Tuesday, June 25, 2019

অন্য গ্রহের ঠিকানায় (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

অন্য গ্রহের ঠিকানায়

-নাজমুল চৌধুরী

 

নেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত বিমানের টিকেট কনফার্ম করাতে পেরেছে কুতুব। মতিঝিল বিমান অফিস হতে বেরিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটার কাজ গুলিস্তানের মোড় হতে সেরে নেয়।

আগামীকাল ফ্লাইট সকাল এগারটায়। সবকিছু গুছিয়ে নিতে হবে সময় থাকতে। বিদেশ ভ্রমণ এই তার প্রথম নয়। দশবছর পূর্বে এমনি ওমরাহ ভিসা নিয়ে জেদ্দার পথে পাড়ি জমিয়েছিল সে। তখনকার সময়ই ছিল আলাদা। ওমরাহ ভিসা পেতে কোন সমস্যাই ছিল না, অথচ আজকাল ভিসা পেতে দুর্ভোগের অন্ত নেই। ঢাকাস্থ সৌদি `~Zvevm ওমরাহ ভিসা দিতে নানারূপ টালবাহানা করে। নুরহানাকে সে কথা দিয়ে এসেছিল দু-তিন মাসের ভেতরই নতুন ভিসা নিয়ে এসে পড়বে,সেখানে দেখতে দেখতে একবছর গড়িয়ে গেল। চেষ্টার ত্রুটি করেনি সে। একা নূরহানারই নয়, অপেক্ষার কষ্ট তারও কম হয়নি।

বায়তুল মোকাররমের শপিং মল হতে নুরহানার ফরমায়েস অনুযায়ী সুন্দর দুটো প্রিন্টের শাড়ি, P‚wo আনুষvঙ্গিক জিনিষ কিনে রিক্সায় চেপে বসে কুতুব। রহমান চাচার খিলগাঁওয়ের বাসায় আছে সে। বাবার ফুফাতো ভাই সমবয়সী রহমান চাচা সোনালী ব্যাংকের ক্যাশিয়ার। গত বছর সৌদি হতে ফিরে তার বাসায়ই উঠেছিল সে।

বাসায় পৌছে কলিং বেলে টিপতেই রহমান চাচা দরজা খুলতে খুলতে বলেন, এত দেরি কেনরে? কিছু হল? হাতের দিকে চেয়ে বলেন, কিছু একটা না হলে এত খরচই বা করবি কেন? তোর নামে সৌদি n‡Z একটি চিঠি এসেছে, খুব সম্ভবতঃ গতটার মতই আরবিতে লেখা হবে। নে খুলে দেখ..।

ওয়াদী সোলাইজার পোষ্ট অফিসের স্ট্যাম্প দেখে কুতুবের বুঝতে কষ্ট হয় না এটা নুরহানার পত্র। ছ'মাস পূর্বে নুরহানার আরেকটি পত্র পেয়েছিল, কিন্তু উত্তর দেয়া হয়নি। উত্তর দিতে গেলেই তাকে সেই ট্রান্সলেশন অফিসের স্মরণাপন্ন হতে হবে, নিজের কথাগুলোকে আরবিতে সাজিয়ে লিখাতে হবে,এতসব ঝামেলার সময় কই তার?

কি বিপাকেই না পড়তে হয়েছিল নুরহানার গত চিঠি অনুবাদ করাতে গিয়ে। শেখ জামালুদ্দিন অনুবাদ করে শুনিয়েছিলেন রসিয়ে রসিয়ে। একগাল হাসি যোগ করে বলেছিলেন, এটাতো দেখছি লাইলী মজনুর কেচ্ছা কাহিনী।

এ ধরনের রসিকতা ভাল লাগেনি কুতুবের। অপরিচিত লোকের ব্যক্তিগত চিঠি নিয়ে রসিকতা। কোন উত্তর দেয়নি কুতুব, শুধু একটি আফশোস নিয়ে ফিরে এসেছিল বাসায়। দীর্ঘ `kটি বছর বাজী রেখে নুরহানাকে যেভাবে বাংলা শিখিয়ে এসেছে, তেমনি লিখতে শেখালে আজ এভাবে অপ্রস্তুত হতে হত না। উপায় না দেখে আজও চৌধুরীপাড়ার সেই জামালুদ্দিন শেখের স্মরণাপন্ন হতে হj| নিশ্চqই নুরহানার কোন নুতন বায়না কিংবা অসুখ বিসুখ? শেখ জামালুদ্দিন চিঠিখানা পড়ে উদাসভাবে তাকিয়ে রইলেন কুতুবের মুখ পানে। কথা জুটছে না মুখে। আস্তে আস্তে বললেন,সব শেষ !!

কি বল্লেন! সব শেষ মানে?

নুরহানা নেই, নুরাইদা মৃত্যুশয্যায় .. না, না, এ হতে পারে না..। শেখ জামালুদ্দিন তাকে ভুল বলেছে.. হয়তো মসকরা করছে.. এ লোকটির চরিত্র কিছুটা এ ধর‡Yর। আর কাউকে দিয়ে চিঠিখানা অনুবাদ করাতে হবে। কথা না বাড়িয়ে অনুবাদ খরচ পরিশোধ করে তড়িগড়ি রিক্সায় চেপে ঝিকাতলার অনুবাদ অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় সে।

অনুবাদকের হাতে পঞ্চাশ টাকা গুজে দিয়ে বলে,একটু তাড়াতাড়ি অনুবাদ করে দিন প্লিজ।

অনুবাদক চিঠির নিচের খালি অংশে বাংলায় অনুবাদ করে এগিয়ে দিয়ে বললেন,ব্যাপারটি দুঃখজনক বিধায় হুবহু অনুবাদ করে দিলাম,পড়ে নিন। নুরহানার মা নুরাইদার লিখা.. স্বামী ও মেয়ের বিরহে আজ আমি মৃত্যুর প্রহর গুণছি। কোন দোষে আমার সাজানো সংসার জলে পুড়ে খাক হয়ে গেল কুতুব? আমার একমাত্র মেয়ে তোমার প্রতীক্ষায় ধুঁকে ধুঁকে অকালে ঝরে গেল। জানি না তুমি বেঁচে আছ কিনা? মেয়েরও একই প্রশ্ন ছিল,বেঁচে থাকলে কুতুব নিরব থাকতে পারতনা। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের প্রাক্কালে মেয়েটি তোমার কিছু আমানত রেখে যায়। তা তোমাকে ফিরিয়ে দেব বলে হয়তো আমি এখনো বেঁচে আছি। হাতেগুণা কয়েকটি দিন হয়তোবা পাব, যদি আমার এ চিঠি পাও তাহলে সত্বর তোমার আমানত বুঝে নিতে এসো।

ঝাপসা হয়ে আসে চিঠির লাইনগুলো। মাথাটা ঘুরছে। স্কুটারে ওঠে খিলগাঁওয়ের দিকে রওয়ানা দেয় কুতুব। এক মিথ্যে কুহেলিকার মত মনে হচ্ছে শহরের জনপদ ও মানুষগুলোকে। জীবনের সব গতি যেন অচল হয়ে গেছে। অচল হয়ে গেল তারই ভুলের কারণে। একটা চিঠি লিখে নুরহানাকে তার অবস্থার কথা জানালে সে তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যেত না। এ ভুলের মাশুল কিভাবে দেবে সে? ভাবতে পারেনি এভাবে একটি প্রাণ তারই জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণে গুণে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবে। গত দশ বছরের স্মৃতির পর্দা তার চোখের সামনে উন্মোচিত হয়ে উপহাস করতে থাকে তাকে নিদারুণভাবে।

