ১২ই রবিউল আউয়াল মুহাম্মদ (সঃ) শম্ভলে (মক্কায়) জন্ম নেন। মাতা এবং দাদার কথা বলা হয়েছে, এখানে পিতার কথা উল্লেখ নেই কারণ মুহাম্মদ(সঃ)-এর পিতা তাঁর জন্মের কিছুকাল পূর্বে মারা গিয়েছিলেন। তাই মাতা আমেনা এবং দাদা (পিতার পিতা) আব্দুল মোত্তালেব তাঁর জন্মে অতিশয় আনন্দিত হয়েছিলেন।

কল্কি পূরাণ (২/৫) শ্লোকে বলা হয়েছেঃ

”চতুভির্ভ্রাতৃভির্দেব করিষ্যামি কলিক্ষয়ম্‌” অর্থাৎ কল্কি অবতারের ৪ জন বিশ্বস্থ সহচর থাকবে। আর মুহাম্মদের চারজন বিশ্বস্থ সহচর ছিলেন যারা তাঁর মৃত্যুর পর পর ইসলামের প্রথম চারজন খলিফা হিসাবে একে একে কার্যভার গ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা হলেন ক)আবুবকর খ)ওমর গ) উসমান ও  ৪)আলী। 

অথর্ববেদ (২০/৯/৩১/১):

“ষটিং সহস্র নবতিং চ কৌরম (দেশত্যাগী) আ রুশমেষু দন্মহে” অর্থাৎ ওহে কৌরম (দেশত্যাগী) মোরা যষ্টি সহস্র নবুতী পাইয়াছি।

এখানে কল্কি অবতার মুহাম্মদ (সঃ) মক্কা হতে মদীনায় হিযরত (দেশত্যাগ) করেছিলেন এবং তিনি ৪০ বছর বয়সে নবুয়তপ্রাপ্ত হন।

অথর্ববেদ (২০/৯/৩১/২ শ্লোকঃ)

”বর্স্মা রথস্য নি জিহিরথে দিব ঈশমাণ্য উপস্পৃশ” অর্থাৎ ঐ রথচূড়া স্বর্গ স্পর্শ না করিয়া সদাই থাকছে উহা অবনত হইয়া“। কল্কি অবতার রথে চড়িয়া আকাশ ভ্রমণ করিবেন যা পবিত্র কুরআনে “মেরাজ” নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। 

শ্যামবেদ (৭/৬৩ শ্লোকঃ)

”চিত্র ইচ্ছেশোস্তরুণম্য বক্ষথো ন যো মাতরাবম্বোনি ধাতবে” অর্থাৎ এ শিশুটি বড়ই বিচিত্র, সে তার মাতৃদুগ্ধ বেশীদিন পান করবেনা বরং তার দুধমাতা (ধাত্রীর) দুগ্ধ পান করবে।

আমরা জানি নবী মুহাম্মদ (সঃ)তাঁর মাতৃদুগ্ধ মাত্র ৪ দিন পান করেছিলেন আতঃপর ধাত্রী বিবি হালিমা তাঁকে তার কাছে নিয়ে গিয়ে দুই বৎসর দুগ্ধ পান করান।


শ্রীমত ভগবত পুরাণের ১২ নং স্কন্ধের ২নং অধ্যায়ের ১৯/২০/২১ শ্লোক -এ কল্কি অবতার সম্মন্ধে বলা হয়েছেঃ

