Tuesday, September 15, 2020

গো-মাতা সম্পর্কিত ভারতীয় আইন, গো-মাংস রফতানী ও গরু চোরাচালান (প্রতিবেদন) Must read

 

গো-মাতা সম্পর্কিত ভারতীয় আইন, গো-মাংস রফতানী  গরু চোরাচালান।

(Must read)

- নাজমুল চৌধুরী


 ২০১৪ সালে ভারতীয় বিজেপি পার্টি অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদীর সরকার ক্ষমতায় আসে

২০১৭ সালের মে মাসে ভারত আইন করে গো-হত্যা বন্ধ করে দেয়। তা প্রথমে কার্যকরী হয় ভারতের উত্তর প্রদেশে তবে কিছু কিছু বিজেপি প্রভাবমুক্ত অঙ্গরাজ্যে গো-হত্যা আইন এখনো কার্যকর হয়নি।

২০২০ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী ভারতের মোট ১৩২ কোটি জনগণের মধ্যে হিন্দু ধর্মানুসারীর সংখ্যা ৬৯.%, মুসলিম ২৫.১১%, খ্রিস্টান .৩০%, বৌদ্ধ .৭০%, শিখ .৭২%, জৈন .৩৭%

২০১৮ সালের জুলাই মাসের এক সমীক্ষায় প্রধান ১০ টি গো-মাংস, মহিষের মাংস এবং ছাগলের মাংস রফতানীকারক প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়, তারমধ্যে ভারতের ) আল-কবীর, ) আললানা সনস্, ) আল-হামদ্, ) মিরহা এক্সপোর্টস, ) এম কে ওভারসীজ, ) এইচ এম এগ্রো ইন্ডাট্রিজ, ) আল-দোয়া ফুড প্রসেসিং, ) এমরস ফুডস্ প্রাঃ, ) এল এম ইন্ডাট্রিজ এবং ১০) রুস্তম ফুডস্ প্রাঃ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য

 নিম্নে প্রথম ৫টি গো-মাংস রফতানীকারক দেশের পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হল (সূত্রঃ FAS/USDA, ২০২০ সালের ০৮ই জুলাই, রব কুক কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন দ্রষ্টব্য)

২০১৮ সালে গো-মাংস রফতানীকারক দেশ হিসাবে ১ম সারির ৫টি দেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে:

) ব্রাজিল ২০ লক্ষ ২৫ হাজার মেট্রিক টন (মোট রপ্তানীর ১৯.৩৩%)

) ভারত ১৯ লক্ষ মে: টন  (মোট রপ্তানীর ১৮.১৪ %)

) অস্ট্রেলিয়া ১৬ লক্ষ ১০ হাজার (মোট রপ্তানীর ১৫.৩৭%)

) আমেরিকা ১৩ লক্ষ ৭২ হাজার (মোট রপ্তানীর ১৩.১০%)

) নিউজিল্যান্ড ৫লক্ষ ৬০ হাজার (মোট রপ্তানীর .৩৫%)

২০১৭ সালে বিজেপি সরকারের গো-হত্যা বিরোধী আইন প্রয়োগ সত্ত্বেও ভারত পৃথিবীর অন্যতম গো-মাংস রফতানীকারক দেশ হিসাবে ভারতের স্থান দ্বিতীয় এবং সৌদিআরবসহ মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ জুড়ে প্রায় বিশ লক্ষ মেট্রিক টন গো-মাংস রফতানী করে, তার সাথে মহিষ এবং ছাগলের মাংস রফতানীকারক দেশ হিসাবে ভারত বর্তমানে ১ম স্থান অধিকার করে আছে।

SANYA DHINGRA 26 March, 2019.

“India’s beef exports rise under Modi govt. despite Hindu vigilante campaign” 

New Delhi: India’s beef exports increased, albeit marginally, in the last years of the Narendra Modi government – contrary to claims by a prominent global rights group that said data showed a fall on the back of attacks by cow vigilantes and tougher laws on cow protection.Beef exports from India – the world’s largest beef exporter – refer to buffalo meat alone as the slaughter and export of cow meat is prohibited.

A Human Rights Watch (HRW) report, released in February, argued that vigilante attacks in India by cow protection groups. Data with the Agricultural and Processed Food Products Export Development Authority (APEDA), which is under the commerce ministry, however, shows that when the Modi government took over in 2014, beef exports rose substantially.