পিতৃসম্পত্তির শেষ একবিঘা জমি ও বাড়িটি বিক্রী করে ওমরাহ ভিসা নিয়ে জেদ্দায় এসেছিল কুতুব। এয়ারপোর্ট কাউন্টার অতিক্রম করে বাইরের মুক্ত আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ নতুন জীবনের মুখামুখি হল। চারদিকে অচেনা লোক, অজানা পরিবেশ। আরবি ভাষার সাথে পরিচয় বলতে কুরআন তেলাওয়াত, আর পড়াশুনা বলতে কলেজের প্রথম বর্ষ পর্যন্ত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালেই তার জন্ম। অনেক তাবিজ কবজের বদৌলতে মাতগর্ভের সে প্রথম এবং শেষ সন্তান।

বাবার ছিল কাপড়ের ব্যবসা। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ভৈরববাজার থেকে দোকানের জন্য মালামাল আনতে গিয়ে পাকবাহিনীর নিষ্ঠুরতার শিকার হন। রাস্তার পাশে লাশ তিনদিনে ফুলেফেঁপে ওঠার পর গ্রামের অন্য এক ব্যবসায়ী রুস্তম মিয়া শনাক্ত করে যখন মায়ের কাছে জানালো, মা ও হার্টফেল করে বাবার অনুসারী হলেন।

খালার কাছে বড় হয় কুতুব। খালার আর্থিক অসচ্ছলতাহেতু ওর পড়ার খরচ চলে পৈত্রিক সম্পত্তি বন্ধক রেখে। ছাত্র হিসেবে সে মন্দ ছিল না। কিন্তু সহপাঠি সবুজে একদিন এক চমকপ্রদ খবর দিয়ে মাথাটা দিল ঘুরিয়ে।

জানিস কুতুব,আমাদের মটকা ফারুক সৌদিতে চলে গেছে। মদীনায় নাকি চাকরি করে। এইতো সেদিন তিনমাসের মাথায় বাপের কাছে ত্রিশ হাজার টাকা পাঠালো। পড়াশুনা করে কি হবে বল্‌? ফরুক বুদ্ধিমান, তাই কেটে পড়েছে। বেকারত্বের বোঝা তাকে বয়ে বেড়াতে হবে না। পড়াশুনা শেষ করে কপালে আমাদের মাস্টারি জুটবে কিনা সন্দেহ!

ঠিকইতো,ফারুক এ বয়সেই উপার্জনক্ষম,আর কুতুব কিনা পৈত্রিক সম্পত্তি একে একে বন্ধক রেখে চলেছে। বাকি রয়েছে পাকা বাড়িটা। বি.এ পাশ করতেই শেষ হয়ে যাবে শেষ সম্বলটুকু। এরপর কি হবে? সাতপাঁচ ভাবনা কুতুবের মাথাটাকে ঘোলাটে করে দেয়।

একসময় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে রাত দশটায় কদম আলী মেম্বারের বাড়িতে হাজির হয় কুতুব। দরজায় টকটক আওয়াজ শুনে কদম আলীর স্ত্রী চেচিয়ে বলে,এত রাইতে কেডা?

কদম আলী লেপের নিচে বউকে জড়িয়ে ধরে অতিরিক্ত উত্তাপ পাওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছিল। ফিস ফিস করে বলে,নিশ্চয়ই চেরাগ আলী। বলে দে,আমি বাড়ি নেই। বেটার কাজকাম নেই, অসময়ে হাজির হয় শুধু এককাপ চায়ের নেশায়।

দরজায় পুনরায় শব্দ শুনে কদম আলীর বউ চেঁচিয়ে বলে,চেরাগ ভাই নাহি?

চাচী আমি কুতুবগো, চাচার লগে জরুরি কথা আছে।

কুতুব? কোন্‌ কুতুবগো?

আরে চাচী,এই গেরামে দুই নম্বর কুতুব আছে নাকি? আমি জসিমুদ্দিনের পোলা কুতুবুদ্দিন। এবার চিন্‌ছেন?

কদম আলী আশ্বস্ত হয়ে বউকে বলে,ওহ,জসিমুদ্দিনের পোলা? আচ্ছা দেহি কি চায়?

গেঞ্জির ওপর একখানা চাদর জড়িয়ে এগিয়ে যায় কদম আলী দরজা লক্ষ্য করে।

কুতুবের অভিপ্রায় শুনে মনের কোণে সযত্নে পুষে রাখা ইচ্ছেটাকে দমন করে বলে, খুব ভালা কথা ভাতিজা। কি করবা এদেশে থাইক্যা। দেশ কি আর আগের মত আছে? লেহাপড়া জানা পোলাপানেরা চাকরির জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে। তা ভাতিজা, ট্যাহার কথা যে কইলা, এহনতো হাতে নাই। গেল হপ্তায় জমিন কিনতে গিয়া ...।

চাচা, আমার যে খুবই দরকার। যা পারেন দেন, বাড়ি রেজিষ্টারী কইরা বন্ধক দিমু। এক বছরের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে না পারলে বাড়িটি আপনের অইয়া যাইবো। কথার নড়চড় অইবো না।

কুতুব ভাবে ফারুক যদি তিনমাসে ত্রিশহাজার টাকা পাঠাতে পারে তাহলে সে পারবে না কেন? চিন্তামগ্ন কদম আলী আড়চোখে কুতুবকে পরখ করে। এ মোক্ষম সুযোগ সে হাতছাড়া করতে পারে না। গলায় দরদ ঢেলে বলে,ভাতিজা,তোমার বাপ আমার জানের দোস্ত আছিল একসময়। কেমনে তোমারে ফিরাইয়া দেই। দেহি, সেলিম মাতবরের কাছ থাইক্যা ধার আনতে পারি কিনা কিন্তু বাজান,এক বছরের মধ্যেই টেহা ফেরত দেওন লাগব। নইলে ভাতিজা ......।

বাড়ি আর সাথের জমিখানা আপনের অইয়া যাইবো। কদম আলীর অসমাপ্ত বাক্যটি সমাপ্ত করে কুতুব।

বুঝতেই পারছ ভাতিজা, কর্জের টেহা সময়মত ফেরত না দিলে মান থাকব?

ঠিক আছে চাচা। কাইল দলিল নিয়া আমু, তয় একটা কথা চাচা, আমার খালায় যেন কথাটা না জানে।

কদম আলী কাঁচাপাকা দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে কুতুবের গমন পথের দিকে চেয়ে থাকে। তার কত দিনের স্বপ্ন বড় রাস্তার মোড়ে পাকা বাড়ি থাকবে, বর্ষার কাঁদামাখা পা নিয়ে ঘরে ফিরতে হবে না। এও জানে সে, বিদেশের পোকা যখন একবার কুতুবের মগজে ঢুকেছে তখন আর নামবে চাইবেনা অতি সহজে। তাহলে ধরে নিতে পারে জসিমুদ্দিনের পাকা বাড়িটা তার হয়ে গেল। উপচে ওঠা খুশিতে একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস নেয় কদম আলী।

জেদ্দা বিমানবন্দরে অবতরণের মধ্য দিয়ে এক অচেনা জগতের সাথে পরিচয় ঘটে কুতুবের কিন্তু এখন যাবে কোথায় সে?