”অশ্বমাশুগমারুহ্য দেবদত্তঃ জগৎপতিঃ অসিনাসাধু দমনমষ্টৈশ্বর্য গুণান্বিতঃ বিচরন্নাশুনা ক্ষোণ্যাং হয়েনাপ্রতিমদ্যুতিঃ নৃপলিঙ্গচ্ছদো দস্যূণ্‌ কোটি শোনিহ নিয়্যতিঃ অথ তেষাং ভবিষ্যন্তি মনাংসি বিশাদানি বৈ, বাসুদেবাঙ্গরা গাভিপূণ্যগন্ধানিলস্পৃশাম পৌরজানপদানাং বৈ  ইতেবাখিলদস্যু” অর্থাৎ কল্কি অবতার অশ্বরোহী হবেন, বিশ্বমানব হবেন, তরবারী হস্তে পরিচিত দুষ্টদের দমন করবেন, তার চেহারা হবে আলোবিচ্ছুরিত, সকল গুণের অধিকারী হবেন, তাঁর দেহ হবে কান্তিময় যার বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়, তাঁর খৎনা করা থাকবে (লিঙ্গের সম্মুখভাগের চামড়ার কিয়দংশ কাটা যা জন্মগতভাবে মুহাম্মদ পেয়েছিলেন), তাঁর শরীর থেকে সুগন্ধি ছড়াবে, তাঁর সংস্পর্শে মানুষের মন নির্মল ও ধন্য হবে, দস্যু দমন কাজ সমাপ্ত হলে গ্রামগঞ্জে বসবাসকারীরা দলে দলে তার ধর্মে দীক্ষিত হবে।

ড. বেদপ্রকাশ লিখেছেন, উপরোক্ত সকল গুণই মোহাম্মদ(সঃ)-এর মধ্যে বিদ্যমান সুতরাং তাঁকে কল্কি অবতার বলে সকল হিন্দুভাইবোনদেরকে মানতেই হবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, মুসলিম. খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মানুসারীদেরকে তাদের ধর্মগ্রন্থ র্অনুযায়ী শেষ নবী এবং সঠিক পথের দিশারী হিসাবে মোহাম্মদ (সঃ)-কে মানতেই হবে। ইহুদিদের তৌরাত (তোরাহ), খ্রিস্টানদের ইঞ্জিল (বাইবেল)ধর্মগ্রন্থে শেষ নবী মোহাম্মদ(সঃ)-এর আগমনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।

উত্তরণ বেদ-এ বর্ণিত শ্লোক অনুযায়ী হিন্দু ধর্মানুসারী কারোর মৃত্যু হলে তাকে পোড়ানোর পূর্বে এ মন্ত্র গোসাই তার কানে কানে উচ্চারণ করেনঃ

”লা ইলাহা পরতি পাপম ইল্লু ইলা পরম পদম জন্ম বৈকুন্ঠ অকুইনতি তবজপি নাম মোহাম্মদং” (উত্তরণ বেদ) অর্থাৎ ঈশ্বরের/আল্লাহর আশ্রয় ব্যতীত প্রকৃত কোন আশ্রয় নেই, স্বর্গে জন্ম লাভ করতে হলে ঈশ্বরের আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে আর এজন্য মোহাম্মদ(সঃ)-কে অনুসরণ করতে হবে।” 

১৯৭৮ সালে মাইকেল এহচ হার্ট (Michael H. Hart) (বৈজ্ঞানিক ও গবেষক) একটি বই লিখেন যার নামঃ “The 100: A Ranking of the Most influential persons in History”. এ বইটি পুনর্মুদ্রণ হয়েছিল ১৯৯২ এবং ১৯৯৯ সালে। তিনি অনেক গবেষণা করে বিগত ৩০০০ বছর ধরে যে মানবসভ্যতা বিশ্বের কাছে পরিচিত এবং বিভিন্ন ইতিহাসের পাতায় যে সমস্ত মহামনীষিরা স্থান করে নিয়েছেন তার সামগ্রিক বিচারে প্রথম সারির ১০০ জন গুণী ব্যক্তির নাম লিখেন। তিনি খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হলেও সামগ্রিক বিচারে তিনি ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম নেয়া মুহম্মদ(সঃ)-কে সর্বাধিক গুণী ব্যক্তি হিসাবে ১ম স্থানে নিয়ে আসেন।

মরিস বুকাইল, একজন ফ্রেন্স মেডিকেল ডক্টর, যিনি প্রয়াত সৌদিআরবের বাদশাহ ফয়সল এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সা’দতের ব্যক্তিগত চিকিৎসকও ছিলেন।

তিনি ১৯৭৩ সালে একটি বই লিখেন যার নাম The Bible, the Quran and Science”. এ বইটিতে তিনি প্রমাণ করেছেন পবিত্র কু’রআন এমন একটি গ্রন্থ যা বিজ্ঞানময় এবং অপরিবর্তীত স্বর্গীয় ধর্মগ্রন্থ যা হতে বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিষ্কারের ধারণা এই কু’রআন হতেই জন্ম নিয়েছে। এ সত্যটি অনুধাবন করে পরবর্তী পর্যায়ে তিনি খ্রিস্ট ধর্ম পরিত্যাগ করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। 