২০১৪ সালের পর হতে হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ এর রিপোর্ট অনুযায়ী বিগত তিন বছরে ভারত অভ্যন্তরে মোট ৪৪ জন মুসলিমকে গো-হত্যা এবং গো-মাংস ভক্ষণকারী অজুহাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ২০১৫ সালে উত্তর প্রদেশের ডাডরি জেলার বিশারা গ্রামে মোহাম্মদ আখলাক নামের জনৈক মুসলিম প্রথমে হত্যাযজ্ঞের শিকার হন। চলন্ত ট্রেন হতে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার মত ঘটনাসহ নির্যাতনের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। গুজরাট, আহমেদাবাদ এবং দিল্লীর দাঙ্গার কথা আর নাইবা বললাম। ভারতীয় সংবিধানে প্রত্যেক ধর্মের লোকদের সম অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তাহলে সাম্প্রতিককালে ভারত অভ্যন্তরে কেন সংখ্যাগুরুরা সংখ্যালঘুদের উপর চড়াও হচ্ছে গো-নিধন ভক্ষণ নিয়ে ? পৃথিবীর কোন দেশেই মানুষের খাদ্য নিয়ে কোনদিন কেউ কথা বলেনি। এটা মানুষের একান্তই ব্যক্তিগত এবং মৌলিক অধিকার রুচির বিষয়। ভারত যেখানে গরুসহ অন্যান্য গোবাদিপশুর মাংস রপ্তানীতে ১ম সারিতে আছে সেখানে ভারতীয় মুসলিমদের উপর গো-মাংস ভক্ষণ এবং জবাই নিষিদ্ধ কেন? কথার কথা, গো-হত্যা যদি নিষিদ্ধ হয় গাভী সংরক্ষণে মায়ের দুধের বিকল্প হিসাবে, তাহলে মহিয়ের দুধ কিংবা ছাগলের দুধ মায়ের দুধের বিকল্প হিসাবে ভারতে শত শত শিশুরা পান করে আসছে - পশুগুলো নিধন নিষিদ্ধ নয় কেন? যাই হোক, তাই ভারতীয় মুসলিমরা মনে করে ভারত শুধু মুসলিমদের খাদ্য অধিকারের উপর অন্যায়ভাবে অইনের প্রয়োগ ঘটাতে বিজেপি সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে এবং রফতানী বাড়াবার উদ্দেশ্যে দেশের ভেতর গরু জবাই আইনতঃ নিষিদ্ধ করেছে, কোন ধর্মীয় কারণে নয়।

হিন্দুধর্মের ঋগবেদের ১০ নং গ্রন্থের ৮৬ অনুচ্ছেদের ১৩ পরিচ্ছেদে, মনুশ্রুতির ৫ নং অধ্যায়ের  ৩০-৩১-৩৫ ও ৪২ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে তোমরা মাংস খাবে, মাংস উপকারী। প্রাচীনকালে হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা গরু বলি দিত এবং গরুর মাংস ভক্ষণও করত। গান্ধী রচিত “হিন্দু ধর্ম” গ্রন্থে বর্ণীত হয়েছে প্রাচীন ব্রাক্ষণরা গরুর মাংস ভক্ষণ করিত। মহাভারতের ৮৮ অনুশাসন পর্বে এবং মনুশ্রুতির ৩ নং অধ্যায়ের ২৬৬-২৭২ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে ঈশ্বর বিষ্ণু যুধিষ্ঠিরকে উপদেশ দিচ্ছেন তোমাদের পূর্বপুরুষদের প্রয়াত আত্মাকে সন্তুষ্ঠ করতে যদি শাকসব্জি খাদ্য হিসাবে বিতরণ কর তাহলে আত্মা ১ মাস, মাছ দিলে ২ মাস, হরিণের মাংস দিলে ৩ মাস, ভেড়ার মাংস দিলে ৪ মাস, পাঠার মাংস দিলে ৫ মাস, ছাগলের মাংস দিলে ৬ মাস, চিত্রা হরিণের মাংস দিলে ৭ মাস, কালো হরিণের মাংস দিলে ৮ মাস, গরুর মাংস দিলে ১২ মাস, ষাড়ের মাংস দিলে ১২ বছর এবং গন্ডারের লাল মাংস খাওয়ালে তাদের আত্মা অনন্তকাল সন্তুষ্ট থাকবে। এতে প্রমাণিত হয় গো-হত্যা বা গো-মাংস মহাপাপ নিয়ে বিজেপি সরকার বা যেসমস্ত ধর্মগুরুরা হিন্দু সমাজে যে নূতন ধর্মতত্ত্বের জন্ম দিয়েছে কিংবা গো-মূত্র এবং গোবর খেলে নানা ধরণের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা নিতান্তই কুসংস্কার এবং বিকৃত মতবাদ। 

ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা যায় গো-মূত্রে এবং গোবরে কৃমিসহ ক্ষতিকারক অনেক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি আছে যা মানবদেহে নানাধরণের জটিল রোগ সৃষ্টি করে থাকে।  

(হিন্দু ধর্মের ভাইবোনদেরকে বলছি যদি উপরোক্ত ধর্মগ্রন্থের উদ্বৃতি ভুল বলে মনে হয় তাহলে মনুশ্রুতি এবং মহাভারতের উদ্ধৃীত অংশগুলো ইচ্ছা করলে মিলিয়ে নিতে পারেন)

গরু চোরাচালানের অভিযোগে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা প্রসঙ্গে :

এদিকে বাংলাদেশ সীমান্তে পর্যন্ত দু’হাজারের উপরে মুসলিম নিরীহ গ্রামবাসীকে গরু চোরাচালানের অজুহাতে সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে। একথা অনস্বীকার্য যে চোরাচালানের সাথে উভয় দেশের চোরাচালানীরা যুক্ত রয়েছে। ভারতের চোরাচালানীরা বাংলাদেশ সীমান্তে গরু নিয়ে আসে এবং বাংলাদেশের চোরাচালানীদের হাতে গরুগুলো তুলে দেয়। বিএসএফ-এর ভাষ্য যদি তাই হয় তাহলে বিএসএফের গুলিতে উভয় দেশের চোরাচালানীরা নিহত হওয়ার কথা কিন্তু অদ্যাবধি ভারতীয় কোন চোরাচালানী বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত হয়েছে বলে শোনা যায়নি। এখন প্রশ্ন, বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের বিএসএফ কোন্ আইনের বলে এভাবে অহরহ হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের চোরাচালানীরা তাদের সীমান্তে তাদের দেশের পণ্যদ্রব্য চোরাচালানে লিপ্ত রয়েছে কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্ত দেশের কোন নাগরিক অদ্যাবধি একারণে হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়নি। ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে সীমান্ত বাজারের উদ্ভোধন করা হয়েছে। সমস্ত বাজারে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা নিজ দেশের পণ্যদ্রব্য বেচাকেনা করে। এভাবে যদি বৈধভাবে গরুও ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে বাংলাদেশের সীমান্তঘেষা নিরীহ গ্রামবাসীকে আন্তর্জাতিক আইন বহির্ভূত হত্যাযজ্ঞের শিকার হতে হতনা।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ভারতকে অনেককিছু দিয়েছে, যেমন দূর্গম পাহাড়ী প্রদেশসমূহের জন্য সহজ শর্তে ট্রানজিট সুবিধা, নৌ সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অনুমতি, ফেনী নদীর পানি ত্রিপুরায় ব্যবহারের সেচের সুবিধা ইত্যাদির পরিবর্তে তিস্তা, গঙ্গার পানিসহ অনেক অমীমাংসীত বিষয় অদ্যাবধি সুরাহা হয়নি। তাছাড়া বিভিন্ন ঋণচুক্তিসহ পারস্পরিক উন্নয়নমূলক চুক্তি সম্পাদন করা হলেও ভারতের সম্ভুকগতি, অনীহা ও চুক্তির বরখেলাপ এর প্রধান অন্তরায় হিসাবে বিবেচিত। বাংলাদেশকে চরম অবমূল্যায়নের জন্য বর্তমানে বাংলাদেশ ঋণ সুবিধা ও সকল মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীন এবং জাপানের দিকে ক্রমেই ঝুকছে।

ভারত হতে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানী হয় অথচ ভারত বাংলাদেশ হতে মাত্র ১. বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানী করে। তাছাড়া ভারতের প্রায় ১০ লক্ষ চাকুরীজীবি (বৈধ ও অবৈধ) বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় উচ্চপদে চাকুরী করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশে পাঠায়। অথচ বাংলাদেশের কোন চাকুরীজীবি সেদেশে চাকুরী করেনা। বর্তমানে বাংলাদেশ ভারতের ৮ম বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী দেশে রূপান্তরিত হয়েছে তাই ভারতকে বন্ধুত্ব সুরক্ষায় পুনর্বার বাংলাদেশের জনগণের পালস্ বুঝতে পারা এখন সময়ের দাবী

===============================================

No comments:

Post a Comment

What do you think?