মনে পড়ে বন্ধু মটকা ফারুকের কথা। মদীনায় চাকরি করে সে। আসার সময় ওর ঠিকানাও নিয়ে এসেছে। এই অচেনা পরিবেশে ফারুককেই তার প্রথম দরকার। ফারুক হয়তো তার চাকরির একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারে। কিন্তু কিভাবে মদীনায় যাবে সে? পাসপোর্ট বগলদাবা করে এয়ারপোর্ট কাউন্টারের বাইরে দাঁড়িয়ে ভাবছিল কুতুব। বয়স্ক একজন সৌদি লোক এসে শুধায়, তেব্‌গা শুগুল? ফি শুগুল ইন্দি।

কি জবাব দেবে কুতুব। হা করে তাকিয়ে থাকে বৃদ্ধ লোকটির পানে। ভাষাগত সমস্যা বুঝতে পেরে লোকটি পাশে কর্মরত ইন্ডিয়ান ক্লিনারকে কাছে ডেকে ব্যাপারটি বুঝিয়ে দেয়।

ক্লিনার কুতুবকে বলে, উয়ো আদমী বল্‌রাহা, তোমহারা নকরী কা জরুরত হ্যায় তো উসকো পাস হ্যায়। হর মাহেনা সাতশ রিয়াল মিল যায়গা, আওর খানাপিনা বি ফ্রি। কেয়া খেয়াল হ্যায় তোমহারা?

হে আল্লাহ! তুমি এত মেহেরবান! আসা মাত্রই চাকরি! খাওয়া থাকা ফ্রি! কদমআলী মেম্বার ছয়মাসের উপর বাড়িটি ঠেকিয়ে রাখতে পারবে কি? স্বাগোতোক্তি করে কুতুব। এক সময় ইন্ডিয়ান ক্লিনারকে বলে দেয়, উছকো বলো, নকরী মঞ্জুর হ্যায়। হিন্দি ছবি দেখে দেখে মোটামুটি ভালই হিন্দি কথাবার্তা রপ্ত করেছে সে।

একটানা তিনঘন্টা মদীনার রাস্তা অতিক্রম করে ওয়াদী খাবিরের ছোট্ট একটি বাজারে ভাড়া করা ট্যাক্সি হতে লোকটির সাথে নেমে পড়ে কুতুব। ঈশারায় বসতে বলে লোকটি চোখের আড়াল হয়।

ঘন্টাখানেক পর একটি উট, খাবার ও মশক ভর্তি পানি নিয়ে হাজির হয় লোকটি। কুতুবের দিকে মুচকি হেসে কলা ও রুটি এগিয়ে দেয় এবং পরক্ষণেই উটের পিঠে কোশন লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর কুতুবকে ধরে উটের পিঠে উঠায়,নিজেও উঠে।

সন্ধ্যে হয়ে আসছে। উট এগিয়ে চলেছে মরুভূমির পথ ধরে অজানা গন্তব্যের পানে। কুতুবের কাছে এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। পূব-আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ ঝলমলিয়ে ওঠে। তারই D¾¡j আলোতে দৃষ্টিসীমানায় ধু ধু মরুভূমি, পাথুরে পাহাড়, আর দিগন্তবিস্তৃত বালিয়াড়ি নজরে পড়ে। সাগরের ঢেউয়ের মত মরুর বালুরাশি চিক চিক করছে। নিঝুম রাত। মধ্যে মধ্যে উটের পাল চোখে পড়ে। বীভৎস মুখ বানিয়ে দাঁত বের করে অতিকায় উটগুলো বোকার মত চেয়ে থাকে। 

গা ছমছম করে উঠে কুতুবের। যে লোকটি সামনে বসে আছে তারই বা সত্যিকারের পরিচয় কি? এখন যদি তার বিপদের বন্ধু কয়েকটি ডলার ছিনিয়ে নিয়ে মরুর বুকে তাকে পুঁতে রাখে তাহলে মানুষ কেন, কাক পক্ষীটিও টের পাবে না।

দুজন একসাথে চলছে, কিন্তু কারোর মুখে কোন কথা নেই। মধ্যে মধ্যে লোকটি রুটি ও খেজুর পিছনের দিকে ঠেলে দেয় wbi‡e। একটানা আড়াইঘন্টা পথ অতিক্রম করে লোকটি একসময় উটের লাগাম ঢিলে করে। উট বুঝতে পারে তাকে থামার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। লোকটি নিজে নেমে কুতুবকে নামতে সাহায্য করে। ইশারায় কুতুবকে বসতে বলে এগিয়ে যায় কিছুদূর।

এদিক সেদিক চেয়ে একসময় বসে পড়ে প্রকৃতির ডাকে। কুতুবও এ সুযোগ হাতছাড়া করে না। লোকটিকে অনুকরণ করে পানির প্রয়োজন বালি দিয়ে সারে। ফিরে এসে লোকটি এই প্রথম মুখ খোলে, মুশ বায়িদ, কামান সোয়াইয়া..। আন্দাজে কুতুব ধরে নেয়, লোকটি বুঝাতে চাচ্ছে, আর খুব একটা দূরে নয়। এইতো এসে পড়লাম।

উটের চলার গতি হিসাব করে আনুমানিক পঁচিশ মাইল পথ পেরিয়ে এসেছে বলে কুতুবের মনে হয়। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় লোকটিকে আলীবাবার মত লাগে। ছোটবেলায় আলীবাবার যে ছবি বইয়ে দেখেছিল লোকটি যেন হুবহু সেই আলীবাবা।

আকস্মিক লোকটি এগিয়ে এসে কুতুবকে জড়িয়ে ধরে দুগালে চুমু খেতে খেতে বলে, লাত খউফ ইয়া ওয়ালাদি (ভয় পেয়োনা বাছা)।

কুতুব ভড়কে যায়। ভয়ে দুপা পিছিয়ে যায়। এহেন ব্যবহারের অর্থ কি? কোন কূ-মতলব আছে নাকি লোকটির মনে? কাপড়ে ঘামের দুর্গন্ধে বমি আসার উপক্রম। পরনের কাপড় কোনদিন ধুয়েছে বলে মনে হয় না।

ঘন্টাখানেক চলার পর কুতুবের দৃষ্টি থেমে যায় অদূরের এক খেজুর বাগানে। পাতাগুলো ঝিরঝির করে কাঁপছে বাতাসের তালে তালে। মরুর বুকে এই প্রথমবারের মত সবুজের সমারোহ চোখে পড়ে তার। পাতার ফাঁকে ফাঁকে আলো-আঁধারের লুকোচুরি। এত সুন্দর জ্যোৎস্না সে দেশে কখনো দেখেনি। মনে হচ্ছে চাঁদটা যেন নেমে এসেছে কয়েকশো মাইল নিচে। খানিকক্ষণ চলার পর একটা পাথুরে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে উট থামা মাত্রই কুতুবের ধ্যান কেটে যায়। সারি সারি ছোটবড় পাথুরে পাহাড়গুলো মিছিল করে সামনে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।

উট হতে নেমে লোকটি কুতুবকে নামতে সাহায্য করে। তাকে ঈশারায় অনুসরণ করতে বলে লোকটি কোশন ও লাঠি হাতে এগিয়ে যায় পাহাড়ের উপত্যকা ঘেঁষে কিছুদূর। তারপর একসময় খেজুরপাতায় ঘেরা কবরের মত অপেক্ষাকৃত উচু জায়গায় এসে দাঁড়ায়। কি যেন বলে হাতের লাঠি দিয়ে খোঁচাতে থাকে। ডং ডং শব্দ হয়।

কুতুব বুঝতে পারে না লোকটির উদ্দেশ্য। তাহলে কি লোকটি পাতালপুরীর কোন দৈত্য-দানৰ? লোভ দেখিয়ে,মানুষের রূপ ধরে মানুষকে ফাঁদে ফেলে উদর পূর্তি করে? শেষ পর্যন্ত সেও এ ফাঁদে পা দিল? সতেরো বছরের তার এই নাদুস নুদুস দেহখানা আজ রাতে দৈত্যদানবের উৎসবে মুখরিত হবে? কলিজাটা ভয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে, মাথাটা ঝিম ঝিম করছে অনাহুত এক বিপদের আশঙ্কায়। হঠাৎ এক নারীকণ্ঠ ভেসে এলো, নায়াম, সবুর সোয়াইয়া..।