ধর্মগ্রন্থের উপরোক্ত আলোচনার আলোকে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, মুসলিম, হিন্দু ও ইহুদি ধর্মের অনুসারীদের প্রতি আহ্বানঃ

এ পৃথিবীতে যতগুলো ধর্মগ্রন্থ বিদ্যমান সে সমস্ত প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে সত্য কথাটিই বলা হয়েছে। পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থগুলো শুধু একটি সমাজের জন্য পালনীয় ছিল কিন্তু তা পৃথিবীর বর্তমান সমগ্র মানবসমাজের জন্য পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থগুলো অনুকরণীয় নয়। তাই বর্তমান পৃথিবীতে যতগুলো ধর্মগ্রন্থ আছে তার মধ্যে অনেক পার্থক্য লক্ষ করা যায়। তাছাড়া ধর্মযাজকরা নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ধর্মগ্রন্থের বিভিন্ন শ্লোকে ইচ্ছামত রদবদল ঘটিয়েছে। তাই এ পর্যন্ত ইহুদিদের তৌরাত/তোরাহ, খ্রিস্টানদের বাইবেলে ও হিন্দুদের বেদ-এ পন্ডিতরা নিজেদের স্বার্থে অনেক রদবদল ঘটিয়েছেন। এ পর্যন্ত বাইবেলের ৫০টিরও অধিক সংস্করণ এবং তৌরাত কিতাবেও অসংখ্য রদবদল পরিলক্ষিত হয়। স্বার্থান্বেষী মানুষ ধর্ম এবং ধর্মগ্রন্থকে নিয়েও ব্যবসা করেছে, সত্যকে চাপা দিয়ে মিথ্যের আশ্রয় গ্রহণ করেছে। ধর্মগ্রন্থ বেদে মূর্তিপূজো বারণ করা হয়েছে এবং বর্ণিত আছে “ঈশ্বরের কোন মূর্তি নেই, ছবি নেই, ভাষ্কর নেই” অথচ হিন্দুরা মূর্তিপূজো করে। মিথ্যে অজুহাত সৃষ্টি করে বলে “আমাদের পূর্বপুরুষরা মূর্তিপূজো করে এসেছে, তাই আমরা মূর্তিপূজো করি। আবার কেউ কেউ বলেন “আমরাতো মূর্তি দেখে ঈশ্বরের/ভগবানের অস্থিত্ব অনুধাবন করি, মূর্তির মধ্যে ঈশ্বরের ছায়া দেখতে পাই। কিন্তু ধর্মগ্রন্থ বেদ-এ আছে ঈশ্বরকে মান, তাতে তোমাদের মঙ্গল হবে, ঈশ্বরের সাথে কাউকে শরীক করোনা যেহেতু তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁর সাথে কাউকে দাঁড় করানো যাবেনা। তিনি একা, এ বিশ্বজগতের মালিক ও মানুষের প্রভু। মুসলিমদের মধ্যে অধিকাংশ লোকই পবিত্র কু’রআন ও রাসুলের উপদেশ সম্মন্ধে অজ্ঞ, তেমনি হিন্দু, খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্মের অধিকাংশ লোকই তাদের ধর্মগ্রন্থ পড়ে দেখেনি। এই অজ্ঞতাই হিংসা বিদ্বেষের জন্ম দিয়েছে। পবিত্র কু’রআন, বেদ, তৌরাত ও বাইবেল পড়া নিজেকে সংশোধনের জন্য একান্ত প্রয়োজন। ধর্মগ্রন্থগুলোয় ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় বা নিজেদের স্বার্থরক্ষায় যে সমস্ত বাক্য সংযোজিত হয়েছে তা ভালভাবে পড়লে নিজেই আলাদা করতে পারবেন, সত্য মিথ্যে যাচাই করতে পারবেন। মানুষকে এ পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে। স্বর্গ এবং নরকের কথা সকল ধর্মগ্রন্থেই বর্ণনা করা হয়েছে এবং এ ক্ষণস্থায়ী ধরায় ভাল কাজের বিনিময়ে আমরা প্রত্যেকে স্বর্গে বসবাস করতে চাই। তাই আসুন ধর্মের সত্যিকার অনুশাসন আমরা মেনে চলি, একে অপরের বিরুদ্ধে হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করি এবং মৃত্যুর পর শেষ বিচারে আমরা ভাল কাজের জন্য স্বর্গপ্রাপ্ত হই। পৃথিবীতে আমরা সকল ধর্মের লোকরা যেভাবে একত্রে বসবাস করেছি ঠিক সেভাবে আমরা মৃত্যুপরবর্তী জীবনে একত্রে স্বর্গে বসবাস করি। অফুরন্ত সুখের আনন্দে আমরা এ নশ্বর পৃথিবীতে হিংসা-বিদ্বেষ পরিত্যাগ করে কবির ভাষায় বলি – “সকলের তরে সকলে মোরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে”, তবেই হবে মানব জীবন স্বার্থকতা ।