সবুর কথাটি বুঝতে অসুবিধা হয় না কুতুবের। পাতালপুরীর রাক্ষুসী স্বামীকে সবুরের মিনতি জানাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে খেজুরপাতায় ঘেরা কবরটি উপরের দিকে উঠে আসছে দেখে বাঁচাও বলে অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়ে কুতুব মাটিতে।

জ্ঞান ফিরতেই কুতুব দেখে পাশে বসে আছে আনুমানিক AvU bq বছরের সুশ্রী এক বালিকা ও কালো চাদরে আবৃতা এক মহিলা।

নুরহানা, হাত কাছা হালিব। নির্দেশ পেয়ে বালিকাটি একবাটি দুধ এনে দেয় মায়ের হাতে। জলপট্টি মাথা থেকে সরিয়ে মহিলা দুধের বাটি এগিয়ে নেন কুতুবের মুখের সামনে। খোদ হালিব, আশরব সোয়াইয়া ..ইনশাআল্লাহ বাদইন ছাহাহ্‌ কয়েস..।

কুতুব বুঝতে পারে,একবাটি দুধ পান করে শরীরে একটু শক্তি অর্জন করার জন্য মহিলাটি অনুরোধ করছে। মাথাটা একটু উঠিয়ে এক চুমুকে শেষ করে বিনা বাক্যব্যয়ে। মহিলা কপালে হাত দিয়ে জ্বরের মাত্রা পরীক্ষা করে। খাল্লি নউম' বলে তাকে আবার শুইয়ে দেয়।

কুতুব বুঝতে পারে তার শরীরে জ্বরের মাত্রা একটু বেশি। কিন্তু জ্বর কেন, আর কেমন করে সে এখানে এল? পাশে বসে আপনজনদের মত যারা তার সেবা করছে তারাই বা কারা?

ভাবনার অতলান্ত গভীরে কুতুব হারিয়ে যায়। আস্তে আস্তে মনে পড়ে গত রাতের কথা। কবর উঠে আসছে দেখে চিৎকার করেছিল। আর কিছু মনে নেই। তাহলে এই মহিলাটিকেই সে পাতালপুরীর রাক্ষুসী মনে করেছিল? লজ্জিত মুখ চাদর দিয়ে ঢাকে।

লোকটি ঘরে ঢুকে বলে, ক্যাফ আল ওয়ালাদ নুরাইদা? মহিলা পুনরায় বাটিতে দুধ ঢালতে ঢালতে বলে, তাইয়্যিব আবু আম্মারা, তাইয়্যিব। ব্যাস-শোয়াইয়া তাবান। জ্বরের ঘোরেও বুঝতে পারে কুতুব তার শারীরিক অবস্থার খবর নিতে এসেছে লোকটি।

তিনদিনের মাথায় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে কুতুব। নুরাইদা জিজ্ঞেস করে, এস্‌ ইস্‌মাক্‌ ইয়া ওয়ালাদি? কুতুব ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে দেখে পুনরায় মহিলাটি মেয়ের দিকে ইশারা করে বলে, হাজা বিন্‌তি, ইস্‌মাহা নুরহানা। নিজের বুকে হাত রেখে বলে, ওয়া আনা ইস্‌মী নুরাইদা। তারপর কুতুবের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশে বলে, এস্‌ ইস্‌মাক ?

এবার সে নিজের বুকে হাত দিয়ে বলে ওঠে, কুতুব ..।

কুতুব! ওয়াল্লাহি হেলু জেদ্দান...কুতুব বুঝতে পারে তার নাম নিয়ে প্রশংসা করা হচ্ছে। হবে না? কুতুব পীর আউলিয়াদের বলা হয়।

আনা এব্‌গা এলাব। নুরহানা বায়না ধরে মায়ের কাছে। কুতুবের আঙ্গুল ধরে টানতে থাকে বাহির পানে।

তাইয়্যিব,খোদ মায়া-কি কুতুব,কয়েস? †g‡qwUi K_vi ai‡Y কুতুব Av›`v‡R ey‡S †m বাইরে ‡Lj‡Z  যাওয়ার Rb¨ gv‡qi m¤§wZ PvB‡Q Ges KzZze‡K mv‡_ wb‡Z Pv‡”Q|

মায়ের কাছ থেকে অনুমতি পেয়ে এবার নুরহানা উচ্ছ্বসিত হয়ে কুতুবের হাত ধরে টানতে থাকে বাইরের দিকে। এঘর থেকে ওঘর ঘুরে ঘুরে দেখে কুতুব নুরহানার হাত ধরে। তিনদিন পর বিছানা ছেড়েছে। নরম খড়ের উপর ভারি ত্রিপল আর পশুর চামড়ার তৈরি বালিশের খোলের ভেতর নরম শুকনো তৃণলতা। মাটির নিচে গর্ত করা প্রশস্ত তিনটি রুমে খেজুর পাতার পার্টিশন। খেজুর গাছের তক্তার উপর খেজুর পাতার ছাউনী দিয়ে তৈরি ঘরের ছাদ। ছাদের একপাশে গোল করে কাটা কাঠের তৈরি নেট দিয়ে ঘেরাও দিয়ে ভেন্টিলেশনের এক অদ্ভুত ব্যবস্থা। ছোট্ট একটি পাকঘর। ধোঁয়া বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ছাদ হতে duvcv খেজুর গাছের কাণ্ড দিয়ে তৈরি জাহাজের চিমনির মত কয়েক হাত উপরে উঠে গেছে। ঘরের এককোণে পিঞ্জিরাবদ্ধ এক বাজ পাখি ডানা ঝাপটাচ্ছে। ব্লেডের মত ধারালো তার নখ ও ঠোট।

কুতুবকে দেখে রক্তচক্ষু মেলে হিংস্র হয়ে উঠে। প্রতিবাদ জানায় আজানা আগন্তকের। পিঞ্জিরামুক্ত হলে এতক্ষণে হয়তো কুতুবের দুচোখ উপড়ে নিত। এতবড় বাজপাখী কুতুব কখনো দেখেনি।

নুরহানা কুতুবকে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার জন্য টানতে থাকে। ছাদের সাথে যুক্ত তিনহাত লম্বা ও দুহাত চওড়া একটি টিনের দরজা। লাঠি দিয়ে ঠেলে উপরে উঠতে হয়। তাহলে এই দরজার উপরেই আবু আম্মারা সেদিন লাঠি দিয়ে খোঁচা দিচ্ছিল। আকস্মিক কবরের মত উঁচু জায়গাটি উপরের দিকে উঠে আসতে দেখে কুতুব মূর্ছা গিয়েছিল। হাসি পায় কুতুবের।

নুরহানার সাথে সিড়ি বেয়ে টিনের দরজা ঠেলে উপরে উঠে আসে কুতুব। খোলা আকাশের নিচে রোদের প্রখরতায় বিস্তৃত মরুর বালি চিক চিক করছে। উপর থেকে বুঝার সাধ্য নেই যে নিচে মনুষ্যবসতি আছে। নিশ্চয় এই পাহাড়ের উপত্যকা জুড়ে রয়েছে এরকম অনেক বেদুঈন পরিবার। প্রচণ্ড গরম এড়ানোর জন্যই হয়তো মাটির নিচে বসবাসের ব্যবস্থা। ঘরে না আছে ফ্রিজ, টিভি, এয়ারকুলার কিংবা অন্যান্য বিলাসসামগ্রী। সভ্য জগতের কোন নিদর্শন নেই। যবের তৈরি রুটি, পাকা খেজুর, মশলাবিহীন পোড়া মাংস,মধ্যে মধ্যে মাছ আর দুধই হচ্ছে তাদের নিত্যদিনের খাদ্য।

নুরহানা কুতুবকে নিয়ে চলে ওদের খেজুর বাগানে। যেতে যেতে কথা বলছে অনর্গল। কুতুব দুকান ভরে তাজ্জব হয়ে শুনে। আকারে ইঙ্গিতে কিছু কিছু বুঝে। উত্তর দেয় বাংলায়। নুরহানা কুতুবের মুখের পানে চেয়ে থাকে। বুঝতে চেষ্টা করে কুতুবের বাংলাকে। যে বয়সে খুব সহজে ভাষা রপ্ত করা যায় সে বয়সই কিশোরী নুরহানার। তাই কুতুবের বাংলাকে রপ্ত করতে খুব বেশিদিন সময় লাগেনি তার। দ্বিগুণ উৎসাহে কুতুব ওকে বাংলা শেখায় মাস্টারি কায়দায়। এমনকি তুই, তুমি ও আপনির ব্যবধানও শেখাতে ভুলে না। মধ্যে মধ্যে নুরহানা আরবিতে পিতামাতাকে কুতুবের বাংলার মানে বুঝিয়ে দেয় দুভাষীর মত। দুজনে একসাথে দিনের Av‡jvq মরুপ্রান্তরে ছাগল আর উট চড়ায়। খেজুর বাগানের K‚c হতে গাছের নিচে পানি ঢালে দুজন মিলে। একজন অন্যজনের গায়ে পানি ছিটিয়ে হেসে লুটোপুটি খায়। কুতুবের মনেই থাকে না দেশের কথা, কদম আলী মেম্বারের কথা।

বছর তিনেক পর একদিন খেজুর গাছে পানি দিতে গিয়ে নুরহানার পায়ে তাজা রক্ত দেখে কুতুব ভড়কে যায়। নুরহানা নিজেও বুঝতে পারে না কিসে তাকে কামড় দিল। ওকে টেনে টেনে কুতুব নিয়ে যায় নুরাইদার কাছে, বলে উম্মি ওকে বিচছু জাতীয় কিছু একটা কামড় দিয়েছে। নুরাইদাকে নুরহানার মত সে উম্মিই ডাকে। নুরাইদা মেয়ের মুখে কোন ভাবান্তর খুঁজে না পেয়ে কুতুবের দিকে ফিরে বলে, ঠিক আছে তুমি কাজে যাও, আমি দেখছি। নুরাইদা নুরহানাকে টেনে নিয়ে যায় ঘর অভ্যন্তরে।

এরপর থেকে নুরহানার এক অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করে কুতুব। বোরখা পরা নুরহানার মাঝে যেন আগের সেই চপলতা নেই। কথাবার্তায়, চলাফেরায় নুরহানা এক দেয়াল সৃষ্টি করে রাখে কুতুব ও তার মাঝে। কুতুব বুঝতে পারে না হঠাৎ নুরহানার এ পরিবর্তনের কারণ? অভিমানে নিজেকেও সে গুটিয়ে নেয়। একসাথে উট চড়াতে গেলেও সে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে নুরহানাকে। cÖ‡qvRbxq কথাবার্তার মধ্য দিয়েই দুজনার দিনের কাজ সমাপ্ত হয়।

বছরের পর বছর মরুর লু হাওয়ার উপর ভর করে সময়ও এগিয়ে চলে দাম্ভিক গতিতে। বেদুঈন পরিবারের ভালমন্দের সাথে যোগ হয় কুতুবের চাওয়া পাওয়া। 

মরুর লু হাওয়া কুতুব-নুরহানার কানে কানে ভাললাগার মন্ত্র শিখিয়ে যায় এক সময়, কিন্তু প্রকাশের ভাষা কারোর জানা নেই। ছাগল চরাতে গেলে নুরহানা একদিন কুতুবকে বলে -কবে তুমি দেশে যাবে কুতুব? বিয়ে করবেনা?

বিয়ের কথা বলতে তোর লজ্জা করেনা? বাংলা যেমন করে কিছুটা শিখেছিস তেমনি ইংরেজিটাও কিছুটা শিখে নে, তারপর দেখা যাবে।

কেন, আমাকে ইংরেজি শিখিয়ে তোমার বউয়ের মাস্টার বানাবে নাকি?

আমার বউয়ের মাস্টারি তোকে করতে হবে না, তোর স্বামীকে শিখাবি। স্বামীকে নিয়ে যখন দেশ-বিদেশে ঘুরবি, বড় বড় শহরে বেড়াতে যাবি তখন ইংরেজিটা কাজে লাগবে, বুঝলি ?

বড় বড় শহরে কি দেখার আছে বলতো? কয়েকটি উঁচু উচুঁ দালানকোঠা আর গাড়িঘোড়া এইতো ? জানো, ছোটবেলায় আবুইয়ার সাথে জেদ্দায় আমাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম দুদিনের জন্য। ওখানে মানুষগুলোর যেন প্রাণ নেই। শুধুই ব্যস্ততা। ওরা ঠাণ্ডা বাক্স হতে পানি পান করে। বদ্ধঘরে একটি বাক্স হতে বেরিয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাস ওরা সেবন করে। আমারতো দম বন্ধ হয়ে আসছিল।এটি একটি জীবন হল? দেশবিদেশ ঘুরে বেড়াবার দরকার নেই, তবে খুব ইচ্ছে হয় তোমার দেশটা ঘুরে আসি। আচ্ছা বলতো তোমাদের দেশের মেয়েরা কি ধরনের কাপড় পরতে ভালবাসে?

রং বেরঙ্গের শাড়ি আর হাতে কাচের চুড়ি। এর মধ্যে কি যে সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে তা তুই কি করে বুঝবি ?

তাহলে আমাকে দুটো শাড়ি আর কিছু কাঁচের চুড়ি আনিয়ে দাও না কাউকে দিয়ে। তোমার যখন শাড়িই পছন্দ তখন না হয় একবার পরে দেখাবো - নুরহানা বায়না ধরে।

আমার পছন্দের সাথে তোর কি সম্পর্ক? সুন্দর লাগলেই কি আর না লাগলেই বা কি?

আমাকে সুন্দর লাগুক এটা তুমি চাওনা ?

PvB‡evbv কেন? তবে বেদুঈন সমাজের মেয়েদের Kvc‡oB তোকে অনেক my›`i লাগে। G‡`‡ki †g‡qiv‡Zv kvwo c‡ibv|

ছাগল ভেড়া চরিয়ে দেখছি, ভেড়াই বনে গেছ। এতদিন তুমি আমাকে চেষ্টা করে বাংলা শিখিয়েছ,এখন হতে আমি তোমাকে GgbwKQz শেখাবো hvi তুমি কিছুই জাননা Ges eySbv  

কি, তুই আমাকে শিখাবি?

তা bq‡Zv কি? দেখনা আমাদের নাদিয়ার পিছনে ফাহিম কিভাবে ঘুরে বেড়ায়। কই ফাহিমতো নাদিয়াকে কখনো এড়িয়ে চলে না বরং নাদিয়াকে পাশে রেখে চলতে তার কত আনন্দ, অথচ......।

ফাহিম আর নাদিয়া ভেড়া ভেড়ি। ফাহিম বুঝে না বলে নাদিয়ার পিছনে ঘুর ঘুর করে কিন্তু আমাকে ওদের সাথে তুলনা করছিস কেন?

ফাহিম ঠিকই বুঝে তাইতো নাদিয়ার এত Avb›`,আর তুমি বুঝনা বলে আমার hZ দুঃখ। বাঁকা চোখে কুতুবের পানে চেয়ে নুরহানা কেটে পড়ে মায়ের উদ্দেশ্যে।

কুতুবের সাতাশ বছরের উত্তপ্ত যৌবন আকস্মিক এক ঝটকায় টগবগিয়ে উঠে। ধূসর মরুর দমকা হাওয়া তার হৃদয়ের কোষে কোষে এই প্রথমবারের মত প্রেমের মুকুল ছড়াতে থাকে। সত্যিই সে বোকা, নতুবা নুরহানার মনের কথা বুঝতে তার এত দেরি হল কেন?