হিন্দুধর্ম গ্রন্থসমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ

প্রধান ধর্মগ্রন্থঃ ঋগবেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ এবং অথর্ববেদ।

উপবেদঃ আয়ূর্বেদ, ধনুর্বেদ, গান্ধর্ববেদ ও স্থাপত্যবেদ।

পরবর্তীকালে প্রণয়ণঃ উপনিষদ, প্রবন ও উত্তরায়ন বেদ।

প্রতিবেদ ৪ ভাগে বিভক্তঃ কর্মকান্ড সংহিতা, ব্রাক্ষণ, জ্ঞানকান্ড, আরণ্যক ও উপনিষদ।

অন্যান্য গ্রন্থসমূহঃ আদি পুরাণ, নৃসিংহ পুরাণ, বায়ূ পুরাণ, শিব পুরাণ, ধর্ম পুরাণ, দুর্বাস পুরাণ, নারদ পুরাণ, নন্দি কেশর পুরাণ, উশন পুরাণ, কপিল পুরাণ, বরুণ পুরাণ, শাস্ব পুরাণ, কালিকা পুরাণ, মহেশ্বর পুরাণ, মারীচ পুরাণ, পরাশর পুরান, দেব পুরাণ, ভাষ্কর পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ, কল্কি পুরাণ, দেবী ভগবত, শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ (মোটঃ ২২ টি)

চৌদ্দ শাস্ত্রের নামঃ অর্ঘশাস্ত্র, অত্রিশাস্ত্র, কোকশাস্ত্র, দর্শনশাস্ত্র, ধর্মশাস্ত্র, ন্যায়শাস্ত্র, বৈচয়িকশাস্ত্র, মর্মান্তশাস্ত্র, যোগশাস্ত্র, রতিশাস্ত্র, শঙ্খশাস্ত্র, শ্রুতিশাস্ত্র, স্মৃতিশাস্ত্র, পূর্ব মিমাংসা ও উত্তর মিমাংসা।

বেদ রচয়িতাগণের নামঃ

১) ঋষি গৃৎসমদ, ২) ভৃগু ঋষি পুত্র সোমাহুতি, ৩) ঋষি বিশ্বমিত্র ও তার পরিবারের আরও কয়েকজন, ৪) বিশ্বমিত্রের পিতা গাথি ও পুত্র প্রজাপতি, ৫) ঋষি ঋষভ, ৬) কতের পুত্র উৎকীল, ৭) দেবশ্রবা ও দেববাত, ৮) ঋষি রামদেব, ৯) ক্রত দস্যু, ১০) ঋষি পুরমীল, ১১) অজামীল, ১১) অত্রি ঋষি ও তার পুত্রগণ, থ) বিশিষ্ট মুনী ও তার পুত্রগণ।

মহিলারাও বেদ রচনায় অংশগ্রহণ করেছেন, তারা হলেনঃ ১) ঋষি অগস্তের পত্নী- লোপামুদ্রা, ২) ঋষি কন্যা- বিশ্ববারা, ৩) অপালা, ৪) অক্ষিরত কন্যা- ঘোষা, ৫) সাবিত্রি সূর্যা, ৬) অভূন কন্যা- বাক,  ও ৭) ইন্দ্রানী।