ঘুমন্ত এক পৌরুষ যেন কথার কষাঘাতে আড়ষ্ট হয়ে তীব্র এক দহনে জ্বলতে জ্বলতে খুঁজতে থাকে প্রেয়সীর আশ্রয়।

নিজের পিতা-মাতাকে মনে নেই কুতুবের। স্নেহ বঞ্চিত কুতুব তাই  সহজেই আবু আম্মারা ও নুরাইদাকে পিতামাতার আসনে বসিয়ে এতিম হওয়ার কষ্ট ভুলতে পেরেছিল। এদিকে নুরাইদা ও আবু আম্মারা কুতুবকে পেয়ে যেন ভুলতে পেরেছিল পেটের ছেলে আম্মারার অকাল মৃত্যুর শোক।

G Kvi‡Y আবু আম্মারা নিজ হাতে কুতুবকে শিখিয়েছে, বাজপাখি দিয়ে কিভাবে মরুর খরগোশ আর ঘুঘু শিকার করতে হয়। কটিবন্ধে D‡b¥v³ তরবারি নিয়ে বেদুঈনদের আচার অনুষ্ঠানে কিভাবে নাচতে হয়।

ওয়াদী ‡mvjvBRv হতে cb‡iv মাইলের রাস্তা অতিক্রম করে ‡jvwnZ সাগর পাড়ের মাঝি মাল্লাদের কাছ হতে তাজা মাছ কিনে আনার জন্য আবু আম্মারা কুতুবকে নিয়ে প্রায়ই ILv‡b যেত। মাছের প্রতি কুতুবের দুর্বলতার কথা এ পরিবারের সবার জানাজানি হয়ে গেছে। একদিন মাছ নিয়ে ফেরার পথে আবু আম্মারা কুতুবকে প্রশ্ন করে - ওয়ালাদি, তেবগা জাওয়াজ বিনতি নুরহানা?

বাপের মুখে সরাসরি তার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব! উটের পিঠে বসে থাকা আবুআম্মারার কথার জবাব খুঁজে না পেয়ে হৃদয়ের সমস্ত শ্রদ্ধা যেন ঝরে পড়ে অঝর ধারায়। AveyAv¤§vivi wc‡Vi Kvco wfwR‡q w`‡q G cÖ‡kœi Reve †`q KzZze wbi‡e|

আবু আম্মারার পিঠে মুখ ঘষতে থাকে কুতুব। যেন পিতার কাছে পুত্রের স্বীকৃতির নিরব বহিঃপ্রকাশ। কান্নার নোনাজলে সিক্ত হয়ে পিছন ফিরে আবু আম্মারা কুতুবের গালে চুমু খায় cig Av`‡iনিজের ছেলে আম্মারা বেঁচে থাকলে nq‡Zv GZw`‡b কুতুবের সমবয়সী হত।

সাগর হতে নিয়ে আসা মাছগুলো পুড়ছিল কুতুব নুরহানা মিলে। মাছ দেখলে লোভ সামলাতে পারে না কুতুব। নিজেই লেগে যায় মজা করে খাওয়ার Av‡qvR‡b| নুরহানার দিকে চেয়ে বলে- ভারি সুন্দর লাগছে তোকে!

তাই নাকি? তোমার চোখ আছে জানতাম নাতো?

জানিস, আবুইয়া আজ আমাকে কি বললেন ?

কি ?

বলব না।

শুনতে আমার বয়েই গেছে।

না শুনলে না শুনবি, বিন নসীবের বোনতো শুনবে যেহেতু আবুইয়ার ইচ্ছা ওর সাথে আমার বিয়ে হোক।

তাই নাকি? খুব ভাল কথা। ওর একটা ট্যারা চোখ আছে, এটা দিয়ে খুব ভাল করে †Zvgv‡K দেখবে। হাসি সংবরণ করতে না পেরে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে নুরহানা।

ট্যারা হয়েছেতো কি হয়েছে? ওর যা গলা !

ঠিক আছে, ওর গলায় ধরে নাচগে যাও। নাচতেতো তুমি ভালই পার! কৃত্রিম অভিমানে নুরহানা অন্যদিকে মুখ ফেরায়। উঠতে গিয়ে আবার বসে পড়ে। বলে, আর তোমার হয়তো জানা নেই আবুইয়া বিন নসীবের সাথে আমার বিয়ে দিতে চান।

তুই চাস না ?

চfইলে চাইতেও পারি। সেটা তোমার জেনে লাভ কি ?

তবে দেরি করছিস কেন? এখনই ওর বাড়িতে গিয়ে কবুল বলে ফেল্‌..।

কবুল বলব তখনই যখন দেখব যে Avgv‡K বিয়ে করছে তার নামের প্রথম অক্ষর শুরু হয়েছে কু দিয়ে.....।

আর আবুইয়া আমার বিয়ে যার সাথে দিতে চান তার নাম শুরু হয়েছে নু দিয়ে...।

উত্তর প্রতিউত্তরের cÖwZ‡hvwMZv শেষে দুজনেই হেসে উঠে খিলখিলিয়ে।

বাতাসে ‡cvovমাছের গন্ধ ছড়াচ্ছে। নুরহানা একটি †QvÆ †cvov মাছ তুলে দেয় কুতুবের মুখে, কুতুব সে মাছটি পরম AvMÖ‡n মুখে পুরে নিতে গিয়ে নুরহানার একটি আঙ্গুল চেপে ধরে দাঁতের ফাঁকে।

নুরহানা আঙ্গুল ছাড়াতে গেলে কুতুব বলে, বিন নসীবের ‡ev‡bi ট্যারা চোখের কথা বলে আর কোনদিন খোটা দিবি ?

বলবনা কেন? সেদিন ছাগল চরাতে গিয়ে বিন নসীবের †ev‡bi দিকে ওমন করে তাকাচ্ছিলে কেন? কৃত্রিম অভিমানে নুরহানা মুখ ফেরায়।

কেন জানিস? সামান্য একটি খুঁত মানুষকে কিভাবে অসুন্দর বানিয়ে দিতে পারে সে জিনিসটি লক্ষ করছিলাম। একটু থেমে বলে - দুনিয়ার সব মেয়েদের †evanq এই একই দোষ। যাকে ভালবাসে তার সবকিছুতে তার একচেটিয়া অধিকার....। ঠিক আছে..... আর ZvKv‡evbv, কথা দিলাম,nj‡Zv?