বিঃদ্রঃ সংস্কৃত শব্দ বা বাক্য বাংলাতে উচ্চারণ করা বেশ কষ্টসাধ্য, তাই অনেক সময় অনিচ্ছাতে বানানে ভুল হতে পারে, পাঠকের কাছে অনিচ্ছাকৃত অপরাধের জন্য আগাম ক্ষমাপ্রার্থী। 

মুসলিম ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন কে রচনা করেছেনঃ 

বিশ্বব্রক্ষান্ডের অধিপতি একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।

হাদীস ( মহানবীর উপদেশ ও বাণী ) এবং পবিত্র কু’রআন-এর বিভিন্ন সূরার ব্যখ্যা দিয়েছেনঃ মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এবং সুরাগুলো অবতীর্ণ হওয়ার পর পর লিখেছেন নবীর সহচরেরা/সাহাবীরা ফলে পবিত্র কু’রআন অপরিবর্তিত ধর্মগ্রন্থ হিসাবে স্বকীয়তা বজায় রেখে চলেছে।

ইহুদি ধর্মগ্রন্থ তৌরাত কখন এবং কারমাধ্যমে নাজিল হয়ঃ

হযরত ইব্রাহীম নবীর (আঃ)মাধ্যমে প্রথমে হিব্রু ভাষায় নাজিল হয়। প্রথমে মুখে মুখে হিব্রু ভাষায় তৌরাত পঠিত হত, পরে হযরত মূসা (আঃ)-এর কাছে পরবর্তীতে মাবুদের অনেক নূতন নির্দেশ আসে যেগুলো যোগ করে তৌরাত গ্রন্থটি লিখেন ১৪৪৫-১৪০৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত হযরত মূসা নবী (আঃ) কিন্তু দুঃখের বিষয় ইহুদি রাবাইরা/রাব্বিরা পরবর্তী পর্যায়ে নিজেদের স্বার্থে অনেক পরিবর্তন ঘটায় ফলে তৌরাতের মূল প্রতিপাদ্যের অনেক জায়গায় বিকৃতি ঘটে।

  

ইঞ্জিল/বাইবেল ধর্মগ্রন্থ কখন এবং কার মাধ্যমে নাজিল হয় এবং 
শেষঅবধি কার দ্বারা রচিত হয়ঃ

ইঞ্জিলে/বাইবেলে হয়রত ইব্রাহীম/আব্রাম (আঃ), হযরত মূসা/মোসেস (আঃ) কর্তৃক বর্ণিত বিষয়সমূহের পরে যে বিষয়গুলো হযরত ঈসা/যিশু(আঃ)-এর কাছে ওহী মারফত পাঠানো হয় তার সকল অনুচ্ছেদ গ্রন্থাগারে লিখিত হয় ৯৬-৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। পরবর্তীতে রোমীয় শাসনামলে।

হযরত ঈসা/যিশু বলেছিলেন আমি ইব্রাহীম বা মূসা নবীর তৌরাতকে পরিবর্তন করতে আসিনি বরং আমার সময় স্রষ্টা কর্তৃক যা আদিষ্ট হবে তা যোগ করে ইঞ্জিল/বাইবেল-এর পূর্ণতা সাধন করতে এসেছি কিন্তু দুঃখের বিষয় রোমীয় শাসনামলে এ ধর্মগ্রন্থে তৎকালীন ধর্মযাজকদের দ্বারা এবং পরবর্তী সময়ে অনেক পরিবর্তন সাধন করা হয়। তাই রোমীয় বাইবেলকে ”ওল্ড টেষ্টামেন্ট’ এবং পরবর্তী সংস্করণকে “নিউ টেষ্টামেন্ট” বলা হয় যে কারণে ইঞ্জিল/বাইবেল কিতাব অসংখ্যবার নূতন করে লিখা হয় ফলে এর মূল প্রতিপাদ্যের অনেক জায়গায় নিজেদের স্বার্থে বিকৃতি ঘটানো হয়।             

==============================


No comments:

Post a Comment

What do you think?