চুলের মুঠো ধরে নুরহানার Awfgvbx মুখখানা উঠাতে গিয়ে কুতুব এই প্রথমবারের মত অনুভব করে শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এক উদ্দাম শিহরণ। কথা যেন জোর করে কে আটকে w`‡”Q গলার নিচে। দশবছর আগের সেই চপলা বালিকা খেলার সাথী নুরহানাকে আজ নুতন করে আবিষ্কার করে কুতুব। wbi‡e চুলে বিলি কাটতে কাটতে হৃদয়ের ধমনীতে অনুভব করে এক উষ্ণ মদিরতা। নুরহানা আবেশে তা †fvM করে wbi‡e

আনন্দের ফল্গুধারা চোখ ভাসিয়ে বৃষ্টির ফোঁটার মতই টপ টপ করে পড়তে থাকে নূরহানার। যৌবনের শুরুতে এক ভিনদেশীর ভাষা শিখেছে সে †ZvZvপাখির মত। কে বলবে আজ সে মরুচারী এক বেদুঈন কন্যা? তার ভাষা ও সংস্কৃতি ভিন্ন ধাঁচে গড়া। এক ভিনদেশী শিক্ষকের মমতা gvLv‡bv দুরূহ ভাষা সে রপ্ত করতে পেরেছে সমস্ত মেধা ও মনন মিশিয়ে অতি অল্প সময়ে। কিন্তু কিসে কি হয়ে গেল । আকস্মিক এক S‡ov হাওয়া এসে কুতুব নুরহানার ¯^cœ ভেঙ্গে তছনছ করে দিল।

হজ্জের মওসুমে খেজুর বিক্রির হিড়িক পড়ে যায় ওয়াদী ‡mvjvBRvi বেদুঈন পল্লীতে। আবু আম্মারা দুটো খেজুর বাগানের মালিক। হজ্জের মওসুমে মদীনা g‡bvqvivq খেজুর চালান দিয়ে কড়কড়ে রিয়াল ¸‡Y প্রতি বছর।

খেজুর পাড়ছিল কুতুব। নিচে আবু আম্মারা কাঁধি কাঁধি পাকা খেজুর R‡ov করছিল। নুরহানা নুরাইদা দুরে মেষ চরাচ্ছিল। আবু আম্মারার আকস্মিক হৃদয় বিদারক চিৎকার শুনে কুতুব খেজুরগাছ হতে নিচে নেমে দেখে তার বুক ভেদ করে আটকে আছে একটি তীরের ফলা। তীর খুলে প্লাবিত রক্তের ধারা বন্ধ করার প্রয়াসে নিজের জামা চেপে ধরে কুতুব ক্ষতস্থানে। চিৎকার করে সাহায্যের আবেদন জানায়। চিৎকার শুনে বেদুঈন পল্লীর অনেকেই ছুটে আসে। বিন নসীবও সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে ছুটে আসে। বাকরুদ্ধ কুতুবের শার্টের কলার ধরে হেঁচকা টানে কাছে নিয়ে প্রচণ্ড ঘুষি বসিয়ে দেয় চোয়ালে। আরবিতে বলে উঠে, কুত্তা, ভেবেছিস ey‡ovUv‡K মেরে মাটিতে পুতে সম্পত্তি দখল করে নিবি, তাই না ?

দুÕহাতে ও জামায় রক্তমাখা, বাকহারা কুতুবকে ধরে বিন নসীবের দল থানার পথে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। পথিমধ্যে নুরহানা নুরাইদার সাথে দেখা হলে বিন নসীব বলে, দ্রুত †Zvgv‡`i খেজুর বাগানে যাও। ওখানে গেলেই ঘটনা জানতে পারবে। আমি পশুটাকে থানায় দিয়ে আসি। কুতুবকে wKQz বলার অবকাশ না দিয়েই টেনে নিয়ে চলে ওরা।

ঘন ঘন জ্ঞান nviv‡bvi বিপর্যয় কাটিয়ে cb‡ivদিনের মাথায় সুস্থ হয়ে উঠে gv I ‡g‡q

বিন নসীবের মুখে পিতার মর্মান্তিক খুনের কাহিনী শুনে বিস্ময়ে বিমুঢ়| আত্মীয়ের মত বিন নসীব ওদের পাশে দাঁড়ায়। নুরাইদাকে বলে - দুধকলা দিয়ে সাপ পুষেছিলে চাচী। বেটা আজনবী ভেবেছিল চাচাকে মেরে Rgv‡bv সব wiqvj লুটে দেশে পালাবে। আমি যদি সাথে সাথে এসে না পড়তাম তাহলে কি যে হত তা আল্লাহ-ই জানেন। পথের KuvUv সরাতে গিয়ে নিশ্চয়ই সে ‡Zvgv‡`i‡KI G‡K G‡K খুন করত। একটা খুনিকে কিভাবে †Zvgiv পরিবারের একজন বানিয়ে পুষে আসছ এতদিন ধরে তা ভেবে আশ্চর্য হই।

ঘৃণায় নুরহানা চোখ বুজে। এমন একটা মানুষকে সে হৃদয়ের মনিকোঠায় স্থান দিয়েছিল! UvKvB যদি চেয়েছিল তাহলে বল্লেই পারত। আবুইয়া যাকে এত ভালবেসেছিলেন তার কাছেই তাকে খুন হতে হল- ছি, ছি, ছি.....!

আবু আম্মারার মৃত্যুর পর বিন নসীব নুরাইদা পরিবারের ভালমন্দ দেখাশুনার ভার নিয়েছে। my›`ix b~invbv‡K Zvi Lye cQ›`| সময়ে অসময়ে নুরহানার কাছে এসে খাতির জমাতে চেষ্টা করে। মাসখানেক পর একদিন পুলিশের †jvKRb আকস্মিক এসে বিন নসীব ও তার দুজন বন্ধুকে সন্দেহক্রমে ধরে নিয়ে যাওয়াতে নুরহানার মনে বিন নসীবের প্রতি সন্দেহ ঘনীভূত হতে থাকে।

দীর্ঘ নয় বছর কুতুবকে আবুইয়ার কাছে তার gvB‡b চাইতে দেখেনি। নুরহানাকে বলত মাসিক বেতন নিয়ে আবুইয়ার স্নেহকে সে খাটো করতে পারবে না। আবুইয়া জোর করলে ejZ যখন দরকার পড়বে তখন চেয়ে নেবে। সেই কুতুব কেমন করে আবুইয়াকে সম্পত্তির †jv‡f খুন করতে পারে ? থানার পদস্থ অফিসার মা মেয়ের জবানবন্দী নিতে এলে নুরহানা GKB সাক্ষ্য দিল। বিন নসীবকেই বা সন্দেহ করে কিভাবে? কুতুব আবুইয়ার সাথে খেজুর বাগানে ছিল, বিন নসীব wPrKvi শুনে পাড়াপড়শি নিয়ে ছুটে আসে। তাহলে কে এমন নির্মমভাবে তার পিতাকে হত্যা করতে পারল?

প্রায় ছÕমাস পর ওয়াদী ‡mvjvBRvi বেদুঈন পল্লীতে সরকারি পক্ষ হতে XvK‡Wvj †cUv‡bv হল। শুক্রবার জুমার নামাজান্তে আবুআম্মারার খুনের রায় Kvh©Kix হবে। কাজীর রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে খুনিকে প্রকাশ্যে কতল করা হবে। কাজীর হুকুম,wbKU¯’ ¯^Rb wnmv‡e নুরহানা ও নুরাইদাকে অবশ্যই যেতে হবে স্বচক্ষে বিচার দেখতে।

c‡ii শুক্রবার জুমার নামাজান্তে ওয়াদী সুলাইজার বেদুঈন পল্লীর আবাল বৃদ্ধ বণিতা দীর্ঘ তিন মাইল পথ অতিক্রম করে এসেছে থানার বিস্তৃত প্রাঙ্গণে সুষ্ঠু বিচার দেখতে। থানা প্রাঙ্গণ †jv‡K †jvKviY¨| সবার মুখে একই কথা-আবু আম্মারা দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষেছে, ফল যা হবার তাই হয়েছে।

নুরাইদা ও নুরহানার সামনে কাজী মাইকে পুলিশ wi‡cvU© ও সাক্ষ্য সাবুদ অনুযায়ী বিচারের রায় †NvlYv করলেন। কুতুব ও বিন্ নসীবকে †Mvj চত্বরে নিয়ে আসা হল। বিন নসীবের চোখ বাঁধা। কাজীর রায় শুনে সবাই হতভম্ভ। বিচারের রায়ের সারাংশ Rvbv‡bv হল- নুরহানাকে পাবার ‡jv‡f বিন নসীব এ জঘন্য পথ বেছে নিয়েছিল। iv‡qi GKch©v‡q Rvbv‡bv nj দশ বছর বে-আইনীভাবে থাকার অপরাধে একমাসের জেল শেষে কুতুবকে স্বদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

প্রচুর করতালির মাধ্যমে জল্লাদ তার কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করল।

নুরহানা কুতুবের দিকে সজল চোখে এগিয়ে এসে বলে †Zvgv‡K g~û‡Z© Avgvi বড়ই দরকার কুতুব। তুমি চলে গেলে কি নিয়ে বেঁচে থাকব বল?

শক্ত nI নুরহানা। পিতৃসম আবুইয়ার স্নেহের ঋণ কিভাবে আমি ‡kva Ki‡ev Rvwbbv? Rb¥ †bqvi ci পিতাকে ¯^P‡ÿ দেখিনি। সে অভাব আমার পূরণ হয়েছিল, কিন্তু কিসে কি হয়ে গেল! ভাগ্যটা আমার এত খারাপ কেন বলতে পারিস? ডুকরে কেঁদে উঠে কুতুব।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নুরহানাকে বলে, চিন্তা করিস না, আমি আবার ফিরে আসব নতুন ভিসা নিয়ে। †Zv‡K আর হারাতে চাই না- আবুইয়ার ইচ্ছা আমি অপূর্ণ রাখব না। জীবন দিয়ে তা রক্ষা করব। কয়েকটা দিন সবুর কর নুরহানা, হাতে গুণা কয়েকটা দিন মাত্র, কি পারবিনা? Igivn wfmv wb‡q Avm‡ev| c‡i †Zv‡`i †LRyi evMv‡bi iÿYv‡eÿ‡Yi KvR †`wL‡q G‡`‡k ¯’vqx n‡q AveyBqvi †kl B”Qv c~iY Kie|

আমি সে অপেক্ষায় থাকব কুতুব। cÖ‡qvR‡b সারা জীবন ‡Zvgvi ধ্যানে কাটিয়ে দেব, শুধু একটি Aby‡iva,আমাকে wPwV wj‡L জানাবে কি করছ, কোথায় আছ, কেমন আছ, কবে আসছ? নতুবা ফিরে এসে আমাকে পাবেনা কুতুব। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে দুহাতে মুখ ঢাকে নুরহানা। নুরাইদা GKUz `y‡i চোখের জল সামলাতে ব্যস্ত। কুতুব-নুরহানার কথার তাৎপর্য ü`q½g Ki‡Z থাকে wbi‡e|

নুরহানা ‡eviLvi ভেতর হতে কাপড়ের একটি বাণ্ডিল বের করে কুতুবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, আবুইয়া এ cyUwjUv  †Zvgvi জন্য রেখে গেছেন।

এটা কি?

Avgv‡`i আশা পূরণের জন্য evowZ wiqvj¸‡jv কোন এতিমখানায় `vb করে দেবে।

e‡jwQwjbv Avgvi gv÷vi nwe, †Zvi Kv‡Q Avgv‡K fvjevmv wkL‡Z n‡ebv? কুতুবের চোখের জল euva মানে না। অবিরল ধারায় ‡Pv‡Li Aeva¨ AkÖæ গড়িয়ে c‡o nvwi‡q hvq giæi evjyP‡i |

nu¨v wkLve ˆe Kx| GK ‡e`yCb Kb¨v †Zvgvi Kv‡Q `xN© `keQi evsjv wk‡L‡Q, †Zvgvi mvwb¨‡a¨ b~Zb K‡i KZwKQz Rvb‡Z †c‡i‡Q,Gi cvwikÖwgK w`‡Z n‡ebv ? K_v w`w”Q wbLv` fvjevmv w`‡q ‡Zvgvi Rxeb‡K fwi‡q †`e, cÖgvY K‡i †`e †e`yCb Kb¨v Zvi mewKQz GK Avbvox wkÿK‡K DRvi K‡i w`‡Z Rv‡b| Ggwb‡ZB Avwg Avagiv n‡q AvwQ, Avev‡iv Aby‡iva iBj wdi‡Z †`ix K‡i Avgv‡K wPiZ‡i wbt‡k^l n‡Z w`Ibv KzZze| b~invbv gvwU‡Z e‡m gyL ‡X‡K Kuv`‡Z _v‡K AeyS wkïi gZ|

একটা কাগজে রহমান চাচার ঠিকানা লিখে দিয়ে Kvu‡`v Kuv‡`v ¯^‡i বলে- কাউকে দিয়ে চিঠি লিখিয়ে খবর জানাতে ভুলিস না কিন্তু।

নুরহানাকে তিন মাসের সময় দিয়ে একমাস জেল খেটে কুতুব ফিরে এসেছিল দেশে। সেই অবধি রহমান চাচার বাসায় থেকে ভিসার জন্য ধর্ণা দিয়ে আসছিল। সে ভিসা †hvMvo করতে গিয়ে তিনমাসের স্থলে এক বছর পার হয়ে গেল। `xN© cÖZxÿvi ci ভিসা ‡hvMvo হল বটে কিন্তু নুরহানা এভাবে তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল?

স্কুটারের ভাড়া মিটিয়ে টলতে টলতে বাসায় ফিরে কুতুব।

কি-রে, কি হয়েছে †Zvi? চোখমুখের অবস্থা এমন কেন? শরীর খারাপ নাকি? কুতুবের দিকে প্রশ্ন রাখেন রহমান চাচা।

আমাকে একটু একা থাকতে দাও চাচা। মাথা ধরেছে। পরে কথা হবে। নিজের রুমে ঢুকে দরজায় খিল দেয় কুতুব।

Kvj‡Zv চলেই যাবি। তুই যাবার পর কিন্তু আমার একটা ব্যবস্থা করতেই হবে| KzZz‡ei gy‡Li w`‡K †P‡q K_vi †LB nvwi‡q ‡d‡jb ingvb PvPv

প্লিজ চাচা, দোহাই ‡Zvgvi, পরে কথা হবে, দরজার ওপাশ হতে কুতুব উত্তর দেয়।

রাত গভীর হয়। চাচা অনেক চেষ্টা করেও কুতুবকে কিছু খাওয়াতে পারেনি। একই উত্তর, ক্ষিধা নেই।

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে। Avev‡iv nq‡Zv নামবে অঝর ধারায়। বাইরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সুপ্তির ক্রোড়ে ঢলে পড়ে নিদ্রাতুর পৃথিবী।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করে কুতুব, কি চেয়েছিলে তুমি, আর কি পেয়েছ ? ভাগ্যের লিখন খণ্ডাতে পেরেছ?

আর পারছে না কুতুব। একসময় চিঠির প্যাড টেনে খস খস করে লিখতে শুরু করে........

ingvb PvPv,

জন্ম হতে ভাগ্যবিড়ম্বিত এক এতিম অবশেষে বেঁচে থাকার এক অবলম্বন খুঁজে পেয়েছিল, কিন্তু নিয়তির তাও বুঝি সহ্য হল না। তুমি সৌদিতে যেতে চেয়েছিলে, তাই wfmv †hvMvo K‡i বিমানের টিকেট †Zvgvi bv‡g cvjwU‡q ‡Zvgvi Avkv পূরণ Ki‡e| সাথে wekলক্ষ টাকার একটি চেক, ‡ek wKQz bM` I সৌদি হতে আসা চিঠিখানা রেখে গেলাম। †PKwU fvw½‡q নুরহানা †g‡gvwi‡qj নামে একটি এতিমখানা খুলবে। পৃথিবী নামক ‡Zvgv‡`i G সুন্দর গ্রহটি আমাকে কখনও Av‡jvi পথ দেখায়নি Avi ZvB‡Zv ছুটে চললাম অন্য গ্রহের ঠিকানায়

 

আমাকে খুঁজতে চেষ্টা কর না, খুঁজলেও পাবে না ...........!

====================

No comments:

Post a Comment

What do you think?